২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:২৯
Chelsea head coach Maurizio Sarri lifts the trophy after winning the Europa League Final soccer match between Arsenal and Chelsea at the Olympic stadium in Baku, Azerbaijan, Wednesday, May 29, 2019. Chelsea won 4-1. (AP Photo/Luca Bruno)

আর্সেনালের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে শিরোপা জিতল চেলসি

খেলা ডেস্ক

মাউরিসিও সারি আবেগ লুকাতে জানেন না। চেষ্টাও করেন না। ফাইনালের আগেরদিন ও আগে ভাগে অনুশীলন ছেড়েছিলেন খেলোয়াড়দের ওপর রাগ করে। কারাবাও কাপের ফাইনালের কেপার সঙ্গে তার তর্ক তো কুখ্যাত ইতিহাস হয়ে গেছে। সারি যত যাই করুন, এরপর আর চেলসি সমর্থকেরা তার ওপর রাগ পুষে রাখবেন না। ইউরোপা লিগের ফাইনাল একপেশে বানিয়ে আর্সেনালকে ৪-১ গোলে হারিয়ে, ৬ বছর পর আবার শিরোপা ঘরে তুলেছে চেলসি। সেটা সারির ক্যারিয়ারেরও প্রথম বড় শিরোপা।

ফাইনালটা অবশ্য জেতা দরকার ছিল বেশি আর্সেনালের। উনাই এমেরি টানা তিন মৌসুম এই প্রতিযোগিতা শেষ করেছেন শিরোপা জিতে। কিন্তু কাজের সময়ই খেই হারালেন তিনি। আর্সেনালকে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে হলে জিততে হত ইউরোপা লিগ। তাই পরের মৌসুমেও ইউরোপের সবচেয়ে বড় ক্লাব টুর্নামেন্টে দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে আর্সেনালকে।

বাকুর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যাচটা এতোখানি একপেশে হবে সেটা বোঝা যায়নি প্রথমার্ধ শেষেও। দুই দল শুরু করেছিল ধীর স্থিরভাবেই। তবে আস্তে আস্তে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে আর্সেনাল। প্রথম সুযোগও পেয়েছিল গানাররাই। মেইটলান্ড নাইলসের ক্রস ফিস্ট করে সরিয়ে দিয়েছিলেন কেপা, পিয়ের এমেরিক অবামেয়াং ভালো জায়গায় এরপর পেয়েছিলেন বল। কিন্তু সেখান থেকে মেরেছেন বাইরে দিয়ে। প্রথমার্ধে এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর তৈরি করা হয়নি আর্সেনালের। গ্রানিত শাকা একবার ডিবক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে শট করেছিলেন, সেটাও গেছে বাইরে দিয়ে।

ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নামা পিটার চেক সাবেক দলের বিপক্ষে এতোক্ষণ অবসর সময়ই পার করছিলেন। কিন্তু বিরতির আগে তাকে দুইবার বিপদে ফেলে চেলসি জানিয়ে রেখেছিল, তাদের জন্য জয়টা আর্সেনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ না হলেও প্রেরণার অভাব নেই তাদের। প্রথমে চেক ঠেকালেন এমারসনের শট, এরপর অলিভিয়ের জিরুকে গোলবঞ্চিত করলেন আরও দারুণ এক সেভে।

বাকুতে ফাইনাল হওয়া নিয়ে এমনিতেই সমালোচনা ছিল। তারওপর এমন ফাইনাল ম্যাচেও গ্যালারির ফাঁকা সিট দৃষ্টিকটু লাগছিল শুরু থেকেই। সেটা যেন ছাড়িয়ে যেন ম্যাড়মেড়ে ফুটবলময় প্রথমার্ধটাও।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে বদলে গেল সবকিছি, বদলে গেল আসলে চেলসি। ২০ মিনিটের এক ঝড়ে ম্যাচটা এরপর নিজেদের করে নিল চেলসি। আর দর্শকের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে সেটা দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকল না আর্সেনালের। এতোদিন ইউরোপা লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটা লুকা ইয়োভিচের সঙ্গে ভাগাভাগি করে আসছিলেন জিরু। ফাইনালে সেটা নিজের করে নিলেন। ৪৯ মিনিটে আর্সেনালের বুকে প্রথম ছুরিটা বসিয়েছেন সাবেক আর্সেনাল খেলোয়াড়ই। এমারসন বাম দিক থেকে বাঁকানো ক্রস করেছিলেন, জিরু ডিবক্সের ভেতর শুরু মাথা ছুঁয়েছেন, সেটাই ডান পাশের বটম কর্নারে গিয়ে জড়ালে এগিয়ে যায় চেলসি। গতবছর দলবদলের সময় জিরু নিজেও আর্সেনাল ছাড়তে চাননি। একরকম বাধ্য হয়েই চেলসিতে গিয়েছিলেন। ফাইনাল হলেও, প্রিয় ক্লাবের বিপখে যতখানি সম্ভব উদযাপনও কমিয়ে আনলেন তিনি।

কিন্তু চেলসির উদযাপন আর থামলো না এরপর। ৬০ মিনিটে এডেন হ্যাজার্ডের স্কয়ার থেকে ডিবক্সের ভেতর বাম পায়ের শটে এবার আরেক পোস্টে বল জড়ালেন পেদ্রো রদ্রিগেজ। এই নিয়ে মোট ৮ ফাইনালে গোল করলেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড।

২-০ গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর আর্সেনালের সামনে আর কোনো উপায়ও ছিল। আক্রমণাত্মকই খেলতে হত তাদের। কিন্তু ৫ মিনিটে পর বিপদ আরও বাড়ালেন নাইলস। প্রথমার্ধে ভালো খেলেছেন, কিন্তু গোল হজমের পর বাকি সতীরথদের মতো তিনিও রং হারালেন। জিরুকে ডিবক্সের ভেতর ফাউল করে চেলসিকে ম্যাচটা তখনই জিতিয়ে দিলেন নাইলস। সাবেক সতীর্থ চেককে ভুল দিকে পাঠিয়ে স্পট কিক থেকে গোল করলেন এডেন হ্যাজার্ড।

তিন গোলে পিছিয়ে পড়ার অবিশ্বাস্য এক গোল করে বদলি অ্যালেক্স ইওবি আরও অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন আর্সেনালকে। কিন্তু ইওবির ভলিতে করা ওই গোল আর সান্ত্বনাও যোগাতে পারেনি এমেরির দলকে। ৭২ মিনিটে জিরুর পাস থেকে সহজ ফিনিশে গোল করে হ্যাজার্ড আবার ব্যবধানটা বাড়িয়ে নেন।

চেলসির জার্সিতে এটা হতে পারে হ্যাজার্ডেরও শেষ ম্যাচ। বেলজিয়ানের ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন করে। সেটা যদি হয়েই থাকে চেলসি থেকে বিদায়টা খুব একটা মন্দ হলো না হ্যাজার্ডের!

আর ভালো মন্দ মিলিয়ে চলা চেলসির মৌসুমটা শেষ হলো আড়ম্বরে। ইউরোপা লিগে ১৫ ম্যাচের কোনোটিতেই হারেনি সারির দল। ২০০৭-০৮ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর এই প্রথম কোনো দল ইউরোপিয়ান শিরোপা জিতল অপরাজিত থেকে।

প্রকাশ :মে ৩০, ২০১৯ ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ