খেলা ডেস্ক
ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথকে সম্মান জানাতে, না তার অতিথি হয়ে বাকিংহ্যাম প্যালেসে বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ১০ দলের অধিনায়ক ও আইসিসির কর্মকর্তারা? দুটোই হতে পারে। যে রানী একসময় বিশ্ব শাসন করতেন, তার দাপট ও ক্ষমতার কথা কার না জানা! পরির্বতন হয়েছে সময়ের। এখন সেই সময়কাল নেই। কিন্তু রানীকে এখনো শীর্ষস্থানেই রেখেছে ইংরেজরা। সেই ইংল্যান্ডেই আজ শুরু ১০ দলের অংশগ্রহণে বিশ্বকাপ। কাল রাতে ১০ দলের ক্যাপ্টেন সাক্ষাৎ করেন রানীর সঙ্গে। হয়তো তার পরামর্শ বা বাণী শুনেছেন। আজ লন্ডনের ওভালে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে সূচনা প্রায় দেড় মাসব্যাপী আইসিসির ১২তম এ মেগা আসরের। ১০ দল একে অপরের বিপক্ষে খেলবেন রবিন লিগে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা চার দলের মধ্যে সেমিফাইনাল। এরপর ফাইনাল।
সেটি অনেক পরের কথা। এর মধ্যে ঘটবে অনেক কিছু। কেউ হাসবে। কেউ মন খারাপ করবে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স না করতে পেরে। সে অনেক কিছু। রেকর্ড হবে। ব্যাট-বলে ঝড় উঠবে। গোটা ক্রিকেট বিশ্ব মাতিয়ে তুলবেন ক্রিকেটাররা। এক দল তো শিরোপা পাবে। সে কে? সে হিসাবও এরই মধ্যে করা হচ্ছে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। বিশ্লেষকদের কাজই এমন। এভাবেই তারা দর্শকদের বিশ্বকাপের মেগা আসরে ধরে রাখেন। দর্শকেরাও তাদের বিশ্লেষণগুলো নিয়ে আলোচনায় মত্ত হবেন, যা শুরু হয়ে গেছে এবং চলবে।
এ দিকে গত রাতেই এ মেগা আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়ে গেছে। রানীর সাথে সাক্ষাৎ করে ক্যাপ্টেনরা অংশ নেন বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় অনুষ্ঠিত হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাকিংহ্যাম প্যালেসের পাশেই ‘দ্য মল’ এ। এক ঘণ্টা ২০ মিনিটব্যাপীর ওই প্রোগ্রাম। আইসিসি ও আয়োজক ইংল্যান্ড মিলেই এ আয়োজন। সাধারণত বিশ্বসেরা ক্রীড়া ইভেন্টগুলোর উদ্বোধনী হয় স্বাগতিক দেশের ঐতিহাসিক কোনো স্টেডিয়ামে। তবে সেই চিরায়ত রীতি ভেঙে এবার নতুন আঙ্গিকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন এবারের আয়োজক ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের। যুগ যুগ ধরে ব্রিটিশ ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে আসছে যে স্থান, সে বিখ্যাত দ্য মলেই পর্দা উঠেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের। স্থানটি যে অপরিচিত তা কিন্তু নয়। ব্রিটিশদের বেশ গর্বেরও স্থান ওই মল। এখানেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয় উৎসব করেছিল তারা। এ ছাড়া রানি এলিজাবেথের সিংহাসন আরোহণের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান হয়েছে ওই স্থানেই। অনুষ্ঠানটি কিছুটা ক্ষুদ্র পরিসরে হয়েছে বলেই সরাসরি দেখার সুযোগ পায়নি খুব বেশি দর্শক। কারণ ‘দ্য মলে’র আসনসংখ্যা মাত্র চার হাজার। আইসিসির ফ্রি টিকিটে বিশ্বের চার হাজার লিজেন্ড (অতিথি) ভাগ্যবান ক্রিকেটপ্রেমীই শুধু এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সচক্ষে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি টেলিভিশনের পর্দায়ও দেখায়। এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের এই অনুষ্ঠানে ছিল ক্রিকেট উদযাপন, সঙ্গীত ও সংস্কৃতির দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানের আগে এক বিবৃতিতে বিশ্বকাপের আয়োজক কমিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্টিভ এলওয়ার্দি জানিয়েছেন, আমরা পুরো বিশ্বকে দেখাব, কেন তারা পরের ৪৫ দিন ক্রিকেট উপভোগ করবে। বিশ্বকাপ, ক্রিকেট ও খেলাধুলার বৈচিত্র্য উদযাপন করব আমরা। বিশ্বকাপের বাংলাদেশের বিশ্বকাপে মূল লড়াই শুরু হবে ২ জুন। ওই ওভালেই সে দিন দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে টাইগাররা।
এ দিকে আজ বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হয়ে ফাইনাল ম্যাচ হবে ১৪ জুন। ফলে এ ক’টা দিন হাসি-কান্নায় কাটবে ক্রিকেটপ্রেমীদের। এর আগে আর একবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা ১৯৯৯ সালের কথা। যে আসরে আয়ারল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারিয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস লাভের পথ সুগম হয়। এবং পেয়েও যায় ওই কাক্সিক্ষত স্ট্যাটাস। ফলে সে আসরটাও ছিল বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে খেলা ও গর্বেরও বিষয়। আবার বাংলাদেশ সেই ইংল্যান্ডে এবার খেলবে। এবারের প্রস্তুতিও ভালো। এবং প্রত্যাশায় অনেক কিছু। যাওয়ার প্রাক্কালে মাশরাফি বলেছিলেন, আমাদের প্রথম টার্গেট সেমিফাইনাল। এবং সেটা আমরা প্রতিটি ম্যাচটাকে ওয়ান বাই ওয়ান টার্গেট করেই খেলব। চ্যাম্পিয়ন হবে বা শিরোপা তুলে আনবে সেটা তিনি বলে যাননি। তবে এটাও বলেছেন এমনটি হলে বিস্ময়ের কিছু নেই। সাকিবও বেশ জোর গলায় বলেছেন, বাংলাদেশের এবার ভালো একটা সুযোগ। সেটাতে তিনি শিরোপার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন। কেনই বা করবেন না।
গত আসরে (অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে) বাংলাদেশ কোয়ার্টারে খেলেছে এবং কোয়ার্টারের সে ম্যাচে ভারতের সাথে কী ঘটেছিল সেটা আজো চোখে ভাসছে সবার। এরপর এ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের পর যে বড় আসর হয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ২০১৭ সালের সে আসরেও বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলেছে। ফলে এ আসরে তো আরো পরিপক্ব দল। যার কিঞ্চিৎ প্রমাণও রেখেছে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত তিন জাতি আসরে। ফলে মূল আসরে ভালো কিছু আশা করলে সেটি খুব বড় কিছু হয়ে যাবে না!