বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল চার হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের ২১ মে পর্যন্ত ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে এক হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কাস্টমসে আমদানি পণ্য পরীক্ষার নামে ফাইল আটকে অর্থ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে ঢাকায় ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে চায় পরীক্ষা করাতে। বেনাপোলে পণ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর থাকলে, হয়রানি পোহাতে হতো না। ঝামেলা এড়াতে এ পথে আমদানি কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।’
ব্যবসায়ী শাহজাহান কবির বলেন, ‘এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এটাও রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ। এছাড়া বৈধ আমদানি চালান কাস্টমস কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ ছাড়াই কখনও কখনও বিজিবি সদস্যরা আটকে রাখেন। সেখানে ২-৩ দিন পণ্য আটকে থাকে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিজিবি ও কাস্টমসের মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিলন বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ বন্দর দিয়ে সবাই ব্যবসা করতে চান। কিন্তু অবকাঠামোগত সমস্যায় সুষ্ঠু বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সেবা চালু থাকলেও ব্যবসায়ীরা তার সুফল পাচ্ছেন না। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে, বৈধ সুবিধা দেওয়া ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।’
আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘বন্দরে অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। মাঝে মাঝে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী। সাধারণ পণ্যাগারে কেমিক্যাল পণ্য খালাস করা হয়। বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশ করে বন্দরে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, বন্দরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এসব করণে এ বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে ভয় পান।’
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের জয়েন্ট কমিশনার শহীদুল ইসলাম জানান, পণ্য চালান ও খালাসে আগের চেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে কাস্টমসে। শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছু ব্যবসায়ী আমদানি কমিয়েছেন। বিশেষ করে রাজস্ব বেশি আসে, এমন পণ্য কম আমদানি হচ্ছে। এতে রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। শুল্ক ফাঁকির সঙ্গে কেউ কেউ জড়িত থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক প্রদোষ কান্তি দাস বলেন, ‘আমি যোগদানের পর থেকে বন্দরে সব ধরনের শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছি। জায়গা সংকটে বর্তমানে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়েছে।’