২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৫৬

ম্যাডাম শয্যাশায়ী, জাউ খেয়ে বেঁচে আছেন: রিজভী

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হয়েছে জানিয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তিনি এখন শয্যাশায়ী। জাউ খেয়ে কোনোরকম বেঁচে আছেন। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রীকে আজীবন জেলে রাখার প্রতিজ্ঞা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন,‘বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আপনি হত্যা করতে চাচ্ছেন। লন্ডনে আপনার মনের আসল কথা প্রকাশ করেছেন এবং দেশে এসে আপনার বক্তৃতা ও বেগম জিয়াকে জেলে রাখার কঠোর পদক্ষেপে সেটিরই প্রতিফলন নগ্নভাবে উন্মোচিত হয়ে পড়েছে জনগণের সামনে।’

সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘এদেশের মাটি ও মানুষের প্রাণাধিক প্রিয় দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে শুধু প্রতিহিংসা ও জিঘাংসা চরিতার্থ করার জন্য অবৈধ ক্ষমতার মদমত্ততায় জেলে বন্দী রেখেছে বর্তমান মিডনাইট ভোটের সরকার প্রধান। তিনি ঘোষণা দিয়েই দেশনেত্রীকে আজীবন জেলে রাখার প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়ন করছেন। যা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ জেনে গেছে। আইনি-প্রক্রিয়া ও প্রশাসনকে আঁচলবন্দি করে জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে অমানবিক কায়দায় তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে তাকে প্রাণনাশের নীলনকশা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’

‘মানুষের স্বল্পায়ু এক ছোট্ট জীবনে অবৈধ ক্ষমতার মসনদে বসে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে সরকার। মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য-উপহাস করছে, বড়াই আর অহংকার করছে! চুয়াত্তর বছর বয়সী গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রীর ভয়াবহ অসুস্থতা নিয়ে এই সংযম-সাধনার মাসেও আয়েশ-পায়েশ বলে হাসি-তামাশা করছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। কীভাবে সম্ভব একজন অসুস্থ জাতীয় নেত্রীকে নিয়ে এমন নিষ্ঠুর আচরণ করা?’

রিজভী বলেন, ‘আইনকে নিজের মতো করে ব্যবহার করা, সাজানো মামলা দিয়ে প্রহসনের বিচারে খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেয়া সবকিছু আপনি (প্রধানমন্ত্রী) নিজেই করেছেন, তা আপনার কথাতেই জনগণ নিশ্চিত হয়েছে। এখন আর কোনো টালবাহানা-মিথ্যাচার-আষাঢ়ে গল্প বানিয়ে দেশনেত্রীকে জেলে রাখতে পারবেন না। জনগণের সামনে আপনার সব কুমতলব ফাঁস হয়ে গেছে। তাই আর কালক্ষেপণ না করে বেগম খালেদা জিয়াকে আপনার প্রতিহিংসাপরায়ণতার জিঞ্জির থেকে মুক্ত করে দিন। দেশের মানুষকে আর ক্ষিপ্ত করবেন না। আজই দেশের মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীর মুক্তি চায়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশনেত্রী গত চারদিন কোনো রকমে জাউ খেয়ে বেঁচে আছেন। তার মুখে ঘা হয়ে ফুলে গেছে। জিহ্বা নাড়াতে পারছেন না। তিনি শয্যাশায়ী। এই রমজানে জেলে তার অবস্থা বিপদজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘গণতন্ত্রের এই অকাল প্রয়াণে শোক জানাতেও মানুষ ভয় পাচ্ছে। কারণ গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যার রক্তপাতের মাধ্যমে যে পিশাচের রাজত্ব কায়েম হয়েছে তাতে মানুষ শঙ্কিত। আইনের শাসনকে ফাঁসিতে লটকিয়ে সন্ত্রাসীরা এলোপাতারি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশব্যাপী। সুতরাং বর্তমান দুঃশাসনের অবসান না হলে দেশে ভয়ের শাসনই জারি থাকবে। সেজন্য গণতন্ত্রে মাকে কারামুক্ত করাই এখন গণতান্ত্রিক শক্তির প্রধান দায়িত্ব।’

রিজভী বলেন,‘দেশ যে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে তার প্রমাণ ব্যাংক বিমা, কয়লা-পাথর, শেয়ার মার্কেট গলধঃকরণের পর এখন রূপপুর আনবিক প্রকল্পের সাগর চুরির দুর্নীতির খবরে বিস্মিত দেশবাসী। উন্নয়নের কথা বলে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস বাস্তবায়িত করা হচ্ছে মহাদুর্নীতির ওপর ভর করে। রূপপুর আনবিক প্রকল্পে বালিশ-কেটলিসহ প্রকল্পের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কেনার মহাদুর্নীতির খবরে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পে কর্মরত মালি-ড্রাইভারদের বেতন লাখ টাকার কাছাকাছি, যা শুধু নজিরবিহীনই নয় এটি একটি জাহাজ মার্কা দুর্নীতিরই দৃষ্টান্ত। এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবরে দুদকের কোনো তৎপরতা নেই। কারণ দুদক বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের দমন এবং ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি মোছার যন্ত্র হিসেবে কাজ করে আসছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশব্যাপী বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি ও লুটপাটের যে মহৌৎসব চলছে তাতে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জড়িত বলেই এগুলোর কোনো বিচার হচ্ছে না। এক্ষেত্রে দুদক নখদন্তহীন নিশ্চল নির্বিকার প্রাণীর ভূমিকা পালন করছে।’

রিজভী বলেন,‘গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে জবাবদিহিতার টেকসই নীতি নেই বলেই লুটপাটের নীতিই প্রাধান্য বিস্তার করেছে। এজন্য ঋণখেলাপিদের আরও ঋণ দেয়া হচ্ছে, আর মধ্যরাতের ভোটের সহায়তাকারীদের বিনা সুদে গাড়ি-বাড়ি কেনার ঋণ দেয়া হচ্ছে। তাই মহাদুর্নীতির মাধ্যমে পকেট ভারী করাই হচ্ছে মিডনাইট সরকারের উন্নয়নের ভেতরের কাহিনি।’

প্রকাশ :মে ২০, ২০১৯ ২:৫৪ অপরাহ্ণ