সোমবার বিকালে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরপর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে উত্তেজনা শুরু হয়। পদ পাওয়াদের হামলার শিকার হয় পদবঞ্চিতরা। কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিতরা মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের জন্য গেলে শোভন-রব্বানীর অনুসারীরা তাদের ব্যানার কেড়ে নেন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কমপক্ষে ১০ জন গুরুতর আহত হন।
অভিযোগ রয়েছে একাধিক পদ পাওয়া নেতা-নেত্রী বিয়ে করেছেন। শুধু তাই নয়, বয়স ত্রিশের বেশি এমনও কয়েকজনও রয়েছেন এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। ছাত্রত্ব নেই, ব্যবসায়ীরা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। সেই তালিকাটাও বেশ বড়।
অভিযোগ উঠেছে- কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পাওয়া সোহানী তিথি, সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক পদ পাওয়া আফরিন সুলতানা লাবণী, উপ পাঠাগার সম্পাদক রুশী চৌধুরি, সহ-সম্পাদক পদ পাওয়া আনজুমান আরা আনু ও সামিহা সরকার সুইটি বিবাহিত।
অনুর বিরুদ্ধে নিয়োগ পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ইডেন কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে অনুর বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়।
সহ-সভাপতি ইশাত কাসফিয়া ইরাও বিবাহিত বলে অভিযোগ বঞ্চিতদের। কালিয়াকৈর নিষ্ক্রিয় বিএনপি নেতা আবদুস সবুরের মেয়ে সামিহা সরকার সুইটি সহ-সম্পাদক পদ পেয়েছেন।
ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতার স্থান পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার দাবি, সহ-সভাপতি আবু সাঈদ বিবাহিত এবং তার বয়স ৩০ বছরের বেশি। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে আজীবন বহিষ্কারে ছাত্রলীগের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিও তুলে ধরেছেন তিনি।
আবু সাঈদ অবশ্য বলেছেন তিনি বিবাহিত নন। তার নামে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। তিনি মাস্টার্স পাসের পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা ইনস্টিটিউটে একটি কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। সংগঠন থেকে আজীবন বহিষ্কারের বিষয়ে তার ব্যাখ্যা, ‘আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঙ্গে আমার আদর্শগত বিরোধ ছিল। এর জেরে বহিষ্কার করা হয়। পরে মিটমাট হয়ে যায়।’
আরেক সহ সভাপতি এস এম হাসান আতিকের পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাকিব হোসেন লিখেছেন, হাসান আতিক ৩৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এসব তথ্য ছাত্রলীগেরই অনেক নেতা ফেসবুকে তুলে ধরছেন। তাদের অধিকাংশই পদ না পাওয়ায় ক্ষোভ থেকে এবং কমিটি নিয়ে অনিয়ম তুলে ধরতে গিয়ে এ পন্থার আশ্রয় নিয়েছেন। এসব প্রমাণ তুলে ধরার পাশাপাশি তারা কমিটি নিয়ে নানা ধরণের সমালোচনাও অব্যাহত রেখেছে।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর গ ধারা অনুযায়ী, কোনো বিবাহিত ব্যক্তি সংগঠনটির পদে আসতে পারবেন না বলে উল্লেখ আছে। বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কয়েকজন বিবাহিত হয়েও ঠাঁই হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক খাজা খায়ের সুজন সংগঠনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক উপ-সম্পাদক রকিবুল ইসলাম সাকিবের পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন ‘ভাই আপনি জিতছেন। এই ছেলে বিবাহিত। এর নাম রকিবুল ইসলাম সাকিব। সে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শোভন ও রাব্বানীর কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক উপ-সম্পাদক হয়েছে।’
ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর বিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন লিখেছেন, ‘চাকুরীজীবী! সৃজন ভুঁইয়া, সহ-সভাপতি। ভালো তো ভালো না…।’
২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর সে সময়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক শাহরিয়ার মাহমুদ রাজু কে মাদক বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বর্তমান তিনি উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক পদ পেয়েছে। তানজিল ভূঁইয়া তানভীর ঠিকদারি ব্যবসায় জড়িত বলে তথ্য আছে। নির্ধারিত বয়সও পার করেছেন বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
কমিটির সদস্যদের আচরণের নিন্দা
সোমবার কমিটি ঘোষণার পর মধুর ক্যান্টিনে পদবঞ্চিতদের ওপর চড়াও হওয়ায় পদধারীদের নিন্দাও হচ্ছে। বিশেষ করে কয়েকজন নারী কর্মীকে পিটুনির বিষয়টি মানতে পারছেন না সংগঠনের সঙ্গে বর্তমান বা অতীতে সম্পৃক্ত বহুজন। ফেসবুকে মোহাম্মদ ইকরামুল হক নামে একজন লিখেছেন, ‘মেয়েদের গায়ে হাত দিতে একটুকু কি লজ্জা লাগল না? নিজের সহযোদ্ধা বোনের গায়ে হাত! তোমরা কেমন ছাত্রলীগ? নারীদের গায়ে যেই সংগঠন হাত দেয় সেই সংগঠন বিলুপ্ত করে দেওয়াই উত্তম। যারা নিজেদের বোনকে শ্লীলতাহানি করে তারা অন্যের বোনকে রেপ করতেও বুক কাঁপবে না। …দুর্দিনে আমাগো মতো ছাত্রনেতারা কষ্ট কইরা দলটারে ক্ষমতায় আনছে আর আমাগো কষ্টের ফসল তোমরা এভাবে ধ্বংস করতাছো।’
ঢাবির শহিদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসাইন রিফাত লিখেছেন, ‘এতদিন ক্যাম্পাস পাহারা দিলাম, মিটিং মিছিল করলাম, আন্দোলন সংগ্রাম করলাম, আর পদ দিলেন বিবাহিত, চাকরিজীবি, অছাত্রদের? আমাদের অপরাধ কী? এই পোস্টে কমেন্ট করে প্রশ্নের উত্তরগুলো দেবেন…..’
তাজুল ইসলাম লিখেছেন, এমন ম্যাসেজ রয়েছে যে, কক্সবাজারের একজনকে সহসম্পাদক পদ দিতে ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তো পদের জন্য মারামারি হবে না কি কোলাকুলি হবে?’
অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।