২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:১৬

টাইব্রেকারে চেলসিকে জিতিয়ে দিলেন কেপা, ইউরোপা লিগেও ‘অল ইংলিশ’ ফাইনাল

খেলা ডেস্ক

চ্যাম্পিয়নস লিগের আগের দুই রাতের শিহরণটা খুব সহজে চাপা পড়তে দিল না ফুটবল। দুর্দান্ত ফিরে আসার গল্প লেখেনি অবশ্য কোনো দল। কিন্তু ইউরোপা লিগে চেলসি-আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট ম্যাচ দেখল টাইব্রেকার রোমাঞ্চ। প্রথম লেগের পর স্ট্যামফোর্ড ব্রিজেও খেলা শেষ হলো ১-১ গোলে। এরপর অতিরিক্ত সময়েও দুইদল ডিফেন্ড করলো জান বাজি রেখে। পরে টাইব্রেকারে নায়ক বনে গেলেন চেলসি গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগা। এর আগে সবশেষ টাইব্রেকারে মুখোমুখি হয়েছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে, লিগ কাপের ফাইনালের। সেই ম্যাচে ম্যানেজারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে কুখ্যাত এক গল্পের খলনায়ক হয়েছিলেন। পরেরবার যখন দলকে ফাইনালে নিতে হত, তখন সেই কেপাই মাউরিসিও সারির দলকে জিতিয়ে দিলেন।

অধিনায়ক সিজার আজপিলিকুয়েতা চেলসির দ্বিতীয় পেনাল্টি কিকটি মিস করে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু ফ্রাঙ্কফুর্টের চতুর্থ আর পঞ্চম পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়ে কেপাই সেই চাপ সামাল দিয়েছেন। পরে পঞ্চম কিক থেকে এডেন হ্যাজার্ড সফল পেনাল্টি নিয়ে ৪-৩ ব্যবধানে টাইব্রেকারে জিতে চেলসিকে নিয়ে যান ইউরোপা লিগের ফাইনালে। আজপিলিকুয়েতার স্পটকিক ঠেকানোটা তাই কাজে আসেনি জার্মান গোলরক্ষক কেভিন ট্রাপের।

অন্য সেমিফাইনালে ভ্যালেন্সিয়া আর্সেনালকে শুরুতে ভয় দেখালেও সেটা পরোয়া করেনি আর্সেনাল। মেস্তায়ায় উনাই এমেরির দল শুরুর ধাক্কা সামলে জিতেছে ৪-২ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৩ গোলে জিতে তাই ফাইনালে উঠে গেছে আর্সেনাল। পিয়ের এমেরিক অবামেয়াং করেছেন হ্যাটট্রিক।

স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ২৮ মিনিটে রুবেন লফটাস চিকের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল চেলসি। এডেন হ্যাজার্ড থ্রু বল থেকে সিক্স ইয়ার্ড বক্সের ডান কোণা থেকে দারুণ ফিনিশে গোল করেছিলেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। এরপর প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার ভালো আক্রমণ করেও গোল আর পায়নি চেলসি। তবে বিরতির সময় স্বস্তিতেই ছিল সারির দল।

দ্বিতীয়ার্ধে জার্মান ক্লাবটি দারুণ শুরু করলে অবশ্য সেই স্বস্তি উবে যায়। একটা পেনাল্টিও পেতে পারত তারা। কিন্তু খুব বেশিক্ষণ সেই আফসোসের রেশ দলের ওপর ভর করতে দেননি লুকা ইয়োভিচ। গাইসিনোভিচের পাস থেকে কেপার সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানে ধীর স্থিরভাবে সময় নিয়ে শট করেছিলেন। বিফলে যায়নি সার্বিয়ানের চেষ্টা, ইউরোপা লিগে নিজের দশম গোল করে জানান দিয়েছেন ইউরোপের বড় ক্লাবগুলো কেন ছুটছে তার পেছনে।

অন্যপ্রান্তে অলিভিয়ের জিরুও এবার ইউরোপা লিগে করেছেন ১০ গোল। যুগ্মভাবে তারা দুইজনই সর্বোচ্চ গোলদাতা এই আসরের। ইয়োভিচের গোলের কিছুক্ষণ পর অবশ্য সর্বচ্চ গোলদাতারা জায়গাটা শুধুই নিজের করে নিতে পারতেন জিরু। তবে বাম পায়ে করা তার শট অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করে।

দ্বিতীয়ার্ধে বাকি সময়ে কেপা বা ট্র্যাপ কাউকেই আর তেমন পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। অতিরিক্ত সময়ে ট্র্যাপ করেছেন দারুণ এক সেভ। কিন্তু তার আগেই চেলসির হাত থেকে ম্যাচটা ফস্কে যেতে পারত দুই অর্ধে দুইবার। দুই ম্যানেজারই বদলি করিয়েছিলেন দুই স্ট্রাইকার। গঞ্জালো হিগুয়াইন নেমেছিলেন চেলসির হয়ে, আর সেবাস্তিয়ান হলার ফ্রাঙ্কফুর্টের হয়ে। হিগুয়াইন তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি খেলায়। কিন্তু হলার দারুণ দুইটি সুযোগ পেয়েও গোল পাননি। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে তাকে নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত করেন ডেভিড লুইজ। গোললাইন থেকে ব্রাজিলিয়ান করেন দুর্দান্ত এক ক্লিয়ার। পরেরবার ডাভিডে জাপাকস্তা গোলবঞ্চিত করেন।

পরে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। ইউরোপা লিগ সবশেষ টাইব্রেকার দেখেছিল প্রায় এক যুগ আগে। আগের দুইরাতের চ্যাম্পিয়নস লিগের রোমাঞ্চ ধরে রাখতেই যেন এতোসব আয়োজন।

আয়োজন ছিল মেস্তায়াতেও। কিন্তু তাতে পানি ঢেলে দিয়েছে আর্সেনাল। ১১ মিনিটে কেভি গ্যামেইরোর গোলে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছিল ভ্যালেন্সিয়া। কিন্তু ১৭ মিনিটে অবামেয়াংয়ের গোলে প্রথম লেগের অ্যাওয়ে গোলটা শোধ করা হয়ে যায় আর্সেনালের। বিরতির আগেই এগিয়ে যেতে পারত গানাররা। তবে অ্যালেক্সান্ডার লাকাজেতের শট গোলপোস্টে লাগলে আর এগিয়ে যাওয়া হয়নি তাদের। বিরতির পরই আক্ষেপ ভুলেছেন আর্সেনালের ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার। তার গোলে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে ভ্যালেন্সিয়া।

তবে ফিরে আসার সংগ্রাম থামায়নি ঘরের দল। স্কোরলাইন ২-২ করে ঘরের মাঠে কিছুটা অনুপ্রেরণার যোগান পেয়েছিল ভ্যালেন্সিয়া। তবে অবামেয়াং এর দুর্দান্ত দুই গোলে আর নাটকীয় ফেরার গল্প লেখা হয়নি তাদের। ৭৯ আর ৮৬ মিনিটে দারুণ দুইটি গোল করে হ্যাটট্রিং পূরণ করেন অবামেয়াং।

নিজের সাবেক ক্লাব ভ্যালেন্সিয়াকে বিদায় করে দিয়ে তাই উনাই এমেরি টানা চতুর্থবারের মতো উঠলেন ইউরোপা লিগের ফাইনালে। আগের তিনবারই সেভিয়াকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। এবার আর্সেনালকে ইতিহাসের প্রথম ইউরোপিয়ান শিরোপা এনে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ তার সামনে। তার চেয়েও বড় কথা এই টুর্নামেন্টে জিতে গেলে পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের টিকেটটা কাটা হয়ে যাবে আর্সেনালের। চেলসির সেটা নিশ্চিত, ফাইনালটা তাই আর্সেনালের জন্যই বেশি গুরুত্ববহ।

একটা ইতিহাসও অবশ্য হয়ে গেছে এরপর। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ আর ইউরোপা লিগ দুই প্রতিযোগিতার ফাইনালেই উঠেছে ৪ ইংলিশ দল। কোনো এক দেশের ক্লাবের এমন দাপট আগে দেখেনি ইউরোপিয়ান ফুটবল।

প্রকাশ :মে ১০, ২০১৯ ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ