গাড়িতে করে তিনি স্কুল থেকে তার বাচ্চাকে তুলতে যাচ্ছিলেন। পথে এক বাসের সঙ্গে তার গাড়ির সংঘর্ষ হয়। সেই একই গাড়িতে ছিলেন তার চার বছর বয়সী ছেলে ওমর ওবেয়ার। তবে মায়ের কোলে থাকায় তিনি রক্ষা পান। গুরুতর কোন আঘাত পাননি।
সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি সংবাদপত্র দ্য ন্যাশনালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওমর জানিয়েছেন তার মার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো তার ব্যাপারে আশা ছেড়ে দেইনি। কারণ আমার সবসময় মনে হতো একদিন তিনি জেগে উঠবেন। আমি এঘটনার কথা সবাইকে জানাচ্ছি যাতে করে কেউ তাদের প্রিয়জনের ব্যাপারে আশা ছেড়ে না দেন। এরকম অবস্থায় কেউ থাকলে তাকে মৃত বলে ধরে নেবেন না।’
মুনিরা আবদুল্লাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। পরে তাকে লণ্ডনে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তার অবস্থাকে ডাক্তাররা ‘ভেজিটেটিভ’ বলে বর্ণনা করেন।
এরপর তাকে আবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফিরিয়ে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রাখা হয়। একটি টিউবের মাধ্যমে খাবার খাইয়ে তাকে জীবিত রাখা হচ্ছিল। ওই অবস্থাতেই তাকে ফিজিওথেরাপি দেয়া হচ্ছিল যাতে করে শরীরের মাংসপেশীগুলো ভালো থাকে।
২০১৭ সালে এক সরকারি অনুদানের অর্থে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জার্মানিতে। সেখানে তার ওপর কিছু অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর কিছু ঔষধও প্রয়োগ করা হয় যাতে করে কোমা থেকে তাকে জাগিয়ে তোলা যায়।
একদিন তার ছেলে ওমরের সঙ্গে হাসপাতালে কারও তর্ক হচ্ছিল। তখন সেই শব্দে হঠাৎ তার মা জেগে উঠেন। ওমর জানান, ‘হাসপাতালের ওই রুমে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আমার মা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন আমি বিপদে আছি। সেটি তাকে যেন একটি ধাক্কা দিয়েছিল। তিনি অদ্ভুত শব্দ করছিলেন। আমি ডাক্তারদের ডাকছিলাম তাকে পরীক্ষা করার জন্য। তারা বলছিলেন সব স্বাভাবিক আছে।’
তিনি জানান, ‘এর তিনদিন পর আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি কারও ডাকে, কেউ আমার নাম ধরে ডাকছিল। আমার মা আমাকে ডাকছিল, আমি আনন্দে যেন উড়ছিলাম। আমি এই মুহূর্তটার স্বপ্ন দেখেছি অনেক। এখন আমার নাম ধরেই তিনি প্রথম ডাকলেন।’
মুনিরা আবদুল্লা এখন আরও অনেক বেশি সাড়া দিচ্ছেন। তাকে আবুধাবীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে ফিজিওথেরাপি দেয়া হচ্ছে। জ্ঞান হারানোর বহু বছর পর এরকম চেতনা ফিরে পাওয়ার ঘটনা আরও ঘটেছে। তবে এরকম অবস্থায় থাকা কেউ কখন তার সংজ্ঞা ফিরে পাবেন, সেটা অনুমান করা কঠিন।
টেরি ওয়ালিস নামে এক মার্কিন নাগরিক ১৯ বছর পর তার সংজ্ঞা ফিরে পেয়েছিলেন। এক গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর তিনি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন এই ১৯ বছর।