দেশজনতা অর্থনৈতিক ডেস্ক : বর্তমান সরকারের প্রথম ১০০ দিন উদ্যমহীন, উৎসাহহীন ও উচ্ছ্বাসহীন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সিপিডি আয়োজিত ‘বর্তমান সরকারের প্রথম ১০০ দিন’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে গত আট দশ বছরে অনেকগুলো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন করে আমরা তেমন আর কিছু দেখছি না। এ ছাড়া যে সকল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে আমাদের বিস্ময় রয়েছে। ’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বর্তমানে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এক ধরনের নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ সূচকই নিম্নমুখী। বিশেষ করে বৈদেশিক লেনদেনে যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তা আমাদের সোনার সংসারে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, এটি একটি বড় ধরনের ১০০ দিনের উত্থানের ওপর প্রতিফলিত হবে। এটা আমরা লক্ষ করিনি। আমরা যেটা লক্ষ করেছি, গতানুগতিক ধারাবাহিকতা। নতুনভাবে সেরকম কিছু আমরা লক্ষ করিনি। বরং যে ধরনের উদ্যোগ আমরা দেখেছি, সে ধরনের উদ্যোগ মিশ্র ইঙ্গিত দিচ্ছে। মিশ্র ইঙ্গিত কী দিচ্ছে? আমরা লক্ষ করেছি, বিভিন্ন কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আমরা দেখেছি, সুদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এগুলোর ফলে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হবে- এটা আমরা মনে করি না।
তিনি আরো বলেন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে দেখছি, প্রবৃদ্ধিনির্ভর অর্থনৈতিক আলোচনা। কেমন একটা প্রবৃদ্ধি-আচ্ছন্নতা বা আকৃষ্টতা আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি। অথচ অর্থনৈতিক তত্ত্বের সাম্প্রতিককালের চিন্তা দেখলে দেখা যাবে, সকলেই বলবে, প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যথেষ্ট না। এটা অর্থনীতি শাস্ত্রের দ্বৈতজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
‘এজন্য মান উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিককালে জনগণের জীবনমানের বিভিন্ন সূচকের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ যে বৈশ্বিক ঐক্যমত হয়েছে সেটিও প্রবৃদ্ধির বাইরে গিয়ে অনেক ধরনের পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নের ধারণাকে সামনে নিয়ে এসেছে। আমরা প্রবৃদ্ধিনির্ভর আলোচনা করি যেন ওই পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নের আলোচনা আমাদের মনোযোগের বাইরে চলে না যায়। সাম্প্রতিককালে আমরা দেশের ভেতর অর্থনৈতিক আলোচনায় এটার গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ দেখিনি,’ বলেন সিপিডির ফেলো।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক যে প্রবৃদ্ধি দেখি তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উঁচু, প্রশংসনীয় এবং অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়। তবে যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে তাতে ব্যক্তি খাতের বাড়তি কোনো ভূমিকা আমরা দেখিনি। এই উন্নয়নের জন্য যে ধরনের কর আহরণ দরকার তা আমরা দেখলাম না। ব্যক্তি খাতে যে ধরনের ঋণপ্রবাহ বাড়ার কথা তা আমরা দেখলাম না। পুঁজিপণ্যের আমদানি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। সেই সঙ্গে ব্যাংক খাতে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে যে ধরনের চাঞ্চল্য থাকে তাও দেখলাম না। প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে ধরনের চলক থাকে, সে চলকগুলোর প্রতিফলন কিন্তু আমাদের কাছে ধরা পড়ছে না।
‘যদি আমরা ধরি যে, প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেটা সঠিকভাবে অনুমিত হয়েছে। তাহলে বিনিয়োগ যেতেতু বেশি হয়নি, সুতরাং প্রবৃদ্ধিকে ব্যাখ্যা করতে হলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি দেখাতে হবে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে এমনকি প্রযুক্তি বা উদ্ভাবনীর রূপান্তর ঘটল যে শ্রমের উৎপাদন ক্ষমতা এমন বৈপ্লবিকভাবে বেড়ে গেল! এটা আমাদের এখন ভালো করে চিন্তা করে দেখতে হবে,’ বলেন তিনি।