ওয়াফা জানিয়েছেন, ‘আমাদের মুখ ঢেকে রাখতে হত….রান্নাবান্না করতে হত, যেন আমরা দাস। আমরা এটা চাই না, আমরা সত্যিকারের একটা জীবন চাই, আমাদের জীবন।’ খবর বিবিসির।
ওয়াফা ও মাহা আল-সুবায়ি এখন জর্জিয়ায় রাষ্ট্রীয় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। টুইটারে জর্জিয়া সিস্টারস একাউন্ট থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন এই দুই সৌদি তরুণী। তারা জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যেন, তাদের তৃতীয় কোন নিরাপদ দেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়।
সৌদি আরব থেকে তারা প্রথমে জর্জিয়ায় এসেছেন, কারণ এখানে আসতে সৌদিদের ভিসা লাগে না। ওয়াফা বলেন, ‘আপনাদের সাহায্য দরকার, আমরা নিরাপত্তা চাই, আমরা এমন একটি দেশে যেতে চাই, যারা আমাদের গ্রহণ করবে এবং আমাদের অধিকার রক্ষা করবে।’
তাদের দেখে বোঝা যায় যে, দুইজনেই মনঃকষ্টে এবং ভয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে তাদেরকে জর্জিয়ার অভিবাসন দপ্তরে নিয়ে যান কর্মকর্তারা। স্থানীয় গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তারা বলেছেন, তারা জর্জিয়াতে নিরাপদ বোধ করছেন না। কারণ এখানে সহজেই তাদের পুরুষ আত্মীয়রা খুঁজে বের করতে পারবেন।
আশংকা প্রকাশ করে ওয়াফা বলেন, ‘জর্জিয়া ছোট একটি দেশ এবং আমাদের পরিবারের যে কেউ এখানে আসতে পারে এবং আমাদের ধরে ফেলতে পারে।’
কিন্তু কেন তারা সৌদি আরবে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন? এর জবাবে ওয়াফা বলেন, ‘কারণ আমরা নারী। আমাদের দেশে আমাদের পরিবার প্রতিদিন আমাদের হুমকি দেয়।’ তার বোন মাহা জানান, এর প্রমাণও তাদের কাছে রয়েছে।
চরম রক্ষণশীল এই রাজতন্ত্রের দেশটি থেকে নারীদের পালিয়ে আসার সর্বশেষ উদাহরণ এই দুই বোন। দেশটিতে এখনো মেয়েদের কাজ করা বা ভ্রমণ করতে হলে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হয়।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে আসা ১৮ বছর বয়সী কিশোরী রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনান আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন যখন তিনি ফেরত পাঠানো ঠেকাতে থাইল্যান্ডের একটি হোটেলে নিজেকে আটকে টুইটারে সাহায্য চান। পরে তাকে আশ্রয় দেয় কানাডা।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্য প্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক সারাহ লেহ হুইটসন জানিয়েছেন, ‘সৌদি আরবে নারীদের জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে পুরুষরা।’
তিনি বলেন, ‘জর্জিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার বোনদের অধিকারকে সম্মান জানাবে, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত এবং ভালো ব্যবস্থা। কিন্তু সৌদি আরবের নিয়মকানুনের কারণে নারীরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, সেটার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। সেই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার সৌদি নারীদের অর্থবহ এবং কার্যকরী সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।’