দেশজনতা অনলাইন : দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের কাছে পাওনা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধের ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
গত ২ এপ্রিল এই বকেয়া পরিশোধের জন্য গ্রামীণফোনের কাছে নোটিশ পাঠায় বিটিআরসি। তবে গ্রামীণফোন পাওনা টাকা পরিশোধ না করে রীতিমত এটাকে ‘আইনগতভাবে ভিত্তিহীন’ দাবি করে মঙ্গলবার গণমাধ্যমের কাছে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে।
‘ভিত্তিহীন ও বেআইনি অডিট প্রত্যাহার করতে বিটিআরসিকে গ্রামীণফোনের অনুরোধ’ শিরোনামে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজস্ব বোর্ডের হয়ে টাকা দাবি করার কোনো এখতিয়ার বিটিআরসির নেই।
বিটিআরসি ২ এপ্রিল একটি দাবিনামার মাধ্যমে গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসিকে ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ১ লাখ টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ হাজার ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা পরবর্তী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়।
বিটিআরসির নিয়োগ করা জেভিসিএ অব তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি অডিট ফার্ম গ্রামীণফোনের যাত্রার সময় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ইনফরমেশন অ্যান্ড সিস্টেম অডিট পরিচালনা করে এই টাকা (৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ১ লাখ) দাবি করে।
তবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্রামীণফোন দাবি করেছে, এই অডিটে বিটিআরসির দাবি করা ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ১ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ বা ৬ হাজার ১৯৪ কোটি ৩ লাখ টাকাই হলো সুদ যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ধরা হয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালের আগস্টে বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে অডিটের প্রতিবেদনের উপর আনুষ্ঠানিক জবাব দিতে বলে। গ্রামীণফোন নির্ধারিত সময়ে সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও যুক্তি উপস্থাপন করে। কিন্তু বিটিআরসি তাদের দাবিনামায় শুধুমাত্র ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেয়া গ্রামীণফোনের ব্যাখ্যা আমলে নিয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে।
রাজস্ব বোর্ডের পাওনার বিষয়ে (যেটি মোট দাবিকৃত টাকার ৩২%) গ্রামীণফোনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাজস্ব বোর্ডের হয়ে টাকা দাবি করার কোনো এখতিয়ার বিটিআরসির নেই। এমতাবস্থায় অডিটের দাবি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে বিটিআরসিকে একটি সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আবারও আলোচনায় বসার দাবি জানিয়েছে গ্রামীণফোন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আরও বলা হয়েছে, এর আগে বিটিআরসি আরও একটি ইনফরমেশন অ্যান্ড সিস্টেম অডিটের মাধ্যমে ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সালের সময়কালে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা পাবে বলে দাবি করে। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশন সেই অডিটের অডিটর নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
বিটিআরসি ১৯৯৭-২০১১ সময়কালের পূর্ববর্তী অডিটের দাবি নিয়ে আদালতে একদিকে তাদের আইনগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে ১৯৯৭ থেকে ২০১৪ সালের অডিটে নতুন করে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দাবি করছে। ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়কালের জন্য বিটিআরসি দুটি দাবি করছে বলে উল্লেখ করেছে গ্রামীণফোন।
এ ব্যাপারে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল ফোলি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সঙ্গে অনেকবার আলোচনা এবং অডিটরকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করার পরেও আমাদের যুক্তিগুলো অডিট প্রতিবেদনে প্রতিফলিত না হওয়া খুবই দু:খজনক। অডিটের পুরো সময় আমরা বারবার অডিট প্রক্রিয়ার ত্রুটিগুলো তুলে ধরেছি। কিন্তু আমাদের মতামতকে দাবিনামায় সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে’।
প্রসঙ্গত, গ্রামীণফোনে ৫৫.৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে নরওয়েজিয় প্রতিষ্ঠার টেলিনরের। গ্রামীণ টেলিকম করপোরেশনের রয়েছে ৩৪.২ শতাংশ শেয়ার। বাকি ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর হাতে।
এর আগে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের কাছে সরকার অডিটের মাধ্যমে গত ১৯ বছরে ৮৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে। রবির বক্তব্য, হিসাবনিরক্ষকরা যেসব কারণে টাকা বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন তা এখন বিচারাধীন রয়েছে।