অনলাইন
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় এবার ফেঁসে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন। এর আগে যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে থানায় যাওয়ার পর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দী রেকর্ডের সময় ভিডিও করা এবং পরে তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসি মো: মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা হয়েছে।
এ দিকে ফেনীতে সুজনের মানববন্ধনে সর্বস্তরের মানুষ সংহতি প্রকাশ করে রাফি হত্যার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত রোববার আলোচিত এ মামলা দুই আসামি নুর উদ্দিন ও মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাকির হোসেন জবানবন্দী রেকর্ড করেন। জবানবন্দীতে নুর উদ্দিন ও শামীম পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তাহের সোহান গণমাধ্যমকে জানান, ‘নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে নুর উদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম। তাদের জবানবন্দী অনুযায়ী, নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ব্যাপারে আসামি শামীমের উৎসাহ ছিল বেশি।’
জবানবন্দীতে নুর উদ্দিন জানায়, গত ৪ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার সাথে ফেনী কারাগারে দেখা করে সে, শামীম, জাবেদ হোসেন, হাফেজ আবদুল কাদেরসহ আরো কয়েকজন। তারা ‘আলেম সমাজকে হেয় করা’য় সিরাজ উদদৌলার কাছে নুসরাতকে ‘একটা কঠিন সাজা দেয়া’র ব্যাপারে হুকুম চায়। ওই সময় শামীম নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার প্রস্তাব দেয়। তখন এ প্রস্তাবে সায় দিয়ে সিরাজ উদদৌলা তাদের নির্দেশ দেয়, ‘করো। তোমরা কিছু একটা করো।’
জবানবন্দীতে নুর উদ্দিন আরো জানায়, নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ব্যাপারে শামীমের বেশি উৎসাহ ছিল। কারণ সে দীর্ঘ দিন ধরে নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আসছিল।
নুর উদ্দিন জানায়, সিরাজ উদদৌলার নির্দেশনা পাওয়ার পর গত ৫ এপ্রিল সে, শামীম, জাবেদ হোসেন ও হাফেজ আবদুল কাদেরসহ আরো কয়েকজন মাদরাসার পাশের পশ্চিম হোস্টেলে বৈঠকে বসে। সেই বৈঠকে নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ব্যাপারে বিস্তারিত পরিকল্পনা নেয়া হয়, যা ৬ এপ্রিল তারা বাস্তবায়ন করে।
নুসরাতের প্রতি নিজের ক্ষোভ থাকার কথা উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে শাহদাত হোসেন শামীম বলেছে, দেড় মাস আগেও সে নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু নুসরাত তা প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি অপমানও করে। এ কারণে সে নিজেও নুসরাতের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। যার ফলে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার নির্দেশে অন্যদের সাথে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
জবানবন্দীতে শামীম জানায়, পরিকল্পনা আনুযায়ী গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা শুরুর আগে তারা মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে থাকা টয়লেটে ওঁৎ পেতে থাকে। এর আগে এক নারী সহযোগীকে দিয়ে তারা তিনটি বোরকা ও কোরোসিনের ব্যবস্থা করে। আলিম পরীক্ষা শুরুর আগে তারা উম্মে সুলতানা পপিকে দিয়ে কৌশলে নুসরাতকে ছাদে নিয়ে আসে। এরপর নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
শামীম জানায়, ‘এ ঘটনার সময় নূর উদ্দিন ও হাফেজ আবদুল কাদেরসহ আরো পাঁচজন গেটে পাহারায় ছিল। নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর শামীম দৌড়ে নিচে নেমে উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে বের হয়ে যায়। বাইরে গিয়ে সে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে ফোনে বিষয়টি জানায়। রুহুল আমিন বলেন, আমি জানি। তোমরা চলে যাও।’