২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:০৪

কুমিল্লায় চার শতাধিক বিদ্যালয় অতিঝুঁকিপূর্ণ, সংস্কারের উদ্যোগ নেই

দেশজনতা অনলাইনঃ কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলার ৪৪৮টি বিদ্যালয় ভবনকে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তবে এসব বিদ্যালয়ের সংস্কারের ক্ষেত্রে কোনও উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। এ কারণে দিন দিন কমছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখা।সরেজমিনে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, ভবনগুলোর চারদিকের দেয়াল ও পিলারের আস্তর খসে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের আস্তর খসে পড়ছে,মেঝে নিচের দিকে দেবে গিয়েছে,বৃষ্টির পানি ছাদ চুইয়ে পড়ছে,মেঝেতে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, ভবনের চালা ভেঙে পড়েছে, জানালা ও দরজা ঝরে পড়ছে এবং ভবনের কোথাও কোথাও রড বের হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ এইসব ভবনে ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত পাঠদান গ্রহণ করছেন শিক্ষার্থীরা। শুকনো মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে এবং বর্ষা মৌসুমে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে শিক্ষার্থীদের জামা-কাপড়,বই-খাতা পানিতে ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা জরাজীর্ণ ৪৪৮টি বিদ্যালয়ের ভবনকে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে নিলামযোগ্য হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় ৪৪টি, বুড়িচংয়ে ৮৩টি, লাকসামে ২৮টি, মুরাদনগরে ৪১টি, নাঙ্গলকোটে ৪৪টি,মেঘনায় ১৪টি,হোমনায় ১৩টি,সদর দক্ষিণে ৪টি,ব্রাহ্মণপাড়ায় ৫টি, মনোহরগঞ্জে ১৬টি,লালমাইয়ে ২১টি,চান্দিনায় ৩৯টি,চৌদ্দগ্রামে ৯টি,বরুড়ায় ৪টি,তিতাসে ১১টি,দাউদকান্দিতে ৩৭টি এবং দেবিদ্বারে ৩৫টি। সবচেয়ে বেশি বুড়িচং উপজেলার ৮৩টি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন।

সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার মডেল, ফিরিঙ্গীরহাট, জোলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ভবনগুলো একদম জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় এসব বিদ্যালয়ের খোলা মাঠে কিংবা বারান্দায় পাঠদান চলছে।

অন্যদিকে একই উপজেলার ফকিরমড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় একই দশা। ভবনে চালের টিন সম্পূর্ণ নষ্ট। বৃষ্টি আসলে অঝোরে পানি পড়ে। বারান্দায় পিলার নষ্ট,ভবনের দেয়ালে ফাটল। যেকোনো সময় দেয়াল ধসে পড়তে পারে। এছাড়া ফ্লোরের প্লাস্টার উঠে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঠিক একই দশা মনোহরগঞ্জ উপজেলার উদাইশ,দুর্গাপুর,চেইরইশ,জলিপুর,নরপাইয়া,নরহরিপুর,শ্রিপুর,ভাউপুর, নোয়াগাঁও,নাওতলা,বশৈইয়া,কৈয়ারপাড়,দিশাবন্দ,কাছি উত্তর,পূর্ব বাতাবাড়িয়া ও শোয়ারী মান্দুয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর মনোহরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়াল ও ফ্লোর ধসে ৬ শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া বেগম জানান, তিন বছর পূর্বে বিদ্যালয়টিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও সংস্কারের কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকার। আমরা শিক্ষকরাও ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে হিমশিত খাছি। কখনও বাহিরে আরও কখনও ভিতরে। যার ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীদের পরিমাণ কমে আসছে।

সুন্দরদৌল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্মৃতি রানী বণিক জানান,সমস্যায় জর্জরিত বিদ্যালয়টির শ্রেণি কক্ষের সংকট দীর্ঘদিনের। মানসম্পন্ন শ্রেণিকক্ষের অভাবে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দফতরে একাধিকবার অবহিত করেছি।

অভিভাবক নয়ন আক্তার বলেন, আমার মেয়ে সনিয়া আক্তার মনোহরগঞ্জ উদাইশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনিতে পড়ে। স্কুলের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ  হওয়ায় মেয়েকে স্কুলে স্কুলে দিয়ে খুব শঙ্কায় থাকতে হয়। এই বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করে।

কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন সিদ্দিকী বলেন,‘মাঠপর্যায়ে জরাজীর্ণ ৪৪৮টি স্কুল অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বেশির ভাগই নিলামযোগ্য ও  পুনর্নির্মাণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ’

এখন পর্যন্ত কেন সংস্কার করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সংস্কারের কোনও উদ্যোগ নেই। আমরা প্রতিবছর আবেদন করি এবং সমস্যাগুলো তুলে ধরি। তবুও ঠিক করা হচ্ছে না। তালিকা করে বিভাগীয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে আবেদন জানানো হয়েছে। আশা করছি, পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়গুলোর সমস্যা মুক্ত হবে।’

প্রকাশ :এপ্রিল ১৫, ২০১৯ ১:১৯ অপরাহ্ণ