অনলাইন
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অন্যতম আসামি সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীমসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, শুক্রবার রাতে শামীমকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এবং জাবেদ হোসেনকে ফেনীর রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরা দুজনই নুসরাতের পরিবারের দায়ের করা মামলার আসামি। তাদের নিয়ে এজাহারের আট আসামির মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা।
মামলার আরেক আসামি নূর উদ্দিনকে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেপ্তারের খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এলেও পিবিআই কর্মকর্তারা তা স্বীকার করেননি।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা প্রত্যাহার না করায় গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।
মৃত্যুশয্যায় দেওয়া তার জবানবন্দি অনুযায়ী, পরীক্ষার হল থেকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নেওয়া হয়েছিল নুসরাতকে। সেখানে নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরা চারজন তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান যে মামলা করেন, সেখানে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়।
অন্য আসামিদের মধ্যে শামীম, জাবেদ ও নূর উদ্দিন ওই মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সময় বোরকা পরা যে চারজন ছিলেন, তাদের মধ্যে নূর উদ্দিন ও শামীম থাকতে পারেন বলে সন্দেহ স্থানীয়দের।
নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনদের ভাষ্যমতে, নূর উদ্দিন ও শামীম ছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজের ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ’। নুসরাতকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার মামলায় সিরাজ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মুক্তি দাবির আন্দোলনেও এরাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন।
নূর উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান বলেন, “নূর উদ্দিন ও আব্দুল কাদের নামে এজাহারের দুই আসামিকে সহসাই পেয়ে যাব বলে আশা করছি।”
সাতদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।এছাড়া পৌর কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলমকে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। তাকে দল থেকেও অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।
তার আগে মঙ্গলবার রাতে ফেনী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জোবায়ের আহম্মদকে। এজাহারের আসামিদের বাইরে অধ্যক্ষ সিরাজের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপিসহ কয়েকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে আদালতের অনুমতিতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এদিকে গত কয়েক দিনের মতো শুক্রবারও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নুসরাতের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে।