খেলা ডেস্ক
নতুন স্টেডিয়ামে আলাদা করে বিরাট একটা স্ট্যান্ড বানিয়েছিল টটেনহাম হটস্পার। ঘরের দল যাতে সমর্থকদের সমর্থনের পুরোটাই পায় সেই ব্যবস্থা করতে। ঘরের মাঠে প্রথম ইউরোপিয়ান রাতটা রাতটা এর চেয়ে স্মরণীয় হতে পারত না আর তাদের জন্য। হিউ মিন সনের কাছে প্রথমেই শুট করার সুযোগ ছিল। কিন্তু হেভি টাচে সেটা পারলেন না। কিন্তু থামলেনও না। বল বাইলাইন পার করার আগে কোনোমতে সেটা আবার ফিরিয়ে আনলেন ভেতরে। বাকি কাজটা আরও কঠিন, তার সামনে তিনজন ম্যানচেস্টার সিটি ডিফেন্ডার। কিন্তু কাউকেই সুযোগ দিলেন না সন, সুবিধাজনক জায়গা থেকে একটু ফাঁকা দেখলেন। সেখান দিয়ে মারলেন, ডিফেন্ডারদের সঙ্গে এডারসনও বশ মানলেন তার কাছে। আর পুরো দৃশ্যটা সবচেয়ে কাছ থেকে দেখলেন ওই স্ট্যান্ডের দর্শকেরাই। সনের ৭৮ মিনিটের ওই গোল আর পরে শোধ করা হয়নি সিটির। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগ তারা হেরেছে ১-০ গোলে।
গতবছর অ্যানফিল্ডের মতো বিধ্বস্ত হয়নি পেপ গার্দিওলার দল। দ্বিতীয় লেগে যথেষ্ট সুযোগই থাকছে সিটিজেনদের জন্য। কিন্তু অস্বস্তিটা আড়াল করবেন কী করে গার্দিওলা? পরের লেগে তো গোল করার মতো সমান মনোযোগী হতে হবে গোল হজম না করার দিকেও।
কাজটা আরেকটু সহজও হতে পারত অবশ্য প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নদের। ১৩ মিনিটে ভিএআরের কল্যাণে পেনাল্টি পেয়ে গিয়েছিল সিটি। কিন্তু সার্জিও আগুয়েরো ব্যর্থ হুগো লরিসের সামনে। বামদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুই হাত দিয়ে আগুয়েরোকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন লরিস। এই মৌসুমে অধারাবাহিকতার জন্য লরিসের একাদশের জায়গাটাই নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু টটেনহাম অধিনায়ক সময়মতো আরও একবার জ্বলে উঠলেন। চলতি বছর এই নিয়ে ৩ বার পেনাল্টির মুখমুখি হলেন, ঠেকালেন প্রতিবারই। আর আগুয়েরো এই নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে পেনাল্টি মিস করলেন ৪ বার।
পেনাল্টির সিদ্ধান্তটা অবশ্য আরও একবার ভিএআর বিতর্ক উস্কে দিয়েছিল নতুন করে। রাহিম স্টার্লিং কাট করে ঢুকে পড়েছিলেন ডিবক্সের ভেতর, এরপর তার নেওয়া শট ব্লক করতে স্লাইড মেরেছিলেন ড্যানি রোজ। সেই স্লাইড মারতে গিয়েই বাম হাতটা শরীরের চেয়ে উঁচুতে উঠে গিয়েছিল তার। সেখানেই লাগল বল। রেফারি কর্নার দিয়েছিলেন, সিটি খেলোয়াড়েরাও আবেদন করেননি। কিন্তু ভিএআরের সাহায্যে পরে সিদ্ধান্ত বদলে রেফারি দিয়েছিলেন পেনাল্টির বাঁশি। ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল পুরনো ধন্ধটার সমাধান তাই মিলল না ভিএআরেও।
লরিসের ওই সেভের পর ধীরে ধীরে মনোবলও বাড়তে থাকে টটেনহামের। সিটিনেজনরা তাতে পিছু হটে। আসলে সময়মতো আর ছকে বাধা প্রেসিংয়ে সিটিজেনদের পিছু হটে বাধ্যই করে টটেনহাম। প্রথমার্ধে সেই সুযোগ গোলও প্রায় করে বসেছিল তারা। রেফারির অ্যান্ডানভেটেজ প্লের পূর্ণ সুবিধাটা টটেনহাম সে বেলায় নিতে পারেনি হ্যারি কেইনের ভুলে। ডিবক্সের ভেতর ডানদিকে পেয়ে গিয়েছিলেন বল, সেখান থেকে বাঁকানো শটই করেছিলেন কেইন। তবে যথেষ্ট বাঁকাতে পারেননি। তাই এডারসন মোটামুটি রুটিন সেভ করেই ফিরিয়ে দিয়েছেন তাকে।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পরও চনমনে টটেনহাম। তবে এবার ধার একটু কম। সেই ধারটা আরও কমে গেল কেইনের ইনজুরিতে। ফাবিয়ান ডেলফের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে মচকে গেল কেইনের বাম পা। কেইন ছিটকে পড়লেন মাঠের বাইরে ডাগ আউটে গিয়ে। কেইন আর মাঠেই ঢুকতে পারেননি। খোঁড়াতে খোঁড়াতে সঙ্গে সঙ্গেই ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন পুরনো ইনজুরি নতুন করে সঙ্গে নিয়ে। সেটা নিয়ে দ্বিতীয় লেগে খেলতে পারবেন কী না- তারওপর অনেকটা ঝুলে থাকল বোধ হয় টটেনহামের ভাগ্য।
কেইন ছিটকে পড়ার পর রাগে টগবগ করে ফুটতে থাকা মাউরিসিও পচেত্তিনো উপায় না দেখে শেষে ডেলফের ওপরই রাগ ঝাড়লেন। ওই ঘটনার মিনিট দশেক পর আরও একবার ডেলফকে কিছুকে একটা বলেছিলেন পচেত্তিনো। কেইনের ইনজুরির রেশ তো আর সহজে কাটার নয় তার জন্য! কেইনের জায়গায় নেমেছিলেন লুকাস মউরা। তিনি শুরুতে ঝলক দেখালেও, পরে মিলিয়ে গেলেন। আর আস্তে আস্তে খেই হারাল কেইনহীন টটেনহামও। পচেত্তিনোর রাগটা তাই বোধগম্যও।
সুযোগ বুঝে সিটিও তখন চেপে ধরেছিল পচেত্তিনোর দলকে। রিয়াদ মাহরেজ, স্টার্লিংরা যেন একটু একটু করে ছন্দ ফিরে পাচ্ছিলেন। আগুয়েরোর জায়গায় নামা গ্যাব্রিয়েল হেসুসও ভয়টা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন টটেনহামের। সব মিলিয়ে গোলটা তখন সিটিরই করার কথা ছিল!
সনের গোলটা তাই স্রোতের বিপরীতেই গেছে। তবে পুরো ম্যাচের প্রেক্ষাপটে সেটা প্রাপ্যও ছিল টটেনহামের। সময়টাও ছিল দারুণ। বাকি সময় আর যোগ করা আরও ৬ মিনিট মিলিয়েও গার্দিওলা ভাগ্য বদলাতে পারেননি দলের। কেভিন ডি ব্রুইন আর লিরয় সানেকে নামিয়েছিলেন একটু দেরি করেই। এই দেরিটা যেন টাই নির্ধারক না হয়ে যায়- সেটা প্রাণপনেই চাইবেন গার্দিওলা।