বিদেশ ডেস্ক
দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম প্রধান দেশ ব্রুনাইয়ে সমকামিতার শাস্তি হিসেবে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ডের আইন কার্যকর হলো। সম্প্রতি দেশটির দণ্ডবিধিতে এই ধারাটি যুক্ত করার পর ৩ এপ্রিল থেকে চালু হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই বুধবার থেকে সমকামিতার জন্য এই কঠিন শাস্তির বিধান কার্যকর করলো দেশটি। ব্রুনাইয়ের সুলতান আইনটি চালু হওয়ার পর এক ভাষণে ইসলামি শিক্ষা শক্তভাবে পালনের আহবান জানিয়েছেন।
ফ্রান্সভিত্তিক বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে আইন চালু হওয়ার সেই ভাষণে সুলতান হাসানুল বলকিয়া বলেছেন, ‘আমি আমার দেশে ইসলামি শিক্ষা শক্তিশালী হচ্ছে দেখতে চাই।’
সমকামিতাকে অনেক আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল ব্রুনাইয়ে। সমকামিতা নিষিদ্ধ করে এর শাস্তির বিধান করা হয়েছিল দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। দেশটিতে যারা সমকামিতায় বিশ্বাসী তারা এটাকে ‘মধ্যযুগীয় শাস্তির বিধান’ হিসেবে অভিহিত করে উদ্বেগ জানিয়েছে।
নতুন এই আইন অনুযায়ী, অভিযুক্তরা যদি নিজেদের সমকামী বলে স্বীকার করেন অথবা অন্তত চার জন প্রত্যক্ষদর্শী তাদের এ ধরনের কাজ করতে দেখেন তবেই তাদের সমকামিতার দায়ে অপরাধী সাব্যস্ত করা যাবে। তাছাড়া চুরির দায়ে অঙ্গচ্ছেদের মতো দণ্ডও রাখা হয়েছে আইনটিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির এক সমকামী ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, ‘ঘুম থেকে ওঠার পর আপনি অনুভব করলেন প্রতিবেশীরা, আপনার পরিবারের সদস্যরা এমনকী রাস্তার পাশে বসে ভাজা চিংড়ি বিক্রি করা নারীটিও আপনাকে আর মানুষ বলে ভাবছে না আর তারা পাথর ছুড়ে মারার সঙ্গে একমত।’
ব্রুনাই সদ্যপ্রণীত এই আইনটি প্রণয়নের ঘোষণা দেয় ২০১৪ সালে। ঘোষণার পর থেকে ধীরে ধীরে কিছুটা বাস্তবায়নও করা হচ্ছিল। অবশেষে নতুন করে যুক্ত আইনটিতে এমন দণ্ডবিধি যুক্ত করে তা কার্যকর করা হলো।
সমকামিতার এই দণ্ডবিধিকে নিষ্ঠুর ও অমানবিক বর্ণনা করে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার নিয়ে সবেচেয়ে বেশি কাজ করা প্রতিষ্ঠান অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ব্রুনাইকে এস দণ্ডবিধি রহিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ যারা বেত্রঘাতের মতো শাস্তি তাদের দণ্ডবিধিতে রেখে শরিয়াহ আইন পাস করে। ২০১৪ সালে তাদের এমন সিদ্ধান্তের পর আন্তর্জাতিকভাবে ব্যপক ক্ষোভ নিন্দা ছড়িয়ে পড়ে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনানুযায়ী, যে কোনো পরিস্থিতিতে পাথর ছোড়া, অঙ্গচ্ছেদ অথবা বেত্রাঘাত, আইনি সংস্থাগুলোর হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনসহ সব ধরনের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আইনটি পাস হওয়ার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ‘ব্রুনাইকে অবশ্যই এসব অমানবিক শস্তির বিধান কার্যকর বন্ধ করতে হবে। ব্রুনাই যাতে এসব পাশবিক দণ্ডবিধির বাস্তবায়ন করতে না পারে তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা জানানো জরুরি।