খেলা ডেস্ক
৮৪ মিনিটে রেফারির সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে হলুদ কার্ড দেখলেন বার্সেলোনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি। আর্মব্যান্ডটা শক্ত করে বাঁধলেন, যেন চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা দলকে ফেরানোর। বার্সা তখন পিছিয়ে ৪-২ গোলে, কাজ বাকি ঢের। শুরুটা করলেন তিনিই, ৯০ মিনিটে মেসির দুর্দান্ত ফ্রিকিকে ব্যবধান তখন ৪-৩। দরকার আরও ১ গোল, যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে জটলার মধ্যে ডিবক্সে বল পেলেন লুইস সুয়ারেজ। তার জোরাল শটেই এতক্ষণের উৎসবমুখর এস্তাদিও দে লা সেরামিকা মুহূর্তেই পরিণত হল মৃত্যুপুরিতে। ফিরে আসা, পিছিয়ে পড়া, দুর্দান্ত সব গোল, লাল কার্ড- উত্তেজনায় ঠাসা রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচে যোগ করা সময়ের জোড়া গোলে ভিয়ারিয়ালের সাথে ৪-৪ গোলে ড্র করেছে বার্সা।
মেসি, সুয়ারেজের জাদুর আগে অবিশ্বাস্য এক জয়ের দিকেই এগুচ্ছিল ভিয়ারিয়াল। প্রথমার্ধে ২ গোলের পিছিয়ে পড়েও ৪ গোল করে ঐতিহাসিক এক জয়ের স্বপ্নে বিভোর তখন এস্তাদিও দে লা সেরামিকা। কিন্তু ৮৬ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ভিয়ারিয়ালের আলভারো গঞ্জালেজ। ‘ইয়েলো সাবমেরিন’দের কপাল পুড়েছে তাতেই। ১০ জনের ভিয়ারিয়ালকে পেয়েই দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তনে ‘ইয়েলো সাবমেরিন’দের বিপক্ষে টানা ১৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ২০-এ নিয়ে গেল কাতালানরা।
প্রথমার্ধে বার্সার পারফরম্যান্স দেখে অবশ্য ম্যাচের ফলাফল সম্পর্কে আঁচ করতে পারা ছিল প্রায় অসম্ভব। মেসিকে ছাড়াই ১৬ মিনিটেই ২ গোলের লিড নেয় কাতালানরা। ১২ মিনিটে ম্যালকমের ক্রস গোলের একেবারে সামনে থেকে আলতো টোকায় জালে পাঠান কুতিনিয়ো। ১৫ মিনিটে লুইস সুয়ারেজের শট লাইন থেকে ফিরিয়ে দেন ভিয়ারিয়ালের ভিতর রুইজ। কিন্তু অদম্য বার্সা ব্যবধান দ্বিগুণ করতে সময় নেয়নি একেবারেই। ১৬ মিনিটেই আর্তুরো ভিদালের ক্রসে হেড করে গোল করেন লা লিগায় নিজের প্রথম গোলের দেখা পান ম্যালকম। বার্সার জার্সিতে এবারই প্রথম একই ম্যাচে গোল এবং অ্যাসিস্টের দেখা পেলেন তিনি। শুরুতেই কাতালানদের আক্রমণ জোয়ারে রীতিমত অসহায় হয়ে পড়ে ভিয়ারিয়াল। ব্যবধানটা প্রথমার্ধেই আরও বড় করতে পারতেন কুতিনিয়ো।
কিন্তু ১৯ মিনিটে তার শট ফিরে আসে বারপোস্টে প্রতিহত হয়ে। তবে কিছুক্ষণ পরই ধারার বিপরীতে ম্যাচে ফেরে ভিয়ারিয়াল। ২৩ মিনিটে বার্সা ডিফেন্ডার ক্লেমেন্ত লংলেকে কাটিয়ে চুকুওয়েজের শট প্রতিহত হয় বারপোস্টে, কিন্তু ফিরতি বল জালে পাঠান তিনিই। এরপর থেকে প্রেসিং ফুটবলে বার্সাকে চেপে ধরে ভিয়ারিয়াল। প্রথমার্ধেই সমতায় ফিরতে পারত তারা। কিন্তু ৪০ মিনিটে পেদ্রাজার জোরাল শট দক্ষহাতে ফিরিয়ে দেন বার্স গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে-টার স্টেগান। তবে সমতায় ফিরতেও দেরী করেনি ‘ইয়েলো সাবমেরিন’রা।
চুকুওয়েজের গোলে পাস বাড়িয়েছিলেন তিনিই। এবার সেই চুকুওয়েজের পাস থেকেই ৫০ মিনিটে দলকে সমতায় ফেরান টোকো একাম্বি। প্রথমার্ধে কিছুটা মনমরা এস্তাদিও সেরামিকায় তখন কান পাতা দায়। ডাগআউটে হাত গুটিয়ে, গম্ভীর মুখে দলের লিড হারানো দেখলেন মেসি, মাঠে তখন শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সুয়ারেজরা। ম্যাচে ফেরার আশায় ৬১ মিনিটে মেসিকেই নামিয়ে দিয়েছিলেন ভালভার্দে। বেঞ্চ থেকে এসে মেসিই বাঁচাবেন বার্সাকে, এমন প্রত্যাশাই ছিল সবার। কিন্তু এবারের শুরুটা হয়েছিল হিতে বিপরীত।
মেসির নামার মিনিটখানেকের মাঝেই দুর্দান্ত গোলে ‘কামব্যাক’ পূরণ করে ভিয়ারিয়াল। মোরালেসের পাস থেকে চিপ করে দলকে ম্যাচে প্রথমবারের মত লিড এনে দেন ভিচেন্তে ইবোরা। লিড নিয়েই আক্রমণ থামিয়ে ‘বাস পার্ক’ রক্ষণে নেমে পড়েনি ভিয়ারিয়াল। উলটো আক্রমণের ধার বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ৬৮ মিনিটে পুরো ম্যাচ বার্সার রক্ষণে ছড়ি ঘোরানো চুকুওয়েজের শট প্রতিহত হয় বারপোস্টে। তবে চতুর্থ গোলের দেখা ঠিকই পেয়ে যায় ভিয়ারিয়াল। ৮০ মিনিটে সান্তি কাজোরলার থ্রু পাস থেকে টার স্টেগানকে একা পেয়ে ঠান্ডা মাথার ফিনিশে গোল করেন কার্লোস বাক্কা। তখনও অবশ্য নাটক বাকি ছিল সিংহভাগই।
বদলি হয়ে নেমেই দলকে পিছিয়ে পড়তে দেখা মেসিই হেসেছেন শেষ হাসি, আবারও খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলেছেন। দলের সঙ্কটময় সময়ে জ্বলে উঠেছেন পুরো ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে থাকা সুয়ারেজও। শেষদিকের এমন ফেরায় রীতিমত ভিয়ারিয়ালের মুখের খাবারই যেন কেড়ে নিল বার্সা। আবারও প্রমাণ করল, কেন এতদিন ধরে লা লিগার শীর্ষে আছে তারা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে আগামী সপ্তাহেও কি এভাবেই জ্বলে উঠবেন মেসি-সুয়ারেজ?