২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৪৮

সুপরিকল্পিতভাবে ঐক্য ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণের ঐক্য ও সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচারকে পরাজিত করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সুপরিকল্পিতভাবে আজ চেষ্টা করা হচ্ছে জনগণের ঐক্যকে ভেঙে ফেলার।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউটে এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। কে এম ওবায়দুর রহমান স্মৃতি সংসদ এ সভার আয়োজন।

তিনি বলেন, যে ঐক্য তৈরি হয়েছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, জনগণ যেভাবে নির্বাচনে সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেছে এই স্বৈরাচারি আওয়ামী লীগ সরকারকে, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে, সেই ঐক্যে ভাঙন সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, দেশনেত্রীর নির্দেশে আমরা এই ঐক্যকে আরো সুদৃঢ় করবো এবং সমগ্র বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ স্বৈরাচার আওয়ামী লীগেকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করে পরাজিত করবো।

এ অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন একদাশ সংসদে বিএনপির অংশগ্রহণ ও ড. কামালের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, একদাশ সংসদ নির্বাচনকে আমরা একটি হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। আমাদের গণতন্ত্রের মাতা (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) তারই নির্দেশে। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, আমাদের সাধারণ সভায় তিনি পরিস্কার করে বলে গিয়েছিলেন যে, দল মত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে ঐক্য গড়ে তুলতে এবং এই ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতে ঐক্য নিয়ে লড়াই করতে হবে।

তিনি বলেন, আবেগ দিয়ে যুদ্ধ জয় করা যায়না। এখানে অনেকে অনেক কথা বলছেন। আমরা দেখেছি নেত্রী গ্রেফতার হওয়ার পরে যখন আমরা কর্মসূচি দিয়েছি দেখেছি কতজন এসেছেন কতজন আসেননি। আমরা তো দেখেছি কারা কারা কর্মসূচি থেকে আস্তে আস্তে চলে গেছেন।

বিএনপিকে ভাঙতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি কোনোদিন নিঃশেষ হবে না। বিএনপির রাজনীতি জনগণের রাজনীতি। এখন সময় কঠিন। এই কঠিন সময়ে অতিক্রম করতে হবে ধৈর্য্য ও সাহস নিয়ে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের এক পর্যায়ে দর্শক সারি থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বিচ্ছিন্নভাবে প্রশ্ন করতে থাকেন। এ সময় মির্জা ফখরুল তাদের মঞ্চে এসে প্রশ্ন করতে বলেন। দর্শক সারি থেকে ঢাকা কলেজের সহ সভাপতি এইচএম রাশেদ মঞ্চের কাছে এসে জানতে চান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সর্বশেষ যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তাকে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া হয়নি কেন? এ সময় ফখরুল বলেন, কে বলেছে একথা। প্রথমে কর্মসূচি গেছে, মুক্তির কথা ছিলো। এখনো কর্মসূচি চলছে। এসব মিথ্যা কথা বলবেন না। কখনোই জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি টিএম গিয়াসউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়ার পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, শামা ওবায়েদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, খন্দকার মাশুকুর রহমান, যুবদল নেতা মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিঙ্কু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন প্রমুখ।

নির্বাচনে যাওয়া ও ড. কামাল নিয়ে প্রশ্ন: মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কেনো এই নির্বাচনে আমরা গেলাম। কথা হলো- নিদর্লীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না, কিন্তু তাতো হলো না। কথা হলো খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন হবে না কিন্তু খালেদা জিয়া ছাড়া আমরা নির্বাচনে গেলাম। কেনো আজো খালেদা জিয়া জেলে? কেনো একটা দাবিও সরকার মানলো না, কী কারণে এটা হলো?

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ না করে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমি স্বাধীনতার ইতিহাস জানি। সেসময়ে কে যায় নাই ভারতে, আমরা সব চলে গেলাম। এন্টায়ার কেবিনেট চলে গেলো। তাজউদ্দিন আহমেদ সাহেবের রিসেন্টলি একটা বই বেরিয়েছে সেটা আপনারা পড়বেন- সেটাতে লেখা আছে তার (ড. কামালের) যাওয়ার কথা ছিলো আমাদের সাথে। সে যায়নি। আমি নাম বলতে চাই না এই মুহুর্তে। ১৪ জুন পর্য়ন্ত ঢাকা থাকলেন, তারপর জিওসি টেলিফোন করে বললেন, আমাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দাও। পাঠিয়ে দেয়া হলো।

তিনি বলেন, আমরা তার (ড. কামাল হোসেন) ইতিহাস জানি। বাংলাদেশের তার কোনোদিন কোনো আসন ছিলো না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে এক সময়ে সে (ড. কামাল হোসেন) বৃদ্ধ সাত্তার সাহেব ( বিচারপতি আবদুস সাত্তার) আমার চাচা শ্বশুর দুঃসম্পর্কে তার কাছে এক কোটি ভোটে হেরেছিলেন। আমরা তাকে নেতা মানলাম। কেনো ফখরুল ( মির্জা ফখরুল) কী দোষ করেছিলো? মহাসচিব ফখরুল, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আমাদের তো অন্য কারো দরকার নেই। আমাদের কারো দরকার ছিলো না। আমরা যা পারি করবো, না পারলে করবো না- নির্বাচন করবো না। কিন্তু এটা কী হলো? ঠাটা পড়লো সমগ্র জাতির উপরে।

প্রকাশ :মার্চ ২৫, ২০১৯ ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ