২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:২০

খোন্দকার দেলোয়ারের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ ১৬ই মার্চ। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক ও বিএনপির সাবেক মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মানিকগঞ্জ জেলার পাঁচুরিয়ায় ১৯৩৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে অনার্স ও ১৯৫৩ সালে মাস্টার্স পাস করেন। ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি চার ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেলোয়ার সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হন। তিনি ঘিওর-দৌলতপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে ২য়, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাধিকবার চিফ হুইপ ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর খোন্দকার দেলোয়ার বিএনপির মহাসচিব নিযুক্ত হন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুরো সময় বিএনপির নানা সংকটে খালেদা জিয়ার পক্ষে তিনি জোরালো ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন সরকার জোর করে বিএনপির নেতৃত্ব বদল করতে চাইলেও খোন্দকার দেলোয়ারের জোরালো ভূমিকায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিনিই সেই যাত্রায় বিএনপিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেন। বিএনপির পঞ্চম কাউন্সিলের পর মহাসচিব পদ নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও দেলোয়ারকেই ফের মহাসচিব করা হয়। এর কিছুদিন পর থেকেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায়ই তাকে হাসপাতালে যেতে হতো। সেখান থেকেও তিনি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। দেশের ইতিহাসে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন শুধু একজন রাজনীতিবিদই নন, তিনি ছিলেন আপসহীন। ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকারের সময় বিএনপির সিনিয়র অনেক নেতাই যখন খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তখন রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি বিএনপির ঝাণ্ডাকে একাই তুলে ধরেছেন। এই নিভৃতচারী জননেতা যে এলাকাবাসীর কতটা আপনজন ছিলেন তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল আরমানীটোলা থেকে মানিকগঞ্জের পাঁচুরিয়া পর্যন্ত শোকার্ত মানুষের বিশাল সমাবেশ। সেখানে দেখা গেছে অশ্রুসিক্ত নয়নে জনতার নীরব মিছিল। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গ দলগুলো নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, বিএনপির সাবেক মহাসচিব, বরেণ্য রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে আমি তার বিদেহী আত্মার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। বাংলাদেশে মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন একজন দৃঢ়চেতা, আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের মানুষের মনে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত থাকবেন। দৃঢ়তা, অটুট মনোবল এবং ব্যক্তিত্বে তিনি ছিলেন অনন্য উচ্চতায় একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের মুক্তির সব সংগ্রামে তিনি রেখেছেন অসামান্য অবদান। ১/১১-তে দেশের এক চরম রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্ব্ব কাঁধে নিয়ে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত রুখে দিতে যোগ্য নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী দর্শনকে বুকে ধারণ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারের কবল থেকে গণতন্ত্র উত্তরণের প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রামে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এর অবদান দল ও দেশবাসী চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। দিবসটি উপলক্ষে আজ বেলা ১১টায় বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টন দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। এছাড়া বাদ জোহর খোন্দকার দেলোয়ারে গ্রামের বাড়ী মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পাঁচুরিয়ায় মাজার জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

প্রকাশ :মার্চ ১৬, ২০১৯ ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ