নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে রাজু ভাস্কর্যে আমরণ অনশনে বসা সাত শিক্ষার্থী অনশন ভেঙেছেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় চতুর্থ দিনের মাথায় নির্বাচনে অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্তের প্রতিশ্রুতিতে অনশন ভাঙেন তারা।
শুক্রবার রাত ১১টায় শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, ডাকসুর সহসভাপতি নুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও সহসাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এ সময় অনশনকারীদের লাচ্ছি খাইয়ে অনশন ভাঙান তাঁরা।
অনশন ভাঙাতে এসে সহউপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুস সামাদ অনশনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের যেসব অভিযোগ আছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে। তোমরা কনভিন্সড হও। অনশন ভাঙো।’এ সময় অনশনকারীদের সমর্থনে বসে থাকা শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের বিভিন্ন কারচুপির কথা বলেন সহউপাচার্যকে। তখন সহউপাচার্য আবার শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এরপর অনশনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘উপাচার্য স্যার তো সব জায়গায় সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন। তিনি আদৌ এগুলোর সমাধান করবেন কি না?’ তখন সহউপাচার্য অনশনকারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেন।
এ সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাকসুদ কামাল বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে যত ধরনের সহযোগিতা করা দরকার সেটা করা হবে। সে জন্য তোমাদের বসতে হবে। আমরা উপাচার্যকে এটাও বলব তিনি যেন আন্তরিকতার সঙ্গে তোমাদের কথা শোনেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদের যেমন তেমনি আমাদেরও। তাই এর সম্মান যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সে জন্য সব সময় আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি।’
এরপর অনশনকারীদের পক্ষ থেকে সহউপাচার্যকে বলা হয়, নির্বাচনে এক প্রার্থীর দ্বারা অন্য প্রার্থীর ওপর হামলা করার ঘটনা ঘটেছে। সেটার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? তখন সামাদ বলেন, ‘তোমারা প্রমাণ দেখাতে পারলে অবশ্যই একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব করা হবে। এখন তোমারা শুধু কনভিন্সড হও। অনশন ভাঙো।’
এরপর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৮ মার্চ সকাল দশটায় উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাব মেনে নিয়ে লাচ্ছি খাইয়ে অনশন ভাঙান সহ উপাচার্যসহ সেখানে উপস্থিত অন্যরা। পরে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণার আগে ১১ মার্চের নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের (উপাচার্য ও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অন্য পাঁচ রিটার্নিং কর্মকর্তা) পদত্যাগের দাবিও জানান তাঁরা। অনশনে বসা সাত শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহীদ তানজিম, পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাঈন উদ্দিন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফিয়া তামান্না, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের মিম আরাফাত মানব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রবিউল ইসলাম।
গত বুধবার বিকেলে অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়া হয় দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য মণ্ডলকে। অনশনকারীদের মধ্যে রাফিয়া তামান্না বাদে বাকিরা ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন পদের প্রার্থী ছিলেন।