নিজস্ব প্রতিবেদক
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপিরে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, তার শরীর ভালো যাচ্ছে না। খোদ বিএনপি চেয়ারপারসনই এ কথা জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে।
আজ রোববার নাইকো মামলার শুনানিতে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আদালতে উপস্থিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন ম্যাডাম কেমন আছেন। উত্তরে খালেদা জিয়া বলেন, ভালো নেই। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।
নাইকো মামলার অভিযোগ শুনানিতে আজ দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে হুইলচেয়ারে করে পুরান ঢাকার অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে আনা হয় খালেদা জিয়াকে। এজলাসে ছিলেন বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান। এজলাসে প্রবেশের সময় খালেদা জিয়াকে সালাম দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল ।
আদালতকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, আগের ডেটে আদালতে আসার জন্য আমি রেডি ছিলাম। আমাকে আনা হয়নি। অথচ বলা হয়েছে, আমি নাকি ঘুমিয়ে ছিলাম। তাই আমাকে আদালতে আনা যায়নি। এই তথ্য সঠিক নয়।
এদিন আদালতের খালেদা জিয়ার পাশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বসা ছিলেন। এক ফাঁকে এই দুই নেতা কথা বলেন।
আদালতের কার্যক্রম শেষ হয় বেলা ১ টা ৪৮ মিনিটে। এরপর ফের খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২০ ফেব্রুয়ারি নাইকো মামলায় খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল— খালেদা জিয়া ঘুমাচ্ছেন। তিনি ঘুম থেকে উঠতে পারেননি বলে আদালতে হাজির করা হয়নি।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে আদালতে আনা হয়। সেদিন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিবরণ দিয়ে তার চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
ওই দিন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও শহীদুল ইসলামের চার্জ শুনানি শেষ না হওয়ায় পরবর্তী শুনানির জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন আদালত।
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি নাইকো মামলার শুনানিতে এসে বিচারককে আদালতের বিষয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ বছর জানুয়ারিতে তিন দিন এবং এ মাসে দুদিন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
নাইকো দুর্নীতি মামলা সূত্রে জানা যায়, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।
মামলা করার পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সাংসদ এমএএইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় যথাক্রমে ১০ ও সাত বছরের দণ্ড দেয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়।