খেলা ডেস্ক
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩৩০ করেছিল নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৬১ রানের মধ্যেই অর্ধেক ব্যাটসম্যান ‘নেই’ বাংলাদেশের। খেলাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল তখনই। হোয়াইটওয়াশকে ভবিতব্য ধরে নিয়ে ডানেডিনের শেষ ম্যাচ থেকে ইতিবাচক কিছু খুঁজে নেওয়াই ছিল লক্ষ্য। সেই ‘ইতিবাচক’ কিছু বাংলাদেশ পেয়েছে সাব্বির রহমানের ব্যাটে। দারুণ এক সেঞ্চুরি করে তিনি লজ্জা দিয়েছেন দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। থামিয়েছেন নিজের সমালোচকদের। তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটি নিয়ে যতটুকু আক্ষেপ সেটি হচ্ছে দলকে জেতাতে না পারার।
৩৩১ রানের জবাব স্কোরবোর্ড ২ রান না উঠতেই আউট হয়ে ফিরলেন তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। নেপিয়ার আর ক্রাইস্টচার্চের প্রথম দুটি ওয়ানডেতে এই তিনের ব্যর্থতাটাই বড় ভোগা ভুগিয়েছে। আজ এরা তিনজন ব্যর্থতা ষোলোকলা পূর্ণ করেছেন। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই টিম সাউদির বলে উইকেটকিপার টম ল্যাথামের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান ওপেনার তামিম। দুই বল পর তাঁর দেখাদেখি ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন সৌম্য সরকারও, সাউদির বলে বোল্ড হয়ে। ট্রেন্ট বোল্টের করা দ্বিতীয় ওভারটা কোনোভাবে সামাল দিতে পারলেও নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের তৃতীয় ওভারে এসেই আরেক ওপেনার লিটন দাসকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন সৌদি। শূন্য রানে আউট হওয়া তামিম ও সৌম্যর চেয়ে এক রান বেশি করেছেন। এ নিয়ে সিরিজের তিন ওয়ানডেতে টানা তিনবার এক রান করে আউট হলেন লিটন। কোনো রেকর্ড করে ফেললেন কি না, সেটি নিয়ে গবেষণা হতেই পারে!
ভগ্নপ্রায় ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। তবে ৮ ওভার স্থায়ী হয় তাদের এই মেরামতি কাজ। ১০ ওভার পূর্ণ হওয়ার ঠিক এক বল আগে বোল্টের বলে কলিন মানরোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিক। স্কোরবোর্ড তখন বাংলাদেশ দেখছে ৪০। ২৭ বলে ৩ চারে ১৭ রান করেছিলেন তিনি। উইকেটে নেমেই উল্টোদিকে পাল্টা দিচ্ছিলেন সাব্বির রহমান। ২টি চার ও এক ছক্কায় দ্রুত ১৭ বলে ১৮ রান করে ফেলেন তিনি। কিন্তু সাব্বিরকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। কলিন ডি গ্রান্ডহোমের বলে সেই মানরোর হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এবারের নিউজিল্যান্ড সিরিজে ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ার আগে ৩৬ বলে ১৬ রান করেন।
মাহমুদউল্লাহ চলে গেলেও সাইফউদ্দিনকে নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে থাকেন সাব্বির। বাংলাদেশের মান-সম্মান কিছুটা হলেও রক্ষা করেছেন এই জুটি। ১০১ রানের এই জুটি থামে সাইফউদ্দিনের ফেরার মধ্য দিয়ে। ৬৩ বলে ৪ চারে ৪৪ রান করে তিনি বোল্টের বলে গাপটিলকে ক্যাচ দেন। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজকে না নামিয়ে নিজেই নেমেছিলেন মাশরাফি। কিন্তু তিনি রানের চাকা সচল করতে পারেননি। সাউদির বলে বোল্টের হাতে ক্যাচ হন তিনি। এরপর মেহেদি হাসান নেমে দ্রুত রান তোলার দিকে মনোযোগ দেন। পিছিয়ে ছিলেন না সাব্বিরও। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন সিরিজের আগে হাজারো সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হওয়া এই ক্রিকেটার। বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাওয়ার জন্য এই ম্যাচে ঝলসে ওঠা ছাড়া বিকল্প ছিল না সাব্বিরের, এ কথাটা বেশ ভালোভাবেই জানতেন তিনি। ব্যাটিংয়ের প্রতি মুহূর্তে দেখা গেছে সেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞার ছাপ। সাব্বিরের সেঞ্চুরি হওয়ার পরপরই সাউদির বলে গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মেহেদি। ৭টা চারে সাজানো ৩৭ রানের ইনিংসটি খেলতে তিনি খরচ করেছেন ৩৪ বল। পরের দুটি উইকেটও তাড়াতাড়িই পড়ে যায় বাংলাদেশের। স্যান্টনার/সাউদির নৈপুণ্যে রান আউট হন রুবেল হোসেন। আর ইনিংসের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাউদির বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে আউট হন সাব্বির। ১১০ বল খেলে ১২টা চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো তার ইনিংসটি ১০২ রানের। বাংলাদেশ হারে ৮৮ রানে।