খেলা ডেস্ক
১ম ওয়ানডে, নেপিয়ার
বাংলাদেশ ২৩২ অল-আউট, ৪৮.৫ ওভার (মিঠুন ৬২, সাইফ ৪১, সৌম্য ৩০, বোল্ট ৩/৪০, স্যান্টনার ৩/৪৫, ফার্গুসন ২/৪৪)
নিউজিল্যান্ড ২৩৩/২, ৪৪.৩ ওভার (গাপটিল ১১৭*, নিকোলস ৫৩, টেইলর ৪৫*, মাহমুদউল্লাহ ১/২৭, মিরাজ ১/৪২)
নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী
নিউজিল্যান্ডের চারজন ফ্রন্টলাইন পেসারের সঙ্গে একজন স্পিনার, আরেকজন পেস অলরাউন্ডারের বিপরীতে বাংলাদেশ খেললো একজন বোলার কম নিয়ে- দুই স্পেশালিস্ট পেসার, একজন পেস অলরাউন্ডার, আরেকজন স্পিনার। বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানো বাংলাদেশ পঞ্চম বোলার হিসেবে আনলো তিনজনকে। তবে তার আগেই ব্যাটসম্যানদের তৈরি করে রাখা গর্তে পড়ে কূল পেলো না বাংলাদেশের বোলিং। বোলারদের পর মার্টিন গাপটিলের সেঞ্চুরির সহায়তায় সহজ জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশে বসন্তের প্রথম দিনটা ক্রিকেট দলের জন্য কেটেছে আক্ষেপেই।
নেপিয়ারের উইকেটকে দুই অধিনায়কই মনে করেছিলেন ব্যাটিং সহায়ক, টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সুযোগটা নিলেন মাশরাফি। শুরুতে ট্রেন্ট বোল্ট ও ম্যাট হেনরির সুইং, লকি ফার্গুসনের গতি, আর তারপর মিচেল স্যান্টনারের কৌশলি বোলিংয়ে জুটি বড় করতে পারেনি বাংলাদেশ, ৮ম উইকেটে মিঠুন ও সাইফউদ্দিনের ৮৪ রানেরটি ছাড়া। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের অতি-আক্রমণাত্মক মানসিকতাও। মিঠুন শুধু সঙ্গী খুঁজে ফিরেছেন, সাইফের আগে ছাড়া যে সঙ্গ তাকে কেউই সেভাবে দিতে পারেননি।
৯৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়েও মোহাম্মদ মিঠুনের ৬২, সাইফউদ্দিনের ৪১ রানের ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ গিয়েছিল ২৩২ রান পর্যন্ত। সে সম্বল নিয়ে বাংলাদেশের দ্রুত উইকেটের প্রয়োজনীয়তা মেটেনি, ওপেনিংয়েই গাপটিল-নিকোলসের সেঞ্চুরি জুটিতে নিউজিল্যান্ড পেয়ে গেছে সহজ জয়ের ভিত। শুরুটা বাংলাদেশের বিপরীত ছিল নিউজিল্যান্ডের, প্রথম ১০ ওভারে ৪২ রান উঠলেও তারা হারায়নি কোনও উইকেট।
সে জুটি গেছে ১০৩ রান পর্যন্ত। ২৩ ইনিংস পর ওপেনিংয়ে সেঞ্চুরি জুটির দেখা পেলো নিউজিল্যান্ড, ফিফটি পেরুনো জুটিও এলো ১৬ ইনিংস পর। মাঝে সর্বোচ্চ ছিল ৩৪ রান। অবশ্য দুই ওপেনারকেই একাধিকবার আউটের সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। গাপটিল রান-আউট হতে পারতেন, সৌম্যর থ্রো ধরতে সাইফউদ্দিন ছিলেন ভুল জায়গায়। ৩৯ রানের মাথায় নিকোলস ও ৪৭ রানের মাথায় গাপটিলের ক্যাচ নিতে পারেননি মুশফিক। বাংলাদেশ ব্রেকথ্রু পেয়েছে মিরাজের বলে ব্যাট-প্যাড হয়ে নিকোলস বোল্ড হওয়ায়, ৫৩ রান করে।
ধীরে ধীরে এ ইনিংস গড়েছেন নিকোলস, স্কয়ার অফ দ্য উইকেটে ছিলেন দারুণ। মিরাজকে কাট করে চার মেরে ক্যারিয়ারের ৭ম ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৭২ বলে, সঙ্গে জানিয়ে রেখেছেন বিশ্বকাপের নিজের জায়গার জোরালো দাবিটাও। গাপটিল ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন ৫৭ বলে, আর ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ১০৩ বলে। ইন-ফ্রন্ট অফ স্কয়ারেই করেছেন বেশিরভাগ রান, সবচেয়ে বেশি ৩৯ রান করেছেন তার প্রিয় কাউ কর্নারে। চোটের কারণে মিস করেছিলেন ভারতের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ, নিজের প্রত্যাবর্তনটা দারুণই হলো এই ডানহাতির।
মাঝে উইলিয়ামসন হয়েছেন এলবিডব্লিউ, মাহমুদউল্লাহকে সুইপের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে। উইকেটটি বাংলাদেশ পেয়েছে রিভিউ নিয়ে। তবে রস টেইলর এসে ভুলিয়ে দিয়েছেন সে স্মৃতি, গাপটিলের সঙ্গে সিঙ্গেল বের করে আধিপত্য বজায় রেখে, চাপ ধরে রেখে।
ব্যাটিংয়েও বাংলাদেশ নিয়মিত উইকেট হারিয়ে বারবার চেষ্টা করেছে চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে।
ইনিংসের ৭ম বলে বোল্টের অফস্টাম্প লাইনে ফুললেংথ থেকে সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বলে ফ্লিক করতে গিয়ে আউটসাইড-এজড তামিম। শুরু থেকেই নড়বড়ে থাকা লিটনের রক্ষণের বাঁধ ভেঙে হেনরির বল ঢুকে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের রান ছিল ১৯।
রানের খাতা খোলার পর হেনরিকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে একটা চার মেরেছিলেন মুশফিক। তবে বোল্টের বাউন্সারে হেলমেটে আঘাত পাওয়ার পরই যেন মনযোগটা নড়ে গেল তার। এমন বলে কাট করতে গেলেন, যেটার লাইন বা লেংথ সে শটকে সমর্থন করে না। ফল- তার ব্যাট বলকে ডেকে এনেছে স্টাম্পে। ঠিক পরের বলেই ফিরেছেন সৌম্যও।
সৌম্যর ২২ বলে ৩০ রানের ইনিংসের শুরুটা যতটা দারুণ ছিল, শেষটা ছিল ততোটাই হতাশার- হেনরির শর্ট বলে খাড়া ওপরে তুলে ধরা পড়েছেন তার হাতেই। অথচ ইনিংসের ২য় ওভারে নেমেই বোল্টের শর্ট বলে পুল করে মেরেছিলেন চার। এরপর হেনরিকে কাভার ড্রাইভে, বোল্টকে পরপর দুই বলে চার ছিল লেগসাইডে। সবচেয়ে দারুণ ছিল হেনরির লেংথ বলটা দ্রুত পড়ে ফেলে মিডউইকেট দিয়ে ছয়ের মারটা। তার বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়ে ব্যর্থও হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। তবে যখনই মনে হচ্ছিল এটা সৌম্যর দিন হতে পারে, তখনই তার নড়বড়ে শট গড়বড় করে দিয়েছে সব।
মুশফিকের উইকেটের পরই নেমেছেন মিঠুন, ১ রানেই হতে পারতেন বোল্টের বলে এলবিডব্লিউ, বেঁচে গেছেন নিউজিল্যান্ডের রিভিউ না থাকায়। তবে এরপর থেকে দারুণ দৃঢ় ছিলেন তিনি, অপেক্ষা করে থেকেছেন আলগা বলের, খেলেছেন র্যাম্পের মতো শটও। অন্যান্যদের মতো খেলতে যাননি জোরের ওপর। হেনরির বলে সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেছেন। নিজের সর্বোচ্চ ইনিংস থেকে ১ রান দূরে থেমেছেন ফার্গুসনের গতির কাছে পরাস্ত হয়ে।
তার সঙ্গে ইনিংস পুনর্গঠনের কাজ শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ, ফার্গুসনের গতির কাছে হার মেনেছিলেন তিনিও। ১৫০ কিলোমিটার গতির অফস্টাম্পের বাইরের বলে শরীর থেকে দূরে ব্যাট চালিয়ে স্লিপে রস টেইলরের দ্বিতীয় দফার চেষ্টায় ধরা পড়েছেন ২৯ বলে ১৩ রান করে। শুরুতে বোল্ট-হেনরি করেছিলেন টানা ১২ ওভার, এরপর ডি গ্র্যান্ডহোম ও ফার্গুসন করেছেন টানা ১০ ওভার। স্যান্টনার এসেছিলেন ২৩তম ওভারে।
একটু খরুচে ছিলেন তিনি, তবে ভেঙেছেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি- মিঠুনের সঙ্গে সাব্বির, মিরাজ ও সাইফউদ্দিনের। স্যান্টনারকে সুইপ করতে গিয়ে সামনের বুট ক্রিজে পিছলে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন সাব্বির, ব্যাট ক্রিজে ফেরানোর আগেই স্টাম্প ভেঙেছেন ল্যাথাম। এর আগে ফার্গুসনকে ভাল ড্রাইভে দুই চার মেরেছিলেন তিনি। মিরাজের শুরুটাও দারুণ ছিল, নেমেই এক বল পর স্যান্টনারকে চার মারার পর স্লগ সুইপে ছিল ছয়। শেষ পর্যন্ত মিরাজের সঙ্গে দ্বৈরথ জিতেছেন স্যান্টনার, তার করা অফস্টাম্পের বাইরের বলে জোরের ওপর খেলতে গিয়ে লিডিং-এজড হয়ে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েছেন মিরাজ। সাইফউদ্দিনও আউট হয়েছেন প্রায় একইভাবে, পার্থক্য শুধু তার শটটা সোজা গেছে শর্ট মিডউইকেটের হাতে।
আর শুরুর মতো শেষটাও করেছেন বোল্ট, মোস্তাফিজকে বোল্ড করে।
এরপর তো নেপিয়ারে বাংলাদেশের শেষটা হয়েছে একরাশ অসহায়ত্বে!