খেলা ডেস্ক
ডিসেম্বরে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলর ড্রয়ের পর ‘রেড ডেভিল’দের ইউরোপ যাত্রার সমাপ্তি দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। হোসে মরিনহোর অধীনে ইউনাইটেড যেন জিততেই ভুলে গেছে, অন্যদিকে ফ্রেঞ্চ লিগের মত গ্রুপপর্বেও শীর্ষস্থানে থেকে শেষ ষোলতে এসেছিল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। কাকতালীয়ভাবে ড্রয়ের মাত্র দুই দিন পরই বরখাস্ত হন মরিনহো, তার স্থলাভিষিক্ত হলেন ইউনাইটেড কিংবদন্তী ওলে গানার সোলশায়ার। দুই মাসেই ইউনাইটেডের রীতিমত খোলনলচেই বদলে দিয়েছেন সোলশায়ার। তার অধীনে খেলা ১১ ম্যাচের ১০টিই জিতেছে ইউনাইটেড, অন্যটি হয়েছে ড্র। প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের ৪-এ উঠে এসেছে পল পগবারা। আর নেইমার, এডিনসন কাভানিদের হারিয়ে পিএসজি হয়ে পড়েছে বিবর্ণ। দুই মাসের আগের হিসেব যেন পালটে গেছে পুরো ৩৬০ ডিগ্রি। পরের রাউন্ডে যেতে তাই পিএসজি নয়, এখন ফেভারিট ইউনাইটেডই।
ইউনাইটেডকে যেন জাদুটোনাই করেছেন তিনি। ১১ ম্যাচে এখনও হারের মুখ দেখেননি, জিতেছেন ১০টিতেই। মরিনহোর অধীনে নিজেদের হারিয়ে খোঁজা পগবা, অ্যান্থনি মার্শিয়াল, মার্কাস রাশফোর্ডরা এখন গোল করছেন প্রতি ম্যাচেই। পুরো দলকে এক সুতোয় গেঁথে সোলশায়ার দেখাচ্ছেন দারুণ সাফল্যের স্বপ্ন। উড়তে থাকা ‘রেড ডেভিল’রা প্রতিপক্ষকে রীতিমত দুমড়ে মুচড়ে এগুচ্ছে সামনের দিকে। কিন্তু শেষ হাসি হাসতে এখনও পাড়ি দিতে হবে অনেক দূরের পথ। শুরুর সাফল্যে তাই গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন না ওলে, ‘হ্যাঁ এটা ঠিক যে আমরা দারুণ ফর্মে আছি। টনি (মার্শিয়াল), মার্কাসরা (রাশফোর্ড) গোল পাচ্ছে, রক্ষণে ক্রিসরাও (স্মলিং) নিজেদের সেরাটা দিচ্ছে। দারুণ ছন্দে আছে পুরো দল। আত্মবিশ্বাসটাও পর্বতসম। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এখনও আমরা কিছুই অর্জন করতে পারিনি। আত্মবিশ্বাসী হওয়া এবং আত্মতুষ্টিতে ভোগা আলাদা জিনিস। আমরা কেউই আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। প্যারিদ দলটা দারুণ। নেইমার, কাভানি ছাড়াও অসাধারণ কিছু ফুটবলার আছে তাদের। কঠিন এক লড়াই-ই আশা করছি আমরা।’
নেইমার, কাভানি, কিলিয়ান এম্বাপ্পে। নিজেদের দুর্ধর্ষ আক্রমণত্রয়ীতে সওয়ার হয়েই একের পর এক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে এগুচ্ছিল পিএসজি। ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন নেইমার, কাভানি। থাকছেন না রাইটব্যাক থমাস মুনিয়েরও। সংশয় আছে মার্কো ভেরাত্তির খেলা নিয়েও। সব মিলিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই পিএসজি কোচ থমাস টুখেল, ‘ইনজুরি গুলো বেশ খারাপ সময়েই হয়েছে নেইমার এবং কাভানির। আক্রমণভাগের দুজন মাঠের বাইরে ছিটকে গেলে যেকোনও দলের জন্যই নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। থমাস (মুনিয়ের) না থাকায় রক্ষণ নিয়েও বেশ ভাবতে হচ্ছে আমাদের। কিন্তু ইনজুরি অজুহাত দেওয়া ক্লাব আমরা নই। ইনজুরি আসলে ফুটবলেরই অংশ। যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তা নিয়ে ভাবতে চাচ্ছি না আমরা। বরং ইউনাইটেডের বিপক্ষে ওল্ড ট্রাফোর্ডে নিজেদের সেরাটা দেওয়াই মূল লক্ষ্য। ওলের (সোলশায়ার) অধীনে তারা এখনও অপরাজিত। দলে কে আছে, কে নেই- তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না আমরা। জয়ের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার মনোভাব নিয়েই ম্যানচেস্টার যাচ্ছি আমরা।’
সাম্প্রতিক ফর্মের মতই ইতিবাচক দিকই দেখা যাচ্ছে ইউনাইটেডের স্কোয়াডেও। ইনজুরি কাটিয়ে অনুশীলনে ফিরেছেন সেন্টার ব্যাক ভিক্টর লিন্ডেলফ। মার্কোস রোহো বাদে সবাই আছেন ফিট। তবে ইউনাইটেডের মত ইনজুরি ভাগ্য একেবারেই সুপ্রসন্ন নয় পিএসজির। নেইমার, কাভানি, মুনিয়েররা ছিটকে গেছেন আগেই, সংশয় আছে ভেরাত্তিকে নিয়েও।
সম্ভাব্য মূল একাদশ
ম্যান ইউনাইটেড (৪-৩-৩): ডি গেয়া; দালোত, স্মলিং, বায়ি, ইয়ং; পগবা, মাতিচ, হেরেরা; লিনগার্ড, রাশফোর্ড, মার্শিয়াল
পিএসজি (৪-৩-৩): বুফন; আলভেজ, মার্কিনহোস, সিলভা, কুরযাওয়া; ভেরাত্তি, পারেদেস, দিয়াবি; ডি মারিয়া, এম্বাপ্পে, ড্র্যাক্সলার