বিদেশ ডেস্ক
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো চীনে নিযুক্ত তাঁর দেশের রাষ্ট্রদূত জন ম্যাককালামকে বরখাস্ত করেছেন। চীনা টেলিকম প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুর প্রত্যর্পণ নিয়ে মন্তব্যের জের ধরে এই বরখাস্তের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বরখাস্তের কোনো কারণ জানাননি ট্রুডো।
আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তিনি জন ম্যাককালামকে পদ ছাড়তে বলেছেন। তবে বরখাস্ত করার কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি বিবৃতিতে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে মেং ওয়ানঝুকে কানাডায় আটক করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় চীন। এ নিয়ে কানাডা ও চীনের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে গত বছরের ১ ডিসেম্বর ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তার করে কানাডা। হংকং থেকে মেক্সিকো যাওয়ার পথে ভাঙ্কুভার বিমানবন্দরে ওয়ানঝুর যাত্রাবিরতি ছিল। সেখানেই গ্রেপ্তার হন তিনি।
গ্রেপ্তারের পর গত মাসেই জামিনে মুক্তি পান ওয়ানঝু। কানাডায় কড়া নজরদারির মধ্যে আছেন তিনি।
আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ওয়ানঝুকে ফের ভাঙ্কুভারের আদালতে তোলা হবে।
ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে। তবে ওয়ানঝু ও তাঁর প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
সবশেষ ২১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত ডেভিড ম্যাকনাফটন জানান, যুক্তরাষ্ট্র কানাডাকে বলেছে যে, তারা মেং ওয়ানঝুকে প্রত্যর্পণে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাবে। তবে এই অনুরোধ কবে জানানো হবে, তা উল্লেখ করেননি রাষ্ট্রদূত। মেং ওয়ানঝুকে প্রত্যর্পণে কানাডার কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানোর শেষ সময় ৩০ জানুয়ারি। ওয়ানঝুকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হলে কানাডা ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ীই ওয়ানঝুকে কানাডায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে প্রত্যর্পণে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানালে কানাডার আদালতকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।
রাষ্ট্রদূতকে বরখাস্ত করা নিয়ে এক বিবৃতিতে জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, চীনে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূতকে তিনি পদত্যাগ করতে বলেছিলেন। রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগপত্র তিনি গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, বিশিষ্ট এই কূটনীতিক কানাডার জনগণকে সম্মানের সঙ্গে সেবা করেছেন এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ে কর্মরত ছিলেন। এ সেবার কারণে ম্যাককালাম ও তাঁর পরিবারকে ধন্যবাদ।
গত মঙ্গলবার ম্যাককালাম প্রকাশ্যে বলেন, ওয়ানঝুকে প্রত্যর্পণে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে। এর পরদিন তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, তিনি তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট করতে পারেননি। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় তিনি দুঃখিত। এরপর গত শুক্রবার তিনি আবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যর্পণের অনুরোধ তুলে নিলে তা ‘কানাডার জন্য অনেক ভালো’ হতো।
ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তারের জের ধরে ইতিমধ্যে চীন কানাডার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। চীনে গ্রেপ্তার কানাডার এক নাগরিকের ১৫ বছরের কারাদণ্ডের রায় পরিবর্তন করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরও দুজন কানাডীয়কে গ্রেপ্তার করেছে চীন। চীনের কয়েকজন বিশ্লেষকের মতে, এটা কানাডাকে চীনের পাল্টা জবাব। যদিও চীনের কর্মকর্তারা তা অস্বীকার করেছে।