বিদেশ ডেস্ক
ব্রেক্সিট সংক্রান্ত নতুন পরিকল্পনা (প্ল্যান বি) সফল করতে দলের ভেতরে বাইরে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। সংশোধিত সেই পরিকল্পনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে এখনও তেমন কিছু জানা যায়নি। মে এরইমধ্যে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত মৌলিক দুই প্রশ্ন ‘দ্বিতীয় গণভোট’ ও ‘সংঘভিত্তিক বাণিজ্য’র ব্যাপারে রাজি হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তবে সংশোধিত নতুন ব্রেক্সিট পরিকল্পনায় সমর্থন পেতে এখন অন্য বিষয়ে ছাড় দিতে সম্মত তিনি। ২১ জানুয়ারির মধ্যে সংশোধিত খসড়া হাজির করা হবে। নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের নেতা আন্দ্রিয়া লিডসোম ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, আগামী ২৯ জানুয়ারি এ নিয়ে ভোটাভুটি হবে। নতুন পরিকল্পনায় সমর্থন পেতে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে ‘সম্ভাব্য অন্যান্য বিকল্প’ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন মে।
থেরেসা মে
এ বছর ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট সম্পন্ন হওয়ার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। পরবর্তী সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে গত নভেম্বরে জোটটির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) সেই ব্রেক্সিট খসড়া পরিকল্পনা পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর এখন চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খসড়া চুক্তি নিয়ে পরাজিত হলেও বুধবার (১৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত আস্থা ভোটে কোনরকমে (মাত্র ১৯ ভোটে) টিকে যান তিনি। এতে ‘সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্রেক্সিট পরিকল্পনা’ নিয়ে ইউরোপকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ আসে তার হাতে। আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টারত মে ২১ জানুয়ারির মধ্যে পার্লামেন্টে সেই পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন।
বুধবারের (১৬ জানুয়ারি) আস্থা ভোটের দিনের একটা পর্যায় পর্যন্ত মে অনড় ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে গত বছর নভেম্বরে স্বাক্ষরিত তার পুরনো ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে। তবে এখন সম্ভাব্য বিকল্প পথ নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। ‘প্ল্যান বি’ খ্যাত সম্ভাব্য নতুন ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়ার বিষয়ে এরইমধ্যে লিবারেল ডেমোক্র্যাট, এসএনপি ও প্লাইড ক্যামরি পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) নিজ দলের চুক্তিহীন ব্রেক্সিটপন্থী টোরি সদস্য ও ডিইউপির এমপিদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে তার। নতুন পরিকল্পনায় মে কোন কোন বিষয়ে ছাড় দিতে সম্মত, কিংবা আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় কী কী, তা এখনও কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। তবে তার মুখপাত্র দ্বিতীয় গণভোট ও সংঘভিত্তিক বাণিজ্যনীতির প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন। এই দুই বিষয়কে ব্রেক্সিটের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করেন মে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) মে’র মুখপাত্র বলেন, ব্রিটিশ জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এতোগুলো মাস চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি (থেরেসা)। তিনি বিশ্বাস করেন, গণভোটের রায়কে সম্মান দেওয়া জরুরি। এ নীতিগুলোতে তিনি অনড় রয়েছেন।’ ব্রেক্সিট চুক্তির ক্ষেত্রে লেবার পার্টি ও নরওয়ে ধাঁচের নমনীয় বেক্সিট সমর্থকদের মূল দাবি হলো যুক্তরাজ্যকে একটি শুল্ক সংঘের আওতায় (কাস্টমস ইউনিয়ন) রাখা। থেরেসার মুখপাত্র জানিয়ে দিয়েছেন তা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘গণভোটের ফলাফলকে সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি স্বাধীন বাণিজ্য নীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।’ শুল্ক সংঘের সদস্যরা আলাদা করে নিজস্ব বাণিজ্য চুক্তি রাখতে পারে না। সে প্রসঙ্গ টেনে থেরেসা মে’র মুখপাত্র বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে ফিরে পেতে হলে যুক্তরাজ্যের সারা বিশ্বে বাণিজ্য এবং স্বতন্ত্র বাণিজ্য চুক্তি করার সক্ষমতা থাকা জরুরি।’
ব্রেক্সিটের প্রতীকী ছবি
নতুন পরিকল্পনার সংশোধিত বিষয়বস্তু নিয়ে সুস্পষ্ট কিছু না জানা গেলেও এরইমধ্যে এ সংক্রান্ত ভোটাভুটির তারিখ ঘোষিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) হাউস অব কমন্সের নেতা আন্দ্রিয়া লিডসোম জানিয়েছেন, থেরেসা মে সোমবার (২১ জানুয়ারি) প্রস্তাব উত্থাপন করবেন এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা জানিয়ে বক্তব্য রাখবেন। পার্লামেন্টে লিডসোম বলেন, ‘এ ব্যাপারে হাউসের ঐক্যমত্য নিশ্চিতে নিয়ম অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার ওই প্রস্তাবের ওপর দিনব্যাপী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে।’
নতুন ব্রেক্সিট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সংকট সমাধান করতে চাইলে তা নির্ধারিত ২৯ মার্চের মধ্যে সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আইন ‘আর্টিকেল ৫০’-এর সংযোজনী (এক্সটেনশন) এনে তা বিলম্বিত করতে হবে। বিলম্বিত ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সফল করতে প্রথমত সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ইইউ’র কাছে আবেদন জানাতে হবে। ইউরোপীয় কাউন্সিলে আয়োজিত ভোটাভুটিতে সবক’টি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের সমর্থন পেলেই কেবল ব্রেক্সিট বিলম্বিত করা যাবে। দ্বিতীয়ত,ইইউ উইথড্রয়াল অ্যাক্টে ‘বিচ্ছিন্ন হওয়ার দিন’-এর সংজ্ঞা পরিবর্তনের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে পারবেন ব্রিটিশ এমপিরা। তবে নতুন আলোচনায় অংশ নিতে ইইউ এর সম্মতি আবশ্যক। পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে এখন বিতর্ক করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। তারা নতুন আলোচনায় রাজি না হলে যুক্তরাজ্যকে বিকল্প পথ ভাবতে হবে। তবে তার আগেই পার্লামেন্টে থেরেসার বিকল্প প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে হাঁটতে হবে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের (নো ডিল ব্রেক্সিট) পথে।
পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট বিরোধী অংশ খুব সহজে তা হতে দিতে চান না। নো ডিল ব্রেক্সিটের সম্ভাব্য প্রাপ্তি নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের অনেকের মধ্যে হতাশা রয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি পার্লামেন্টে উত্থাপিত সরকারের একটি কর বিল আটকে দিয়েছে তারা। বিলটি পাস না হওয়ার কারণে নো ডিল ব্রেক্সিটের পর নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে কর বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়বে। এ পদক্ষেপকে প্রতীকী হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ,টাকা তুলতে অন্য পথ খুঁজে নিতে পারবে সরকার। তবে বিলটি পাস না করার মধ্য দিয়ে এ ইঙ্গিত মিলেছে যে,এমপিরা নো ডিল ব্রেক্সিটকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবেন।