২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:৫৩

নতুন মন্ত্রিসভায় নেই মহাজোটের কেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নতুন মন্ত্রিসভায় নাম এসেছে ৪৭ সদস্যের। এর মধ্যে নতুন মুখ ৩১টি। এর ২৭ জনই প্রথমবার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জন মন্ত্রী, ১৫ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। আর উপমন্ত্রীর তিনজনই প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন।

তবে নতুন এই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দলগুলোর কোনো নেতাই স্থান পাননি।

জাসদের হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় পার্টি-জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে রাখা হয়নি নতুন মন্ত্রিসভায়। বিগত সরকারগুলোয় প্রতিবারই সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করলেও এবার শুধু নিজের দল আওয়ামী লীগের নেতাদের সরকার পরিচালনায় রাখছেন শেখ হাসিনা।

রোববার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নতুন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করছে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা হচ্ছেন চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সে সময় জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও জাসদের আসম আবদুর রবকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে সরকার গঠন করে তাকে ‘জাতীয় ঐকমত্যের’ সরকার বলেন শেখ হাসিনা।

এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে এই পর্বে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের মন্ত্রিসভায়ও জিএম কাদেরসহ জাতীয় পার্টির নেতাদের পাশাপাশি সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রী করা হয়েছিল। ওই সরকারের শেষদিকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে।

এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার টানা দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারে ইনুর সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়েছিল, পাশাপাশি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির একজন মন্ত্রী ও দু’জন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের পরদিনই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বলেছিলেন, তাদের দলের কোনো সদস্য এবার আর মন্ত্রিসভায় থাকছেন না।

সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবে জাতীয় পার্টি। সে কারণে নতুন মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির নেতাদের বাদ পড়াটা অনেকটা অনুমিতই ছিল। তবে ইনু, মেনন ও মঞ্জুর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়াটা চমক হিসেবেই এসেছে, যেমনটি ঘটেছে মন্ত্রিসভায় পুরনোদের অধিকাংশের বদলে নতুন মুখ আসায়।

তালিকা পর্যালোচনা করে আরও দেখা গেছে, নতুনদের জায়গা দিতে বাদ পড়েছেন বর্তমান মন্ত্রিসভার অধিকাংশ হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

বিগত মন্ত্রিসভার ২৫ মন্ত্রী, ৯ প্রতিমন্ত্রী ও ২ উপমন্ত্রী এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। বিদায়ী সরকারে না থাকলেও আগে মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন এমন তিনজনকে শেখ হাসিনা ফিরিয়ে এনেছেন পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে। এছাড়া টেকনোক্র্যাট কোটায় দু’জনকে মন্ত্রী এবং একজনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।

এদিকে মন্ত্রিসভায় যে এত বড় পরিবর্তন হবে তা আগে থেকে আঁচ করতে পারেনি কেউ। যারা বাদ পড়েছেন তাদের অনেকেই প্রস্তুত ছিলেন না।

টেকনোক্র্যাট কোটায় এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন ৩ জন। তারা হলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। এর মধ্যে প্রথম ২ জন বিদায়ী সরকারের টেকনোক্র্যাট কোটায় থাকা ও সম্প্রতি পদত্যাগ করা চারজন মন্ত্রীর ২ জন।

শেষ পর্যন্ত বাদের তালিকাতেই থাকলেন ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।

প্রকাশ :জানুয়ারি ৭, ২০১৯ ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ