একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর কোনো আঘাত আসলে ভয়াবহ পরিণতি হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।
দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার পুলিশকে মানুষের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে। পুলিশকে ব্যবহার করে যেভাবে হয়রানি, গ্রেফতার করা হচ্ছে তা সংবিধানপরিপন্থী। তফসিল ঘোষণার পরও পুলিশ যেভাবে গ্রেফতার চালাচ্ছে সেটি লজ্জাকর। এর জন্য ক্ষমতাসীনদের শাস্তি পেতে হবে। এখানে কোনোভাবে পার পেলেও পরকালে পার পাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে আয়োজিত ‘মানবাধিকার, সুশাসন ও ভোটাধিকার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।
৭০তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ও বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন (বিএইচআরএফ)।
নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে ড. কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ রাস্তায় রাস্তায় হয়রানি করছে। বিনা কারণে গ্রেফতার করছে। কোনো নির্বাচনের আগে এমন অবস্থা দেখিনি। সরকারকে বলব, পুলিশকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন।’
এমন শাসন আগে দেখেননি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটিকে কেউ সুশাসন বললে বলব, মিথ্যা বলছেন। কেউ যদি বলেন দেশে সুশাসন আছে তাহলে বলব, আপনি মিথ্যুক।’
সরকারের উদ্দেশে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে থাকলে, পুলিশকে অপব্যবহার করতে থাকলে আপনাদের শাস্তি হবে, এটি মনে রাখবেন। আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অমান্য করে দেশ চলতে পারে না।’
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি দেখতে হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এই যে রাস্তায় পুলিশ ধরছে আমি অবাক হচ্ছি এরা কোন আইনের বলে মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা পুলিশের নেই।’
সরকারের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনারা কোন ক্ষমতার বলে শাসন করছেন সেটা আমরা পরে বুঝব। এখন যেটা করছেন একদমই সংবিধানপরিপন্থী কাজ করছেন। আজকে আপনাকে সাহায্য করার জন্য বলে দিচ্ছি, এখনই অবিলম্বে পুলিশকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন।
তিনি বলেন, এ ধরনের শাসন আমি কখনো দেখিনি। এটাকে যদি সুশাসন বলা হয় তাহলে মিথ্যা বলা হবে। আজকে কেউ যদি দাবি করে এদেশে সুশাসন আছে তাহলে আমি বলব সে মিথ্যুক। কী বলব এসব দেখতে হচ্ছে শুনতে হচ্ছে।
তিনি সরকারকে সাহস থাকলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে নিতে বলেন। উচিত কথা বলছি, ধরে নিয়ে যান আমাকে। আপনার পুলিশের সামনে আমি এ কথা বলছি। খুব সাহসী আপনারা ধরেন আমাকে। আশ্চর্য স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে এসব দেখতে হচ্ছে।
ক্ষমতা থাকলে মানবাধিকারের কথা মানতে হবে না, যদি করা হয় তাহলে তা ভুল ধারণা বলে উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, ‘পুলিশকে দিয়ে এভাবে অপব্যবহার করতে থাকেন, বিশ্বাস করেন আমার কি হয় না হয় সেটা না, আপনাদের বিচার হবে, শাস্তি হবে। এখানে যদি কোনো কারণে পার পেয়ে যান, পরকালে আপনারা পার পাবেন না, ইনশাআল্লাহ। সেটা মনে রাখবেন।’
নির্বাচনের নামে প্রহসনের চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে ড. কামাল বলেন, তথাকথিত নির্বাচনে আপনারা যদি ৩০০ সিট চান, তাহলে বলেন আমরা দিয়ে দেই! আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকবেন এটা তো বলেই যাচ্ছেন। এভাবে চাওয়ার থেকে আমাদের কাছে বলে নিয়ে যান। বলেন যে, আরও পাঁচ বছর থাকি, আপনারা হাত তুলে মেনে নেন। আমি বলব সবাই মেনে নিয়েছে।
তিনি বলেন, এভাবে নির্বাচনের নামে প্রহসনের মধ্য গিয়ে ৩০০ লোককে নির্বাচিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য তো পাঁচ বছর থাকা? এই পাঁচ বছরের ব্যাপারে তো আমি এখনই হাত তুলে বলে দিতে পারি। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তো বলেছেনই আরও পাঁচ বছর থাকতে চান। আমার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে চাই। এ পাঁচ বছরের পরে আরও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে, তখন আমি বলব আরও পাঁচ বছর থাকেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত সংবিধান দেখে বুঝার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কামাল বলেন, ‘সংবিধান শ্রদ্ধার সঙ্গে মানার চেষ্টা করেন। দেশ এভাবে চলতে পারে না। সংবিধান লঙ্ঘন করলে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করা হয় না। স্বাধীনতার ওপর আঘাত করা হয়। এটা থেকে বিরত থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভোটের অধিকার সবাই ভোগ করুক। স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে তারা যেন ভোট দিতে পারেন। স্বাধীন দেশে যদি নাগরিকরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সেটি হবে স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এ আঘাত দেওয়া উচিত না। এ আঘাত দেশদ্রোহিতার শামিল। কেউ যদি মনে করে দেশদ্রোহিতা করে পার পাওয়া যায় তা ঠিক না। আজ হোক কাল হোক তার বিচার হবে।’
নির্বাচন কমিশনকে তার ‘গুরুদায়িত্ব’ পালনের আহ্বান জানিয়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন বলেন, ‘সব ক্ষমতা আপনাদের। জনগণের ভোটের অধিকার আপনাদের রক্ষা করতে হবে। এটা আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সরকার যদি কোনো সংবিধানপরিপন্থী কাজ করে এর থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করুন। সরকারকে আদেশ দেন- বলেন পুলিশ সরান।’
নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা দেশের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন আর আছে ১০ দিন। এই ১০ দিন দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনারা ক্ষমতা কাজে লাগান ইনশাআল্লাহ ভালো নির্বাচন হবে। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সামনে। আর এটা না করলে নির্বাচনের ওপর কোনো আঘাত দেওয়া হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।’
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশনের (বিএইচআরএফ) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজুমল আহছান কলিম উল্লাহসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি গোলাম রহমান ভূইয়া।