২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:৩৩

উন্নয়ন বনাম পরিবর্তন : কোন পথে জাতি!

এই সরকার রেখে উন্নয়ন নাকি এই সরকারের পরিবর্তন-৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই প্রশ্নে সারা দেশ এখন সরব। নৌকা প্রতীক উন্নয়নের আর ধানের শীষ প্রতীক এখন পরিবর্তনের সমার্থক। আমার সামনেই টেলিফোনে এক রাজনৈতিক সহকর্মী গ্রামে এক আত্মীয়কে প্রশ্ন করলেন, কার দিকে মানুষ? নৌকা নাকি ধানের শীষ? উত্তর এল উন্নয়ন আর পরিবর্তনের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। মানুষের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে এ দুয়ের মধ্যে।

ইতোমধ্যে টেলিভিশনের কোনো একটি চ্যানেলে দেখলাম, রাস্তায় রাস্তায় সাংবাদিক মানুষদের প্রশ্ন করছেন, আপনি উন্নয়ন নাকি পরিবর্তনের পক্ষে। অবাধে মত প্রকাশ করছে মানুষ। সেখানে উপস্থিত মানুষের মধ্যে ভোট হচ্ছে। কোথাও জিতছে উন্নয়ন আবার কোথাও পরিবর্তন। এই যখন নির্বাচনী মাঠের অবস্থা, তখন দুপক্ষের নেতারাও উন্নয়ন কিংবা পরিবর্তনের পক্ষে মানুষকে টানছেন।

মানুষ যখন অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে সুফল পেতে শুরু করেছে, তখন কোনো সাফল্য ও অর্জনের কথা না বলে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে নিরপেক্ষ দাবিদার সুশীল মহল নির্বাচন সামনে রেখে কেবল সমস্যার কথাগুলো বড় করে সামনে আনছে। সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা যে আমাদের আছে তা সবাই জানে। কিন্তু অর্জন ও সাফল্য বলা হচ্ছে না কেন? এ ক্ষেত্রে একদেশদর্শী হওয়া হচ্ছে কেন?

মার্কা প্রদান অনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার পর নির্বাচনী প্রচারণার প্রথমদিন জামায়াত-বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী মাঠের প্রধান নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজের নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ের মোহাম্মদপুর মাতৃগাঁওয়ে গণসংযোগকালে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘কারো কোনো উসকানিতে পা দেয়া যাবে না।

বিএনপির কোনো বন্দুক-পিস্তল নেই, শুধু রয়েছে ভোটের দিনে একটি ব্যালট পেপার। এই ভোটই আমাদের অস্ত্র। যা দিয়ে সরকার পরিবর্তন করা যেতে পারে। তাই সরকার পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনের দিন ধানের শীষে ভোট দিন।’ পরিবর্তন তিনি চাইছেন, ঠিক আছে, চাইতেই পারেন। তবে মির্জা ফখরুলের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলতেই হয়, এখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি তুলে নির্বাচনে যোগ দিয়েছেন, কিন্তু বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যোগ দিলেন না কেন? তখন বয়কট করে আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছিলেন কেন?

বলাই বাহুল্য এবারের চাইতে গতবার নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের জন্য বেশ অনুকূল। জামায়াত তখন নিবন্ধনহীন ছিল না। বিএনপি ছিল সংসদে। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা তখন টেলিফোনে বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী খালেদা জিয়াকে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড বিষয়ে যদি কোনো সমস্যা থাকে তবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় পরও সংসদে আছে এমন সব দলের সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আহ্বানও প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। সবই অসৌজন্যমূলকভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

এখন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বলা হচ্ছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। থাকবে কীভাবে? নিজেরাই তো নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছেন। পর পর দুবার গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছেন অবৈধ শক্তিকে ক্ষমতায় আনার হীন উদ্দেশ্যে। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে চেয়েছিলেন। ব্যর্থ হয়েছিলেন।

এবারে বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এই অবস্থায় প্রশ্ন হলো, এখন সেই সব আগুন-সন্ত্রাসী নেতাদের যদি নির্বাচনে প্রার্থী দেন, ওই সব ক্যাডার-সন্ত্রাসীরা যদি নির্বাচনী প্রচারের নামে প্রকাশ্যে বের হয়ে আসে, তবে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করবে না কি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে?

‘বাংলাভাইদের’ সহযোগীদেরও তো মনোনয়ন দিয়েছেন! যাদের দলের নিবন্ধন আইন কেড়ে নিয়েছে, সেই সব মানবতাবিরোধী অপরাধীদেরও দিয়েছেন নিজেদের মার্কা। আর চাইছেন গণতন্ত্র আর আইনের শাসন নামে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। যারা সন্ত্রাসীদের হুকুমদাতা, যারা প্রত্যক্ষভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অপরাধী, তাদের ক্ষমা করে দিতে চাইছেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অজুহাতে, এটা কেমন কথা!

সর্বোপরি আপনার বক্তব্যের ব্যাপারে প্রশ্ন হলো, গতবার অনুকূল পরিস্থিতিতেও কার উসকানিতে পা দিয়ে নির্বাচন বয়কট করেছিলেন? সেই সময় পাকিস্তান সংসদের প্রকাশ্য বিবৃতিতে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ বাধানোর উসকানি দিয়েছিল। তাদের কথায় কি!

আর গতবার পেট্রলবোমা-পিস্তল-বন্দুক প্রভৃতি পেয়েছিলেন কোথা থেকে, যা ব্যবহার করেছিলেন নিরীহ মানুষ আর পুলিশের বিরুদ্ধে! এখন সাধু সাজা হচ্ছে! বলছেন ‘বিএনপির কোনো বন্দুক-পিস্তল নেই।’ তখন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি বাদ দিয়ে ব্যালটের বিপরীতে বোমা পেয়েছিলেন কোথা থেকে! কেন সেসব তুলে দিয়েছিলেন ক্যাডার-সন্ত্রাসীদের হাতে!

এখন আপনি একদিকে কাঁদছেন অন্যদিকে নীতিবাক্য আওড়াচ্ছেন। পাঁচ ও চার বছর আগে কোথায় ছিল আপনার সেই মধুর নীতিবাক্য! তাই লোক ভোলানো কলের গানের মতো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটি না বলে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ান। আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিন। পূর্বের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। ব্যালটের মাধ্যমেই ঠিক হোক, কি চায় দেশবাসী- পরিবর্তন নাকি উন্নয়ন?

প্রসঙ্গত উন্নয়ন নাকি পরিবর্তন- এই প্রশ্নটি সামনে রেখে একই দিনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নৌকাই দিবে উন্নয়ন।’ তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যদি দেশের উন্নয়নের গতি আরো এগিয়ে নিতে চান, দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, যদি সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত দেশ চান, তা হলে আরো একটিবার দেশ সেবার সুযোগ দেন। একমাত্র নৌকাই দেবে উন্নয়ন, গতিশীলতা আর মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। নৌকা না থাকলে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।’ কথাগুলো যে সত্য তা প্রমাণিত। দেশ যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিকে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছিল, তা ২০০১-০৬ বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের দিকে দৃষ্টি ফেরালেই সুস্পষ্ট হবে।

২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিশেষভাবে নিরীহ ভোটার ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার সন্ত্রাসীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ‘এথেনিক ক্লিনজিং’ ছিল উদ্দেশ্য। গড়ে তুলেছিল ক্ষমতার প্যারালাল কেন্দ্র দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সূতিকাগার হাওয়া ভবন আর রাতের কারবারের জন্য খোয়াব ভবন।

পরেশ বড়ৃয়া-রাজখোর গংদের দেশের মাটি ব্যবহার করতে দিয়ে আর সেই সঙ্গে চোরাচালানকৃত দশ ট্রাক অস্ত্র ভারতের সেভেন সিস্টারের বিদ্রোহীদের কাছে পাচার করতে গিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বকে বিরাট বিপদ ও হুমকির মধ্যে অপনারা ফেলে দিয়েছিলেন। ‘বাংলাভাইরা মিডিয়ার সৃষ্টি’ বলে তাদের উগ্রজঙ্গি কার্যকলাপ আড়াল করতে চেয়েছিলেন।

২১ আগস্ট ঢাকায় গ্রেনেড মেরে এবং এর আগে কোটালি পাড়ার জনসভার স্থানে বোমা পুঁতে রেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর জীবন সংহারের চেষ্টা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ী গৌরবান্বিত দেশের ললাট ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’-এর কলঙ্কের কালিমায় কলঙ্কিত হয়েছিল।

কেবল কি তাই! অর্থনীতির দিক থেকেও দেশকে সর্বনাশের অতলে নিক্ষিপ্ত করেছিলেন আপনারা। কথায় বলে, বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলেই পরিচয়। বর্তমানে প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন সূচকে দেশ রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে। জাতিসংঘে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল, লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন অর্জনে ‘চমকপ্রদ সাফল্য’ দেখানোর ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময়, রোল মডেল।

বিদ্যুৎ হচ্ছে যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রার চালিকাশক্তি। বিএনপি-জামায়াত জোট পাঁচ বছরে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন করতে পারেনি। ‘খাম্বা’ শব্দটি হয়ে উঠেছিল বিএনপির লুটপাট জর্জরিত বিদ্যুৎ-ব্যর্থতার সমার্থক। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হয়েছে ১৭,৯২৩ মেগাওয়াট, ২০০৫ সালে ছিল ৩,৭৮২ মেগাওয়াট। সঙ্গে রয়েছে ভারত থেকে আমদানিকৃত ১,১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

দশ বছরে যদি বিদ্যুৎ আশাতীতভাবে না বাড়তোএবং বাড়ার দিক থেকে যদি তা বিশ্বে উদাহরণস্থানীয় না হতো তবে কি হতো, তা কি কল্পনা করা যায়। ক্ষুদ্র এ কলামে বেশি পরিসংখ্যান দেয়ার সুযোগ নেই। বিএনপি-জামায়াত আমলে মাথাপিছু আয় ছিল ৪২৭ ডলার আর এখন ১,৭৫১ ডলার। জাতীয় সঞ্চয় ছিল জিডিপির ২৭.৭০ শতাংশ, এখন ২৯ শতাংশ। দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্যের শতকরা হার ছিল যথাক্রমে ৪১.৫১ ও ২৫.১০ শতাংশ আর এখন ২২ ও ১১.৩০ শতাংশ।

মানুষ যখন অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে সুফল পেতে শুরু করেছে, তখন কোনো সাফল্য ও অর্জনের কথা না বলে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে নিরপেক্ষ দাবিদার সুশীল মহল নির্বাচন সামনে রেখে কেবল সমস্যার কথাগুলো বড় করে সামনে আনছে। সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা যে আমাদের আছে তা সবাই জানে। কিন্তু অর্জন ও সাফল্য বলা হচ্ছে না কেন? এ ক্ষেত্রে একদেশদর্শী হওয়া হচ্ছে কেন?

বলাই বাহুল্য, এই বিশেষ মহলই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধুর আমলের সফলতা ও অর্জনগুলো সামনে না এনে ভয়াবহ বন্যা এবং খাদ্য জাহাজ নিয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাসন্তীকে জাল পরিয়ে ছবি তুলে ও ছাপিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত ও হতাশ করেছিল। কিন্তু এখন আর যুদ্ধবিধ্বস্ত নয় দেশ, কেউ বলতে পারবে না দেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’! নিজ অর্থায়নে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ পরিবর্তনের আওয়াজ তুলেছিল, জনগণকে উপহার দিয়েছিল ‘দিন বদলের সনদ’। তখন সর্বনাশের পথে ধাবিত হচ্ছিল দেশ আর তাই বদল বা পরিবর্তনের স্লোগান দেশবাসী লুফে নিয়েছিল। এখন দেশ আছে উন্নয়নের মহাসড়কে। এখন মানুষ পরিবর্তন চাইবে কোন যুক্তিতে! উন্নয়নের পরিবর্তন মানে তো অনুন্নয়ন, অন্ধকারের দিকে যাত্রা। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়।

যে জাতি পঁচাত্তর-পরবর্তী সেনাকর্তাদের শাসন আর ২০০১-০৬ এর বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনের তিক্ত ও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, সেই জাতি আবারো ওই ফাঁদে পড়বে, জামায়াত-বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টকে ক্ষমতায় বসাবে, এমন ভাবনা আর বামন হয়ে আকাশের চাঁদ ধরা একই কথা।

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বের যা অবস্থা, তাতে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা দেখাতে পারছে না। পলাতক ও সর্বমহলে ঘৃণিত হাওয়া ও খোয়াব ভবন খ্যাত তারেক রহমান হয়ে গেছেন কার্যত প্রজেকটেক্ট প্রধানমন্ত্রী। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, বিএনপির দুই দিকে দুই জোট, ডানে যুদ্ধাপরাধী দল আর বামে জনহীন নেতাসর্বস্ব তিন দল।

একদিকে মওদুদী ও গোলাম আজম-নিজামীর ইসলামী শাসন আর অন্যদিকে রবের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র! বিএনপির দুদিকে পড়েছে দুটো মুখোশ! এক মুখোশ দিয়ে যুদ্ধপরাধীদের রক্ষা করছে, সাংসদ বানাতে তৎপর থাকছে আর আরেক মুখোশ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান রাখবে বলছে। এমন ধরনের ককটেল বা জগাখিচুড়িতে দিয়ে আর যা কিছু হোক উন্নয়ন হতে পারে না। তদুপরি খালেদা জিয়া আর তারেক জিয়ার ট্রেক রেকর্ডের সঙ্গে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নয়, জড়িত হয়ে আছে অনুন্নয়ন, উগ্রজঙ্গি সন্ত্রাস ও লুটপাট।

মার্কা নিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরুর দিন কোটালীপাড়ার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা আবেগজড়িত কণ্ঠে বোমা পুঁতে রেখে তাকে হত্যা করার স্মৃতি স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এই গোপালগঞ্জের মানুষই (মুফতি হান্নান) বোমা পুঁতেছিল। আর যে কিশোর চা দোকানদার ওই বোমা আবিষ্কার করেছিল সেও গোপালগঞ্জের। আমি নিশ্চিত, এ জনসভার কোথাও না কোথাও সেই কিশোরটি রয়েছে। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’ আসলেই সেই কিশোরটি আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন। কিন্তু মুফতি হান্নান বিচারের রায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে শাস্তি পেয়েছে।

আর মুফতি হান্নান গংদের মাস্টারমাইন্ড তারেক জিয়া আজ দেশ ছেড়ে পলাতক। ইতিহাস দোষী-খুনি কাউকে ক্ষমা করে না। নিক্ষেপ করে আঁস্তাকুড়ে। যাদের স্থান ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে তারা করবে পরিবর্তন আর দেশবাসী তা মেনে নেবে, এমনটা যারা ভাবেন আবার ক্ষমতায় আসবেন তারা বাস করেন আহাম্মকের স্বর্গে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথ হচ্ছে শত লাখ শহীদের রক্তস্নাত গৌরবের পথ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকোজ্জ্বল পথ।

এবারের নির্বাচনের ভেতর দিয়ে ওই পথে যাত্রা নিঃসন্দেহে আরো বেগবান হবে, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে এটাই দেশবাসীর একান্ত প্রত্যাশা।

প্রকাশ :ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮ ৮:৩২ অপরাহ্ণ