রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করতে চাপ দিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
যদিও ব্রিটেনের তৈরি করা এ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় চীন ও রাশিয়া এ পর্যন্ত থাকেনি। সোমবার কূটনীতিকদের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থান করা সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সময়সীমা বেঁধে দেয়া ও গণহত্যার দায়ে দেশটিকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে এ খসড়া প্রস্তাবটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হলে প্রতিবেশী বাংলাদেশে শরণার্থীদের ঢল নামে।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এ অভিযানকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। মিয়ানমার জাতিগত নিধনের অভিযান অস্বীকার করে আসছে।
সংকটের সমাধানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে না পারলে নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবতে পারবে, প্রস্তাবের খসড়ায় এমন সতর্কবার্তাও থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা।
পাশাপাশি জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদকে নিয়মিতভাবে অবহিত করার বিষয়টিও খসড়ায় রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।
তবে আদৌ এ খসড়া প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে উঠবে কি না, উঠলেও কবে ভোটে আসবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব অনুমোদিত হতে হলে অন্তত ৯ সদস্যের সমর্থন লাগে। তবে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা ফ্রান্সের মধ্যে যে কেউ ভিটো ক্ষমতা প্রয়োগ করলে ওই প্রস্তাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে এই মুহূর্তে এ ধরনের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা দেখছেন না জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় এটি অনুপযুক্ত, অসময়ে ও অহেতুক আনা হচ্ছে।
জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত মা ঝাওঝু এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাউ দো সুয়ানের কাছ থেকেও তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাজ্যের ওই খসড়াটি গত মাসের শেষদিকে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের দেয়া হয় এবং এ নিয়ে বেশ কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে বলে কূটনীতিকরা জানিয়েছেন।
প্রথম দফার আলোচনায় চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা থাকলেও পরের আলোচনাগুলোতে তারা আর উপস্থিত হননি বলেও নিশ্চিত করেছেন কূটনীতিকরা।
খসড়ায় নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকারকে চলতি বছরের জুনে জাতিসংঘের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারক ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে চাপ দেওয়ার প্রসঙ্গও থাকতে পারে।
তবে এতে গণহত্যা ও নির্যাতনের দায়ে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তোলার প্রসঙ্গটি থাকছে না বলে জানিয়েছেন তারা।
চলতি বছরের এপ্রিলে নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল রাখাইন পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ঘুরে যায়।
অক্টোবরে রোহিঙ্গা গণহত্যায় মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর দায় নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত দলের একটি প্রতিবেদন নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপনের চেষ্টা রাশিয়ার সহায়তায় আটকে দিয়েছিল চীন।