২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:১৯

জীবনের দুঃখ-কষ্ট

জেফের সাথে খুব চমৎকার সম্পর্ক আমার অফিসের সবার। জেফ যখনই অফিসে আসেন হাতে থাকে তার ডোনাটের বাক্স আর কিছু চকলেট। মাঝে মধ্যে বিনে কারণেই জেফ অফিসে এসে হাজির হন। ওয়েটিং রুমে একা বসে থাকে আর অপেক্ষারত রোগীদের সঙ্গে খোশগল্প করেন।

বয়স তার সত্তর পেরিয়েছে দুবছর আগে। মাথাভর্তি ধবধবে সাদা চুল। গত কয়েক বছর ধরে চুল হালকা হয়ে যাচ্ছে তার। তবে তার পাকানো মোচের বহর কমেনি। তাতে তিনি মোম মাখিয়ে খানিকটা সালভাদোর দালি’র মতো বানিয়ে রাখেন। ওর গাল জোড়া হাসিতে ওকে সব সময়ই দাদু দাদু লাগে।

জেফের জন্ম ওহাইওতে। নেলসন ভিল নামের এক কয়লা খনির কাছাকাছি এক শহরে তার জন্ম। বাবা ছিলেন কয়লা খনির শ্রমিক। কয়লা খনির শ্রমিকের ছেলে খনিতেই কাজ করবে এই ছিল নিয়ম। জেফ নিয়মটা ভেঙে স্কুল শেষ করে চলে যান পিটসবার্গে। সেখানে এক লাইব্রেরিতে কাজ শুরু করেন। সেই থেকে বই পাগল হয়ে যান তিনি।

অনেক বছর পর লাইব্রেরির গন্ডি পেরিয়ে আবার কলেজে যান জেফ। পড়াশুনা শুরু করেন প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে। পরে গবেষণাতে মেতে যান। মায়ান সভ্যতার ওপর তার অগাধ দখল। দীর্ঘদিন প্রত্নতত্ত্বের কাজে তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন মেক্সিকো আর অন্যান্য মধ্য আমেরিকার দেশ গুলোতে। সেখানেই লিলিয়ানের সাথে দেখা। কাজের মাঝে দুজনের মাঝে গড়ে ওঠে গভীর সখ্যতা।প্রায় তিন যুগ ধরে বিবাহিত এই যুগল ছিল এক অনন্য প্রেমের গল্পের নায়ক নায়িকা।

বিয়ের পর পরই দুজনেই চাকরি ছেড়ে প্রত্নতত্ত্বের গবেষণার পরামর্শের খণ্ডকালীন কাজ নিয়ে জীবন কাটিয়েছে। ওদের পূর্ণকালীন কাজ ছিল বই পড়া।

লিলিয়ান গত হয়েছে চার বছর আগে। দুরারোগ্য এক ক্যান্সারে কয়েক বছর যুদ্ধ করে জিততে পারেননি তিনি। নিঃসন্তান জেফের জীবন কাটে সেই পুরোনো সঙ্গী বইকে নিয়ে। তিনি এখন অরুন্ধুতি রায়ের ‘দা মিনিস্ট্রি অফ আলটিমেট হ্যাপিনেস’ পড়ছেন। অনেক প্রশ্ন তার এ বইটি নিয়ে। একদিন তাকে নিয়ে বসতে হবে।

জেফ বেশ নাদুস-নুদুস প্রাণময় মানুষ। ওর শরীর আর মোচের বাহারে ক্রিসমাসের মাসে তার খুব কদর বেড়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় সান্তা ক্লজ হিসেবে কাজ করেন তিনি।

গত কয়েক বছর ধরে তিনি সান্তা ক্লজ সেজে আমাদের অফিসে হাজির হয়ে যান না বলে কয়ে। সবার মাঝে হুড়ো হুড়ি পড়ে যায় তখন তার সাথে ছবি তোলার জন্য। আজও এসেছিলেন। আমিও ওর পাশে দাঁড়ালাম। ছবি তুললাম।

জেফ মনে করেন, সময় দিলে আমি ভালো পাঠক হতে পারি। আমার খালি সময়ের কমতি। জেফের মতো আমারও বড় দুঃখ, কত ভালো ভালো বইগুলো পড়ে যেতে পারবো না এ ছোট্ট জীবনে। তবে জেফের চেয়ে আমার দুঃখ অনেক বেশি।

প্রকাশ :ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮ ৩:০৯ অপরাহ্ণ