যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে সমর্থন করে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এ ছাড়া আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৈঠকের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য এসেছিলাম। আমরা বলেছি, সব দল যেন অবাধে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার এবং রাজনীতি করার সুযোগ পায়। তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচার চালানোর এবং শোভাযাত্রা করার সুযোগ পায়। কারণ, বিতর্কের মধ্যে দিয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র আরও বিকশিত হয়। গণমাধ্যম, বিরোধী দল যেন তাদের মত ব্যক্ত করতে পারে।’ নির্বাচনে সবার শান্তিপূর্ণ আচরণ প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘সবাই; রাজনৈতিক দল হোক, আর যে-ই হোক, যেন শান্তিপূর্ণ আচরণ করে। সবাই যেন সহিংসতা থেকে দূরে থাকে। কেননা সহিংসতা গণতন্ত্রের পথে বাধা হিসেবে থাকে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সহিংসতা শুধু তাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে সমর্থন করে না। আমরা শুধু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মূল্যবোধকে সমর্থন করি।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটি ৪০ লাখ ভোটার অংশ নেবেন। আমরা সবাই এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছি। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি—অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার। এ বিষয়কে যুক্তরাষ্ট্র উৎসাহিত করে।’ তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দলকে সহায়তা করবে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)। পাঁচ সদস্যের প্রাক মূল্যায়ন দল অক্টোবরে পাঠিয়েছিল এনডিআই। এ মাসেও এমন একটি দল পাঠানো হয়। এনডিআইয়ের অংশীদার ‘দ্য এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন’। তারা দুজন আন্তর্জাতিক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ নিয়োজিত করেছে এবং স্বল্পমেয়াদ ও দীর্ঘমেয়াদে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাবে। এ ছাড়া মার্কিন দূতাবাস পৃথক পর্যবেক্ষক দল নিয়োগ করবে সারা দেশে। যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ডের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র ১৫ হাজার স্থানীয় পর্যবেক্ষকের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অর্থায়ন করবে। তাঁরা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) হয়ে কাজ করবে।
৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে প্রতীক বরাদ্দ শেষ হয়েছে। নির্বাচনে ১ হাজার ৮৪১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাঁরা প্রচারকাজ শুরু করে দিয়েছেন। তবে ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারকাজ শুরু হতে না হতেই বিভিন্ন জেলায় সহিংস ঘটনার খবর ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। বিএনপির নেতারাও নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
ব্যালট বাক্সসহ জেলায় জেলায় নির্বাচনী উপকরণ পাঠাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের তিন দিন আগে পাঠানো হবে ব্যালট পেপার। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন ৪০ হাজার কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৪ থেকে ১৬ জনের দল মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়েছে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর ছয় লক্ষাধিক সদস্য মোতায়েন থাকবে।