২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:৩৮

মিয়ানমারের প্রশংসা টুইটার প্রতিষ্ঠাতার, রোহিঙ্গারা উপেক্ষিত

সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যায় অভিযুক্ত মিয়ানমারের প্রশংসা করে বেশ কয়েকটি টুইট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডোরসে। রোহিঙ্গাদের ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন সত্ত্বেও মিয়ানমারের পর্যটন খাতের বিজ্ঞাপন দিয়ে ও সেখানকার মানুষের প্রশংসা করেন তিনি। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিয়ে চুপ থাকায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

বেশ কয়েকটি টুইটে জ্যাক ডোরসে বলেন, গত মাসে তিনি মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। তার অভিজ্ঞতা খুবই সুখকর। তিনি সেখানকার মানুষ ও খাবারের প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি সেখানে ধ্যান করেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘এখানকার মানুষজন দারুণ আনন্দদায়ক আর খাবার তো অসাধারণ। আমি ইয়াঙ্গুন, মানডাল ও বাগান শহরে গিয়েছি। তাছাড়া বেশ কিছু উপাসনালয়ে ধ্যানও করেছি আমি।’ তিনি তার ৪০ লাখ ফলোয়ারকে দেশটি পরিদর্শনে যাওয়ার আহ্বান জানান।

কিন্তু এমন কথার পর অনেকেই তাকে অভিযুক্ত করছেন যে, তিনি দেশটির এত প্রশংসা করলেও নির্যাতিত সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর দেশটির জাতিগত নিধন অভিযানের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানান নি।

জ্যাক ডোরসের ওসব টুইটের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একজন টুইটার ব্যবহারকারী বলেন, ‘এমন সময়ে মিয়ানমারের জন্য বিনামূল্যে পর্যটনের বিজ্ঞাপন করছেন তিনি। যা খুবই নিন্দনীয় একটি ব্যাপার।’ আরেক ব্যবহারকারী ডোরসের টুইটের উদ্দেশে বলেন, ‘এই যে এখানে বধিরের ক্থা শোনো সবাই…ওয়াও।’

এক ব্যবহারকারী তো আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘তিনি খবুই দায়িত্বহীনের মতো কথা বলেছেন। তিনি কি সংবাদপত্র পড়েন না। তাছাড়া তার নিজের প্রতিষ্ঠিত টুইটারেও তো মানুষের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সেটাও কি তার নজরে আসে না?’

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপীয় শাখার কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু স্ট্রোয়েলেইন টুইটার প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডোরসের ওসব টুইটের প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য করেন, ‘আমি ধ্যান সম্পের্কে বিশেষ কিছু জানি না। তবে এই ধ্যান কি মানুষকে এতটাই আত্মমগ্ন করে, যে একটা দেশে গিয়ে আপনি ভুলে যাবেন দেশটির সেনাবাহিনী সংখ্যালঘু সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচার হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত। যাদের অত্যাচার ও জাতিগত নিধন অভিযানের কারণে সেই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।’

গত বছর সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন ও জাতিগত নিধন অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। তারা হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণ করেছে। তাদের ঘরবাড়ি ও জমি সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে।

দেশটির রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর এমন অভিযানের কারণে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এতদিন ধরে তাদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী না হলেও সম্প্রতি আগ্রহ দেখায় মিয়ানমার। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মতো উপযুক্ত পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি।

প্রকাশ :ডিসেম্বর ১০, ২০১৮ ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ