নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তেই যেন ঝড় বইছে বিএনপিতে। হঠাৎ করে তেঁতে উঠলেন বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি অংশ।
আর এর একমাত্র কারণ হচ্ছে-হঠাৎ করে প্রার্থী বদল। এ কারণেই তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। মনোনয়নবঞ্চিত এসব নেতা বলছেন-বছরের পর বছর ধরে দলের জন্য আমরা হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেলহাজতেই বেশি সময় কাটিয়েছি। আর এখন মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে এমন সব প্রার্থীকে যাদের এলাকায় কেউ চিনেই না।
শনিবার হঠাৎ করেই কয়েকটি আসনে প্রার্থী বদলের খবরে সেসব আসনের নেতাকর্মীরা ফেটে পড়েন বিক্ষোভে। এদের মধ্যে অন্যতম নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকার। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার এ উপদেষ্টাকে শেষ মুহূর্তে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে শনিবার বিকালে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দেয়ার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের সমর্থকরা।
তার সমর্থকদের দাবি, সারা দেশে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। দলের জন্য তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। তার এক ভাইকে খুন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট শুরুর আট ঘণ্টা আগে তাকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এর পরও প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন তিনি। দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এ নেতার মনোনয়ন শেষ মুহূর্তে কেড়ে নেয়ায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িতে হামলা করেছে মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের সমর্থকরা।
সন্ধ্যা থেকে দেশের বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা আন্দোলন করেন।
মধ্যরাতে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গেট ভেঙে তারা কার্যালয়ের ভেতর প্রবেশের চেষ্টা করেন। গেটের অপর পাশ থেকে সিএসএফের কর্মকর্তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
মনোনয়নবঞ্চিত এহছানুল হক মিলনের অনুসারীরাও ফখরুলের পথ আটকে তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখেন।
তাদের সঙ্গে যোগ দেন গোপালগঞ্জ-১ আসনের সেলিমুজ্জামান সেলিম ও মানিকগঞ্জের প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে অ্যাডভোকেট খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলুর কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
তারা গুলশান কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার জানালার কাচ ভেঙে যায়।
বাইরে যখন বিক্ষোভ চলছিল, সেই সময় ভেতরেই ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খানসহ সিনিয়র কয়েক নেতা।
পরিস্থিতি শান্ত করতে দেলোয়ারের দুই ছেলে ও মেয়েকে কার্যালয়ের ভেতরে ডেকে নেয়া হয়। এ সময় নজরুল ইসলাম খান তাদের সঙ্গে কথা বলেন। দেলোয়ারের সন্তানরা নজরুল ইসলাম খানের কাছে জানতে চান-এ দলে কি তার বাবার কোনো অবদান ছিল না।
মনোনয়ন তো দূরের কথা, তাদের কেন কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হল না। এ সময় নজরুল ইসলাম খান তাদের শান্ত হতে বলেন। বাইরে বিক্ষুব্ধ কর্মীদের চলে যেতে বলেন। কার্যালয়ের নিচ তলায় তাদের অপেক্ষা করতে বলেন।
এর পর তৈমুর আলম খন্দকারকে ভেতরে ডাকেন নজরুল ইসলাম খান। তার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় তৈমুর ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, আমি কার্যালয়ের বাইরে আছি। মহাসচিবসহ আপনারা কীভাবে বাইরে বের হন, তা আমি দেখে নেব। এই বলে তিনি নিচে চলে আসেন।
দুপুরে চাঁদপুর-১ আসনের মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলনের অনুসারীরা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন।
একপর্যায়ে তারা কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। মূল গেটে প্রতিবাদ মিছিল লেখা একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়। এ সময় মিলনের স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবী ছাড়াও বিক্ষোভে অংশ নেন চাঁদপুরের কচুয়া থানা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
দিনভর বিক্ষোভ শেষে শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে মির্জা ফখরুলের গাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ সময় গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায় এবং চালক হেলাল আহত হন।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, শনিবার রাত আড়াইটায় মির্জা ফখরুল গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় তার গাড়ি অবরুদ্ধ করা হয়। দীর্ঘ ৩০ মিনিট চেষ্টা করেও তিনি কার্যালয় থেকে বের হতে পারেননি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় রাত ৩টার দিকে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাকর্মী চেয়ারপারসনস সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) একটি মানববেষ্টনী তৈরি করে তাকে ঘিরে গুলশান-২ নম্বর চত্বরের দিকে নিয়ে যান।
সেই সময় মির্জা ফখরুলের ব্যক্তিগত গাড়িটি কার্যালয় থেকে খালি বেরিয়ে মূল সড়ক থেকে ফখরুলকে তুলে নিয়ে যায়।
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, এত কিছুর পরও আমি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে কাজ করতে বলছি। কারণ আমাদের এখন একমাত্র লক্ষ্য-খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বের করে আনা। এ জন্য প্রয়োজন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের বিজয়। তাই তিনি বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে বিনীত অনুরোধ-সব কিছু ভুলে একাট্টা হয়ে দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী করে আনা।