২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:১৯

বিমানবন্দর সড়কে বনসাই লাগানো বন্ধ পিছু হটেছে সওজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) বিমানবন্দর সড়কে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সৌন্দর্যবর্ধন কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ গাছের চারা লাগানো হবে ওই সড়কে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হবে বাহারি পাতার গাছ। তবে এর মধ্যে অন্যতম ছিল বনসাই।  চীন ও তাইওয়ান থেকে আনা হয়েছিল ১২০টি ফাইকাস বনসাই। এই বনসাই গাছগুলোর একেকটির দাম প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। এই গাছগুলো আনতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। কিন্তু দেশিয় নানা বাহারি গাছ থাকতে কেন লাখ টাকা খরচ করে এই বনসাই লাগানো হচ্ছে, সেটি নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সেই সমালোচনার প্রেক্ষাপটে মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নতুন করে বনসাই লাগানো বন্ধের নির্দেশ দেন।

৫ই জুন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বনসাই লাগানো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হওয়ায় সড়ক পরিবহন বনসাই লাগানো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও শোভাবর্ধক গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে এ সড়কের দুই পাশ সবুজায়ন করা হবে। এছাড়া শোভাবর্ধনকাজে অংশীজনদের সু-বিবেচনাপ্রসূত মতামত গ্রহণের জন্য মাননীয় মন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি সওজ অধিদপ্তর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগরীর চারপাশের প্রবেশপথগুলোর সৌন্দর্যবর্ধনেরও উদ্যোগ নিয়েছে।  সওজ কর্মকর্তারা জানান, বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে অত্যাধুনিকভাবে সাজানোর অংশ হিসেবে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাগর লোহানী ফেইসবুকে লিখেন, ২০/২৫ বছরের পুরনো বৃক্ষ নিধন করে সেখানে তথাকথিত ছায়াহীন নিষ্ঠুর বনসাই বসিয়ে কোন পথচারীর কি উপকার হবে জানিনা। তবে যে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বোর্ড বসবে তাতে বিজ্ঞাপন বেচে অর্থনৈতিক উপকারটা কার হবে তা সহজেই অনুমেয়! এয়ারপোর্ট রোডের এই তথাকথিত সৌন্দর্য বর্ধনের নামে যা হচ্ছে তা পরিবেশের সাথে এক নির্মমতা এবং নগরবাসীর প্রতি এক বিশালাকার প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।  তিনি আরও লিখেন, ভিনাইল গ্রুপের প্রাথমিক ৯০ কোটি এবং ১০ বছরে আরও ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কারণ কি? তারা নিশ্চয়ই দাতা হাতেম তাইয়ের প্রতিষ্ঠান নয়। তাদের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য কি কেউ জানেন? জানেন কি কোন প্রক্রিয়ায় এই ৬ কিমি রাস্তা বিভিন্ন পণ্যের কাছে স্পন্সরের নামে ভাড়া দেয়া হবে? এই ১৪০ কোটি টাকার বদলে দেশের রাজস্ব খাত কত টাকা হারাবে ১০ বছরে? সর্বোপরি এই ৬ কিমি রাস্তা কোন প্রক্রিয়ায় ভিনাইল গ্রুপের কাছে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে? লীজ মানিই বা কত ছিল?  সেই লেখার মন্তব্যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিরু শামসুন নাহার লিখেন, সাগর তোমার পোস্ট করা বনসাঁইগুলো লাগাবে বিমানবন্দরের রাস্তায়? ওগুলো ভালো করে দেখেছো কি? ন্যুড গ্রুপ ফিগারস!! আমার বিবমিশা হচ্ছে… দেশে ফিরে এসেই বিমান বন্দর থেকে বেরিয়েই পথের দুপাশের সুন্দর ছায়াতরুগুলোর বদলে এসব জঘন্য বনসাঁই দৃশ্য দেখতে হবে!? আমার মৃত্যু কেনো হয়না!? রুচীর আকাল এতোটাই? কারা এই ডিজাইনার? কোন সংস্থা অনমোদন দিচ্ছে? বি.এন.পি.-র সময় ছায়াতরু কেটে খেজুর গাছ লাগালো। তারপর আবার কিছু ছায়াতরু লাগানো হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গাছ লাগানো ছাড়াও এই প্রকল্পে ডিজিটাল যাত্রীছাউনি, আধুনিক ডাস্টবিন, এলইডি মনিটর, ফ্রি ওয়াই-ফাই সংযোগ, আধুনিক টয়লেট, কৃত্রিম ঝরনাসহ আরও কাজ করার কথা বলা হচ্ছে। এ জন্য নব্বই কোটি টাকা খরচ হবে। রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রকল্পের মোট বাজেট ১৪০ কোটি টাকা। মেয়াদ ১০ বছর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই পুরো খরচ বহন করছে। বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত স্থান বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে ভাড়া দিয়ে এই খরচ তুলে নেবে। তবে এই বিজ্ঞাপন বা বিলবোর্ডের জন্য সিটি করপোরেশনের অনুমতি পাওয়া না-পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন আছে।  বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদ মনসুর বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারি থেকে বনানী-এয়ারপোর্ট ছয় কিলোমিটার রাস্তা সৌন্দর্যকরণের কাজ শুরু করি। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই এলাকার চেহারা বদলে যাবে। শুধু বনসাই নিয়েই কথা উঠছে। এখানে আরও চার লাখ ছোট ছোট গাছ লাগানো হবে। বারো মাস যেন সড়কের দুই পাশে ফুল থাকে, সেই বিবেচনাও আমাদের আছে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জুন ৭, ২০১৭ ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ