একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এবার মনোনয়ন বাণিজ্যের রেকর্ড করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
যাচাই-বাছাইয়ে বিএনপির অনেক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়া সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ২৭৮ জনের মনোনয়ন টিকেছে আর বিএনপির টিকেছে ৫৫৫ জন। তাহলে মনোনয়ন কার বেশি টিকেছে। নির্বাচনে তো অংশ গ্রহণ করবে ৩শ জন। এর মধ্যে ঐক্যফ্রন্টকে দিতে হবে না?
আমরা বিশ্বস্তসূত্রে খবর পেয়েছি, গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ছে বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্যে এবার রেকর্ড করেছে। এই যে এসব প্রার্থী ঋণখেলাপির কারণে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, তারপর এখনও ৫৫৫ জন রয়েছে। এটা কি মনোনয়ন বাণিজ্য নয়?
তিনি বলেন, কোনো কোনো শীর্ষ নেতা ঢাকা থেকে পালিয়ে গেছে। যাদের থেকে টাকা নিয়েছে তারা এখন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ধর্না দিচ্ছে। এলাকায় গিয়ে তারা এখন এই মুহূর্তে প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে, মনোনয়ন বাণিজ্যের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে, এরকম খবরও আমরা পাচ্ছি।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মনোনয়ন বাতিল করে সরকার পুতুল নাচের খেলা আয়োজন করেছে, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীয় এমন বক্তব্যের জবাব জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়াটাই একটা পুতুল নাচের খেলা। সরকার কেন করবে? নির্বাচন কমিশন কি সরকার?
ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন কর্তৃত্বপূর্ণ আচরণ করে যাচ্ছে। পুতুল নাচের খেলা, যেমনি নাচাও তেমনি নাচে।কামাল হোসেন তো নামকাওয়াস্তে নেতা, অনেক দুঃখে কষ্টে নির্বাচনটাই করছেন না। নেতাও নেই মাথাও নেই এই দলকে কে ভোট দেবে। মানুষ জিজ্ঞেস করবে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী? কি জবাব দেবেন মির্জা ফখরুল সাহেব?
তিনি বলেন, যখন নির্বাচন কমিশন তাদের পক্ষে না থাকে তখন তো নির্বাচন কমিশন সৎ মা হয়ে যায়। জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় মহাজোটের প্রার্থী মনোনয়নে কোনো টানাপোরেন হবে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিবের বহিষ্কারের বিষয়টা তাদের ব্যাপার, এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। আর এ নিয়ে মহাজোটের যে ঐক্য প্রক্রিয়া এখানে প্রভাব পড়বে না।
আগামী নির্বাচনে জিয়া পরিবারের কেউ অংশগ্রহণ না করায় বিএনপির রাজনীতিতে জিয়া পরিবার নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার পাপে, আমি আজকে ভিকটিম হচ্ছি, আমার অন্যায়ে আজকে আমি ভিকটিম হচ্ছি। এতে অন্যদের কী করার আছে। আপনি অপরাধ করেছেন, এতিমের টাকা আত্মসাত করেছেন মামলা হয়েছে। ১০ বছর মামলাটাকে বিলম্বিত করা হয়েছে, রায় বিরুদ্ধে গেছে। হাতেনাতে প্রমাণ আছে, এটা আদালতের সিদ্ধান্ত। জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার কোনো উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগের নেই। আমরা কেন নিশ্চিহ্ন করতে যাবো।
তিনি বলেন, বিএনপি একটা বড় দল গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে থাকলে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই। গণতন্ত্র দুই চাকার বাই সাইকেল। একদিকে সরকারি দল অন্যদিকে অপজিশন। অপজিশনকে বাদ দিয়ে তো সংসদীয় গণতন্ত্র হয় না। কাজেই এখানে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। জিয়া পরিবারই বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সব ধরনের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করেছে। যা হচ্ছে আদালতের আদেশে হচ্ছে, এখানে কোনোভাবে আমরা তাদের হয়রানি, হুমকি দিতে যাইনি।
ইজতেমায় সংঘর্ষের ঘটনা এবং পাবনার সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধীদের কোনো ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে করছেন কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে একটা অশান্তি অস্থিরতা সৃষ্টি তারা করতে চায়, কারণ তারা জেনে গেছে বুঝে গেছে আগামী নির্বাচনে তাদের জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা নির্বাচন বানচালের জন্য দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশটাকে তারা বিঘ্নিত করতে চাইছে। নিজেরা কোনো আন্দোলন করতে পারেনি, অন্যদের ইস্যুতে নাক গলাচ্ছে, অন্যদের ইস্যুতে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে কি না সেই অপচেষ্ট তাদের আছে।
দলীয় সমর্থকদের দ্বন্দ্বে পাবনায় দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ ধরনের ঘটনা সামাজিক ব্যাপারেও হতে পারে। নরসিংদীদের ৫০ বছর ধরে ঘটে আসা সামাজিক দ্বন্দ্বকেও দলীয় হিসেবে অনেকে প্রচার করেছে। এখন পাবনার ঘটনা সেরকম কিছু হতে পারে। পাবনার ঘটনায় দলীয় সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে এ ধরনের ঘটনা হয়েছে- এমন কোনো রিপোর্ট আমাদের কাছে নেই।
বিএনপিকে নির্বাচনে থাকার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুরোধ করার কারণ জানতে চাইলে কাদের বলেন, এই যে সারা বছর দেশে-বিদেশে নালিশ আর নালিশ, সরকার নির্বাচন করতে দেয়নি। সরকার কারসাজি করে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখেছে। এই অপবাদ যাতে না ছড়াতে পারে সেজন্য তাদের মাঠে থাকাটাই ভালো। তারা এখন এদিক-সেদিক করছে, আমরা তো বুঝি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পাবলিকের সাড়া নেই, দিন যত যাচ্ছে বিএনপির ভাঙা হাট আরও ভাঙছে। সেজন্যই এইসব বক্তব্য দিচ্ছে। কী করবে তারা তো এখন বেপরোয়া। পল্টনের আবাসিক প্রতিনিধি বসে বসে গুজব আর মিথ্যাচারের ভাঙা রেকর্ড প্রতিনিয়ত বাজাচ্ছে।
তিনি বলেন, শরিকদের জন্য প্রতারণামূলক কোনো অভিসন্ধি আমাদের নেই, এটা আমরা করতে পারি না। তাহলে আমাদের কে বিশ্বাস করবে? শরিকদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া আছে। আমাদের নিজেদের মধ্যে কোনো টানাপোড়েন নেই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।