একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়ার আরেকটি ধাপ শেষ হয়েছে। গতকাল রোববার ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন। নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাই শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলটির অর্ধশতাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তাদের অনেকেই রাজনীতি অঙ্গনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চার আসনে বিএনপির একজন প্রার্থীরও মনোনয়নপত্র টেকেনি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতার প্রার্থিতাও বাতিল হয়েছে। তবে শুধু একটি আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর।
আদালতে দণ্ড, ঋণখেলাপি হওয়া, অসম্পূর্ণ মনোনয়নপত্র, স্থানীয় সরকারের পদ না ছাড়া ও হলফনামায় সই না থাকায় বিএনপি জোটের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশিরভাগের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ভোটারের স্বাক্ষরে গরমিল থাকায়।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের তিন হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। গতকাল বাছাইয়ে বাতিল হয়েছে ৭৮৬টি। বাকি দুই হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সারাদেশে ৬৬টি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৬৪টিতে ২৮১ প্রার্থী দেয়। ২৯৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পান ৬৯৬ জন। ২১০ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পান ২৩৩ জন। গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করতে পারেনি, কোন দলের কত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। সমকালের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, বিএনপির ৬৯৬ প্রার্থীর মধ্যে অর্ধশতাধিকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আওয়ামী লীগে শুধু কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক এমপি জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। দুর্নীতির দুটি মামলায় ১৭ বছর জেল হওয়ায় খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। সংবিধান ও আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী, দুই বছরের বেশি সাজা হলে ভোটে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই।
ঢাকা মহানগরীর ১৫টি আসনে মোট ২১৩টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ৫২টি মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। আর ঢাকা জেলার পাঁচটি আসনে ৫২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। সেখান থেকে ১৯ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ঢাকা-১ আসনে এখন বিএনপির কোনো প্রার্থীই নেই।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে এম মোর্শেদ খান, আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে গণফোরামে যোগ দিয়ে আলোচিত ড. রেজা কিবরিয়া ও আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়া গোলাম মাওলা রনিরও মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের প্রার্থিতাও বাতিল হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৫ আসনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায়। রাজশাহী-১ আসনে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে মামলার সার্টিফায়েড কপি না থাকায়। অসম্পূর্ণ আবেদনের কারণে ঢাকা-৩ আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর। তবে ঢাকা-২ আসনে তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের আকবর হোসেন পাঠানের (চিত্রনায়ক ফারুক) মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে। অসম্পূর্ণ আবেদনের কারণে বাতিল হয়েছে ঢাকা-৯ আসনে মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের মনোনয়নপত্র।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ঋণখেলাপি হওয়ায়। দুই বছরের বেশি সাজা হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলাল, সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার।
রেজা কিবরিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ক্রেডিট কার্ডের সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা কিস্তি বকেয়া থাকায়। গোলাম মাওলা রনির মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে হলফনামায় সই না থাকায়। ইমরান এইচ সরকারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে সমর্থকের সইয়ে গরমিল থাকায়। একই কারণে রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। রাজনীতিতে নেমে আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের প্রার্থিতাও বাতিল হয়েছে সমর্থকের স্বাক্ষরের গরমিলের কারণে।
আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রামে যেসব আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের ঘিরে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বিএনপি, তাদের অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। বিশেষ করে এখানকার পাঁচটি আসনে চারজন প্রভাবশালী নেতার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় হতাশ বিএনপির নেতাকর্মীরা।
তবে মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে আজ সোমবার থেকে তিন দিন। যারা আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাবেন, তারা ভোটে অংশ নিতে পারবেন। আগামী ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর ইসি এসব আপিল নিষ্পত্তি করবে।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের এক বৈঠক শেষে জোটের শীর্ষ নেতা ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করে সরকারি দলের জয়লাভকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ প্রায় ৮০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিরোধী দলকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বের করে দেওয়ার আরেকটি প্রচেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে তাদের পক্ষে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে টিকে থাকা হয়তো সম্ভব হবে না।
নানা অজুহাতে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে অভিযোগ করে অলি আহমদ বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে ও পরে জোটের অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে যাতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে আসন বণ্টন প্রসঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেন নেতারা। তবে সারাদেশে ব্যাপক হারে মনোনয়নপত্র বাতিলের সঠিক পরিসংখ্যান জানার পর আসন বণ্টনের বিষয়টি সমাধান করতে চায় বিএনপি। এ প্রসঙ্গে নেতারা বলেন, আগামী বুধবারের মধ্যে তারা শরিকদের সঙ্গে বসবেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) ও টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল, সখীপুর) আসন থেকে বাতিল ঘোষিত হওয়ার পর তিনি বলেছেন, তিনি জানতেন যে এই সরকারের আমলে নির্বাচন করতে পারবেন না। যা হচ্ছে সেটা সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী। তবে প্রার্থী হওয়ার জন্য আইনি কাঠামোর মধ্যে যতটুকু সুযোগ আছে, সে অনুযায়ী তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তার সংগ্রাম হচ্ছে ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করা সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নের অংশ। এর জবাবে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি দণ্ডিত আসামি ও ঋণখেলাপিদের মনোনয়ন বৈধ করতে চায়।
চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির বলেন, তার মামলা উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ থাকার পরও রিটার্নিং কর্মকর্তা আমলে না নিয়ে একতরফা মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। তিনি এই বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
ফেনী-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল লতিফ জনি বলেন, তার সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের একটি মামলা উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। তিনি সেই রায়ের কপি জমা দেওয়ার পরও রিটার্নিং কর্মকর্তা তা আমলে নেননি। মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন এবং আইনি লড়াই চালাবেন।
ইসি-সংশ্নিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত দলের মধ্যে মাত্র ১২টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল এক হাজার ১০৭টি। বাছাইয়ে বাতিল হয় ২৩০টি। প্রত্যাহার করা হয় ৩৩৪টি। ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী হওয়ায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। বাকি ১৪৭টি আসনে প্রার্থী ছিলেন মাত্র ৩৯০ জন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১০৪ জন, যাদের মধ্যে ১৬ জন জয়ী হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন এক হাজার ৫৬৭ জন।
ঢাকায় যাদের মনোনয়ন বাতিল : ঢাকা-১ আসনে প্রার্থী হতে মোট আবেদন জমা হয় ১২টি। গতকাল পাঁচটি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্য বিএনপি প্রার্থী খোন্দকার আবু আশফাক ও ফাহিমা হুসাইন জুবিলীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় আশফাকের আবেদন বাতিল হয়। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ফাহিমা হুসাইন জুবিলীর প্রত্যয়নপত্রে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর না মেলায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
ঢাকা-২ আসনে প্রার্থী হতে ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে চারটি বাতিল হয়েছে। বিচারিক আদালতে দণ্ডিত হওয়ায় বিএনপির প্রার্থী আমান উল্লাহ আমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ভোটারের তথ্যে গরমিল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মারুফ খান, ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল না করায় সিপিবি প্রার্থী সুকান্ত সফি চৌধুরী এবং প্রস্তাবক ও সমর্থক সংশ্নিষ্ট আসনের ভোটার না হওয়ায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সৈয়দ মঈনুদ্দিন রিপনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
ঢাকা-৩ আসনে প্র্রার্থী হতে আবেদন পড়েছিল আটটি। বাতিল হয়েছে তিনটি। মনোনয়নপত্রে আয়ের উৎস উল্লেখ না করায় জাতীয় পার্টির মনির হোসেন সরকার, ঋণখেলাপি হওয়ায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সুলতান আহমেদ খান ও মনোনয়নপত্র অসম্পূর্ণ হওয়ায় গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
ঢাকা-৪ আসনে ১৫টির মধ্যে বাতিল হয়েছে ছয়টি। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- বিকল্পধারা বাংলাদেশের কবির হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. আবদুল মালেক। গণফোরামের মো. নজরুল ইসলাম ঋণখেলাপি হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, আওলাদ হোসেন ও মোহাম্মদ মনির হোসেন নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুযায়ী এক শতাংশ ভোটারের সঠিক তালিকা না দেওয়ায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
ঢাকা-৫ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয় করা ১৩টি। বাছাইয়ে বাতিল হয় তিনটি। এর মধ্যে বিএনপির অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া ঋণখেলাপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু হানিফ হৃদয় এক শতাংশ ভোটারের সঠিক তালিকা না দেওয়ায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।
ঢাকা-৬ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয় ১৩টি, বাতিল হয় তিনটি। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- বিএনপির ইশরাক হোসেন (ঋণখেলাপির দায়ে), বিকল্পধারার দীলিপ কুমার দাসগুপ্ত (হলফনামায় গরমিল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিয়ামুল হক মালিক (এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর দিতে না পারায়)।
ঢাকা-৭ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সংখ্যা ১৯টি। বাতিল করা হয়েছে চারটি। ঋণখেলাপির কারণে বিএনপির নাসিমা আক্তার কল্পনার প্রার্থিতা বাতিল হলো। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু মোতালেব ও মো. মাসুদুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল হয় এক শতাংশ ভোটারের সঠিক তালিকা না দেওয়ায়। আওয়ামী লীগের নাজমুল হক দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত চিঠি না দেওয়ায় প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সংখ্যা ২২টি, বাতিল হয়েছে সাতটি, স্থগিত একটি। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির আরিফুর রহমান (আয়-ব্যয়ের বিবরণী না থাকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জগদীশ বড়ূয়া ও রহমত উল্ল্যা (ভোটার নম্বর ও এক শতাংশ ভোটার তালিকা না দেওয়া), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এস এম সরওয়ার (হলফনামায় ভুল তথ্য), বিএনপির সাজ্জাদ জহির (ঋণখেলাপি), জাতীয় পার্টির মাহমুদা রহমান মুন্না আয়-ব্যয়ের বিবরণীতে স্বাক্ষর না দেওয়ায় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহমুদুল হাসানের সমর্থনকারী অন্য আসনের ভোটার ও প্রস্তাবকারীর স্বাক্ষর না থাকায়।
ঢাকা-৯ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সংখ্যা ১০টি। বাতিল হয়েছে দুটি, স্থগিত একটি। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল আমিন ও মো. ফরিদ উদ্দীন (এক শতাংশ ভোটার তালিকা না দেওয়ায়), বিএনপি নেত্রী আফরোজা আব্বাসের ঋণখেলাপি নিয়ে হাইকোর্ট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ জটিলতায় মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সংখ্যা নয়টি, বাতিল হয়েছে দুটি। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- গণফোরামের খন্দকার ফরিদুল আকবর (ঋণখেলাপি) ও জাতীয় পার্টির হেলাল উদ্দিন (আয়করের কাগজ না দেওয়ায়)।
ঢাকা-১১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সংখ্যা ১০টি, বাতিল হয়েছে একটি। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান মিয়া (এক শতাংশ ভোটার তালিকা অনুযায়ী সংশ্নিষ্ট প্রার্থীদের সন্ধান না পাওয়ায়)।
ঢাকা-১৪ আসনে মোট মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন ১৩ জন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ মনোনয়নপত্রের জন্য ইসলামিক ফ্রন্টের শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বারিধারা শাখায় ঋণখেলাপির দায়ে জাকের পার্টির জাকির হোসেন, অনলাইনে আবেদন করে কোনো কাগজপত্র না দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমিরা সুলতানা, সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু এভিনিউ শাখার ঋণখেলাপের দায়ে জাকের পার্টির কায়সার হামিদ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির ঋণখেলাপের দায়ে বিএনপির সৈয়দ আবু বকর সাজুর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ঢাকা-১৫ আসনে ১৫ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে একজন ঋণখেলাপি ও দু’জনের তথ্যে গরমিল থাকায় মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির মুকুল আমিন ঋণখেলাপি থাকায় তার মনোনয়ন বাতিল হয়। স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী তথ্য দিতে না পারায় তাদের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ঢাকা-১৬ থেকে ১০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইকালে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ঋণখেলাপির দায়ে বিএনপির এবিএম মোয়াজ্জেম হোসেন ও গণফোরামের খন্দকার ফরিদুল আকবরের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির আমানত হোসেন শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ না দেওয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইসমাইল হোসেন সঠিক তথ্য না দেওয়ায় মনোনয়ন বাতিল হয়।
ঢাকা-১৭ আসনে ২৭ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। দলের নিবন্ধন না থাকায় যাচাই-বাছাইতে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাসহ ১৩টি মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে- আওয়ামী লীগের রুবেল আজিজ (ঋণখেলাপি), বিএনপির শওকত আজিজ রাসেল (ঋণখেলাপি), বিকল্পধারার আরিফুল হক (ঋণখেলাপি), স্বতন্ত্র আনিসুজ্জামান খোকন, মেজর (অব.) মামুনুর রশিদ, লেলিন চৌধুরী, নাসিম, আবদুর রহিম, সৈয়দ সদরুল হুদা চৌধুরী, গণফোরামের খন্দকার ফরিদুল আকবর ও জেএসডির নজরুল ইসলাম। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকবর হোসেন খান পাঠানের (চিত্রনায়ক ফারুক) মনোনয়ন স্থগিত করা হয়।
ঢাকা-১৮ আসনে ১২ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ও তিনটি অবৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। মনোনয়ন বাতিল হয়েছে জেএসডির শহীদ উদ্দীন মাহমুদ (ঋণখেলাপি), খেলাফত মজলিসের সাইফুল্লাহ খন্দকার (কর বকেয়া থাকায়) ও স্বতন্ত্র নাজমুল হক বাবুর (তথ্যগত ত্রুটি)।
ঢাকা-১৯ আসনে মনোনয়নপত্র জমা পড়ে ১২টি। এর মধ্যে দুটি বাতিল হয়। কর না দেওয়ায় বিএনপির কফিল উদ্দিন এবং প্রার্থী হওয়ার শর্ত হিসেবে এক শতাংশ ভোটারের প্রদত্ত তালিকায় গরমিল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী তরিকুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
ঢাকা-২০ আসনে ১০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় বিএনপির তমিজ উদ্দিন, ঋণখেলাপির অভিযোগে বিএনপির সুলতানা আহমেদ, ট্যাক্স বকেয়া থাকায় জাকের পার্টির নুরুল ইসলাম ও ভোটার তালিকার তথ্যে মিল না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল মান্নানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
ঢাকার বাইরের খণ্ডচিত্র :ফেনীর তিনটি আসনে সাতজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী-১ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ফেনী-৩ আসনে বিএনপির আবদুল লতিফ জনি রয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ছয়টি আসনে ৪০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে চার হাজার ১৪৭ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় জাতীয় পার্টির নেতা নায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
সিলেট বিভাগে বিএনপির ৩৬ জন দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় স্বাক্ষর করতে ভুলে যান তিনি। গতকাল বাছাইকালে সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে ৪৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, যার মধ্যে কেয়া চৌধুরীও রয়েছেন। রাজশাহীর ছয়টি আসনে ২৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। খুলনা বিভাগের ৩৬টি আসনে মোট ৯০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ময়মনসিংহের ১১টি আসনে ১১৬ প্রার্থীর মধ্যে ৩৫ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঝিনাইদহ-১ আসনের আবদুল ওয়াহাব, টাঙ্গাইল-৬ আসনের নূর মোহাম্মদ খান, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের এম এ আউয়াল, ঝিনাইদহ-১ আসনের মশিউর রহমান ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।