একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে জামায়াত জোটগতভাবে প্রার্থী দিয়েছে ২৫ আসনে। তবে জোট থেকে আরও বেশ ক’টি আসন বাগাতে আরও ৩০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে নিবন্ধন হারানো এই দলটি। অর্থাৎ ৫৫ আসনে নির্বাচন করার পরিকল্পনা ছিল জামায়াতের। তবে বাছাই পর্বেই ক্রটি ও বিভিন্ন অসঙ্গতির অভিযোগে ৫৫ প্রার্থীর মধ্যে ১৯ প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। আরও একজনের ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য মেলেনি।
জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, জোটগতভাবে যে ২৫টি আসনে মনোনয়ন জমা দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে আয়কর দাখিল না করার অভিযোগে দিনাজপুর-১ আসনের জোটের প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ হানিফের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। অন্যদিকে রংপুর-৫ অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর মনোনয়নপত্র গ্রহণই করা হয়নি। নির্ধারিত সময়েরও পরে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে যাওয়ায় রংপুর-৫ আসনের প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রাব্বানীর মনোয়ন ফরম জমা নেয়নি সংশ্লিষ্ট জেলার রিটার্নিং অফিসার।
তবে জামায়াতের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে গিয়েও মনোনয়ন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। ইচ্ছেকৃত ও অন্যায়ভাবে মনোনয়ন ফরম জমা নেয়নি রিটার্নিং অফিসার। ওই আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দানের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপের কথাও জানিয়েছে দলটির নের্তৃবৃন্দ।
জোটগতভাবে ধানের শীষ প্রতীকে যে ২৩ আসনে লড়বে জামায়াত :
ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-৬ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মুক্তিযুদ্ধা মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আলহাজ্ব শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৫ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম এবং কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ।
৩০ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তাদের :
নীলফামারী-১ মাওলানা আবদুস সাত্তার, লালমনিরহাট-১ আবু হেনা মো. এরশাদ হোসেন সাজু, কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান, গাইবান্ধা-৪ ডাক্তার আবদুর রহিম সরকার, বগুড়া-৪ মাওলানা তায়েব আলী, বগুড়া-৫ আলহাজ্ব দবিবুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ অধ্যাপক ইয়াহিয়া খালেদ, নওগাঁ-৪ খ ম আব্দুর রাকিব, রাজশাহী-১ অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, রাজশাহী-৩ অধ্যাপক মাজিদুর রহমান, কুষ্টিয়া-২ আলহাজ্ব আব্দুল গফুর, চুয়াডাঙ্গা-২ মাওলানা রুহুল আমিন, যশোর-১ মাওলানা আজিজুর রহমান, পটুয়াখালী-২ ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, মৌলভীবাজার-১ মাওলানা আমিনুল ইসলাম, কুমিল্লা-৯ এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, লক্ষ্মীপুর-২ মাস্টার রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম-১৫ জাফর সাদেক। কারো স্বাক্ষর করার বিষয় অস্বীকার, কারো স্বাক্ষর নিয়ে সন্দেহ, কেউ বা মামলার তথ্য গোপন করাসহ নানা অভিযোগে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করার অভিযোগ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের টিকে রইলেন যারা :
জয়পুরহাট-১ ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ, বগুড়া-২ অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ নুরুল ইসলাম বুলবুল, পাবনা-১ ব্যারিস্ট্রার নাজিব মোমেন, পাবনা-৪ অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল, মেহেরপুর-১ তাজউদ্দিন, যশোর-৫ অ্যাভোকেট গাজী এনামুল হক, যশোর-৬ অধ্যাপক মুক্তার আলী, ময়মনসিংহ-৬ অধ্যাপক জসিম উদ্দিন সরকার, চট্টগ্রাম-১০ আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৬ মাওলানা জহিরুল ইসলাম।
তবে দিনাজপুর-৪ আসনের মাওলানা আফতাব উদ্দিন মোল্লার ব্যাপারে কোনো সঠিক তথ্য জানা যায়নি।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম সময় নিউজকে বলেন, ‘আয়কর দাখিল না করার অভিযোগে দিনাজপুর-১ আসনের জোটের প্রার্থী মো. আবু হানিফের মনোয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। এটি ঠুনকো অভিযোগ। আমরা এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নেব। আপিলে সব টিকে যাবে ইনশাআল্লাহ।’
যদিও জামায়াতের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবার ২০ দলীয় জোট থেকে ২৫টি আসনে জামায়াতকে ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপির সাথে এ নিয়ে কয়েক দফা দর কষাকষির পর ২৫ আসন পায় জামায়াত। তবে জামায়াতের অসন্তুষ্টি বাড়ে ওই আসনগুলোতে জামায়াতের বিপরীতে বিএনপির প্রার্থীকে প্রত্যাহার না করায়।
দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য জানান, সমঝোতায় জামায়াত ২৫ আসন মেনে নিলেও দাবি ছিল তাদের (বিএনপি) প্রার্থীদের যেন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কিন্তু তারা করেনি। যদিও বলা হয়েছে প্রত্যাহারের সুযোগ হয়েছে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তাই বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে আরও ৩০ জন জামায়াত নেতাকে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র নিতে বলা হয়।
সূত্রে জানা গেছে, এক নারী স্বাক্ষর দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করার অভিযোগে নীলফামারী-১ এর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুস সাত্তারের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই প্রার্থী আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘যে নারী স্বাক্ষর নিয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা অভিযোগ তুলেছেন তাকে হাজির করা হলেও তারা তা মানেননি। আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। আমাদের আপিলে যেতে বলেছেন তারা। আমরা আপিল করবো।’
বগুড়া-৪ আসনের জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা তায়েব আলীর মনোয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই প্রার্থীর অভিযোগ, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। কিন্তু এখন তারা বলছেন- (পদত্যাগ) একসেপ্ট করেনি। এটা চাপে রাখার কৌশল। আমরা আপিল করবো।’
সেই হিসেবে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের দিনই জামায়াতের ২৩ জন প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক পেলেন। আর দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী টিকে রইলেন ১২ জন।
জামায়াতের অভিযোগ ‘ঠুনকো কারণে’ তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আপিল করার কথা ভাবছে তারা। সেইসঙ্গে রয়েছে জোটের মধ্যে দর কষাকষির ভাবনাও।