বাংলাদেশে প্রতি তিনজনের একজন লিভার রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন লিভার বিশেষজ্ঞরা। হেপাটোলজি সোসাইটি আয়োজিত পঞ্চম আন্তর্জাতিক লিভার সম্মেলনে অংশ নিয়ে তারা এ কথা জানান। বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে ১ কোটি ক্রনিক হেপাটাইটিস এবং সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রতি তিনজনে একজন কোনো না কোনোভাবে লিভার রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি, সি ও ফ্যাটি লিভার ছাড়াও সারা বছর হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলতে থাকে। চলতি বছরের এপ্রিল ও জুলাই মাসে চট্টগ্রামে হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করে।
অধ্যাপক মবিন খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম এ মালিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আবু সাইদ, ডা. শাহিনুল আলম, ডা. গোলাম মোস্তফা, ডা. গোলাম আজম ও ডা. মোতাহার হোসেন।
সম্মেলনে আন্তর্জাতিক লিভার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধ্যাপক কুমার বিশ্বনাথান, ফ্রান্সের রেলোকা পাইস, সিঙ্গাপুরের প্রফেসর লিম সিং, যুক্তরাজ্যের প্রফেসর ইমানোয়েল সোসাজ্জিস, প্রফেসর অনীল ধাওয়ান, ডা. অনিতা ভার্মা, ডা. অনিতা ব্যানার্জি, জাপানের হীরানাও অকোবো এবং ভারতের প্রফেসর নাগেশ্বর রেড্ডি ও মিশরের অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব আলী। লিভার সম্মেলনে বাংলাদেশের দুই সহস্রাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন।
অধ্যাপক মবিন খানের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে লিভার রোগের প্রাদুর্ভাবেরও বিবর্তন হচ্ছে। লিভার-সংক্রান্ত সংক্রামক ব্যাধির প্রবণতা থেকে অসংক্রামক ব্যাধির উচ্চ প্রাদুর্ভাবে বিবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে উভয় প্রকার লিভার রোগের প্রবণতার মুখোমুখি হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সম্মেলনের বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নির্মুল, হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস নিরাময়, ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ, শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের লিভার রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে শীর্ষস্থানীয় লিভার বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন।
মিশরের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আব্দুল ওয়াহাব আলী মিশরের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার স্থাপনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার চালু করার বিষয়ে প্রযুক্তিগত পরমর্শ দেন। লিভার রোগ নির্ণয়ে ইমেজিং বিষয়ে বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন হায়দরাবাদের ইআরসিপি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নাগেশ্বর রেড্ডি ও জাপানের এমআরআই বিশেষজ্ঞ হীরনাও অকোবো।
সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রতিটি নগর হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাসের সাময়িক মহামারির ঝুঁকিতে আছে। তবে সেটা মোকাবেলা করার জন্য তেমন প্রযুত্তিগত প্রস্তুতি নেই। তাই লিভার রোগের এমন প্রবণতা মোকাবেলা করার জন্য অনতিবিলম্বে দেশে একটি স্বতন্ত্র লিভার ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করা জরুরি এবং প্রয়োজন এক হাজার লিভার বিশেষজ্ঞ।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশের লিভার বিশেষজ্ঞের সংখ্যা একশোর নিচে। অর্থাৎ প্রতি বিশ লাখে একজন মাত্র লিভার বিশেষজ্ঞ আছেন।
হেপাটোলজি সোসাইটি, ঢাকার জেনারেল সেক্রেটারি ডা. মো. শাহিনূল আলম স্বাক্ষরিত প্রেসবার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।