বাঙালির সচ্ছলতা এসেছে। আটা , কলাই আর বান রুটিকে পাশে রেখে রুমালী রুটি, গার্লিক নান উঠছে পাতে। রুমালী রুটি আস্ত পাওয়া গেলেও, গার্লিক নান পরিবেশন হয় টুকরো করে। পাতে কে কয়টি তুলে নিতে পারলো, তার এক ধরনের নীরব প্রতিযোগিতা চলে মিলেমিশে খেতে বসলে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখন মিলমিশের খেলা চলছে। লক্ষ্য গার্লিক নান, অর্থাৎ ক্ষমতা। ভোটারদের এক প্রকার ধারণা দিয়ে রাখা হয়, ভোট হবে আদর্শের। আদর্শের বাস্তবায়ন করতেই লড়াইতে জিততে হবে। ভাগিদাররাও এমন আবেগপনা দেখান যে, কোন একটি প্রতীক বা দলের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।
‘ব্যক্তির মতো করে দলও উচ্চকণ্ঠে থাকে-আদর্শের সঙ্গে আপোস নেই। কিন্তু প্রতিবারই ভোটাররা দেখতে পান ক্ষমতায় যেতে বা ক্ষমতায় থাকতে আদর্শকে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেয় রাজনৈতিক দলগুলো। তারা পরিবেশন করা গার্লিক নানের টুকরা এক যোগে জড়ো করে পূর্ণ রুটির স্বাদ নিতে চান।’
ব্যক্তির মতো করে দলও উচ্চকণ্ঠে থাকে-আদর্শের সঙ্গে আপোস নেই। কিন্তু প্রতিবারই ভোটাররা দেখতে পান ক্ষমতায় যেতে বা ক্ষমতায় থাকতে আদর্শকে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেয় রাজনৈতিক দলগুলো। তারা পরিবেশন করা গার্লিক নানের টুকরা এক যোগে জড়ো করে পূর্ণ রুটির স্বাদ নিতে চান।
এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটছেনা। প্রধান রাজনৈতিক দল গুলো জোট, ঐক্য তৈরি করে সেই পূর্ণ রুটির স্বাদ নেবার জন্য এখন ভোটের মাঠে। বড় দল গুলো যখন মনোনয়নের বাক্স উন্মুক্ত করে, তখন হামলে পড়ার লোকের অভাব হয় না। দলের খেটে খাওয়া কর্মীরা তো হাত বাড়াবেনই। তাদের হক ন্যায্য হক। কিন্তু সেই হাতকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেবার লোকেরও অভাব হয় না। তারা এসে ভিড় করেন। শক্তি-বলের দিক থেকে তারা কম যান না। বরং পেশিশক্তি বেশিই।
ব্যবসা, সাবেক পেশার জোরতো আছেই। তাই দিয়ে কুপোকাত করতে চান দলের কর্মিদের। তাদের হাতে আদর্শের ঝান্ডা নেই। তবে মনোনয়ন বাগাতে আদর্শের মন্ত্র বিড়বিড় করেন। কখনও দৃশ্যমান দরদি ভাবও দেখান। তবে তাদের ভেতরের বাণী হলো-সরাসরি বায়না মনোনয়ন দেন ক্ষমতায় যাই।
কেউ কেউ ভবিষ্যৎ মন্ত্রিসভা নিয়েও দরকষাকষি করে নিতে চান। সব সময় যে তারা ব্যবসার মুদ্রা, পেশার উত্তাপে প্রথম কাঙ্খিত দলকে ভজাতে পারেন তা নয়। যখনই সেই দল ভজলোনা। ব্যস পর মূহুর্তেই বিপরীত শিবিরে গিয়ে হাত পেতে দাঁড়িয়ে পড়েন। ঐ শিবিরও তখন প্রতিপক্ষের প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে পেতে দেয়া হাতে মনোনয়ন তুলে দেয়।
এক সময় এ প্রকারের প্রার্থীদের সম্পর্কে বলা হত, আদর্শের ডিগবাজি দিচ্ছেন। এখন আর বলা হয় না। ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকে এই ২০১৮ পর্যন্ত কমতো দেখেননি ভোটাররা। ধানমন্ডি থেকে বঞ্চিত হয়ে গুলশানে দৌড়। গুলশানে না পেলে ধানমন্ডিতে এসে হাত পাতা।
এই পাতা দলের মানুষ গুলো একাধিকবার একাজ করেছেন। প্রতিবার তাদের আবদারও রেখেছে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু এদের জন্য বড় রাজনৈতিক দল গুলোরে তৃণমূলের লড়াকু কর্মী এবং নেতারা বঞ্চিত হয়েছেন বারবার। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ১৯৯১ থেকে চলমান এই প্রক্রিয়া তৃণমূলের রাজনীতিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তৃণমূলে কর্মীরা এখন আর আদর্শিক রাজনীতি উদ্বুদ্ধ নয়। কারণ তারা জানেন, শেষ পর্যন্ত গার্লিক নানের টুকরোটি তার পাতে উঠবে না। তাই এখন তৃণমূলেও নগদের রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। নগদে রুটির পোড়া অংশ পেলেও ক্ষতি কি? তবুওতো পাতে কিছু উঠলো।
এই নগদের রাজনীতি তৃণমূলেও চলছে মিলেমিশে। ২০১৮তে এসে রাজনীতি এখন আর পূর্ণিমা চাঁদের দিকে তাকায় না, চোখ রাখে গার্লিক নানের প্লেটারে!