অরক্ষিত রেলক্রসিং, অপরিকল্পিত ও অননুমোদিত সংযোগ এবং সচেতনতার অভাবে অকাতরে প্রাণ যাচ্ছে। এটি উদ্বেগজনক। কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ সম্পর্কে জাগো নিউজে প্রকাশিত রিপোর্টে উঠে এসেছে হতাশাজনক চিত্র। রাজবাড়ী জেলার রেললাইনের অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে- জেলায় ৮৮টি রেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ৬৮টি রেল ক্রসিংই অরক্ষিত। নেই কোনো প্রতিবন্ধক ও গেটম্যান। ফলে মাঝে মধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর বালিয়াকান্দির জামালপুরে রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হন চারজন। সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান একজন। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন।
অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং, অপরিকল্পিত সংযোগ সড়ক এবং সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি রেলে দুর্ঘটনার পেছনে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর অব্যবস্থাপনাও দায়ী। রেলওয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিন কারণে রেল দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে লেভেল ক্রসিং দুর্ঘটনা, সিগন্যাল লাইনে ত্রুটি এবং উন্নয়ন কাজ চলা অবস্থায় ট্রেন লুপ লাইন কিংবা সাইড লাইনে চলে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়
জেলা শহরের বাইরে বহু ব্যস্ততম রেল ক্রসিং রয়েছে। যার দু-একটি স্থানে গেটম্যান ও প্রতিবন্ধক রয়েছে। বেশির ভাগ ক্রসিংয়ে নেই গেটম্যান ও প্রতিবন্ধক। মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক, গ্রাম্য সড়ক, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে রয়েছে এসব রেল ক্রসিং। ট্রেনের টাইম অনুযায়ী অনেক সময় রেল ক্রসিং এলাকায় থাকা সাধারণ জনগণ নিজ দ্বায়িত্বে গেটম্যানের কাজ করেন। কিন্তু তারপরও ঘটছে ট্রেন দুর্ঘটনা। এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ট্রেন দুর্ঘটনায় রাজবাড়ীতে ১২ জন মারা গেছেন। গত বছর ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন ২৩ জন।
গত আড়াই বছরে রেল দুর্ঘটনায় (নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-গাজীপুর) মারা গেছেন আট শতাধিক। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আরও ছয় শতাধিক। শুধু রেলওয়ে পুলিশের হিসাব মতে, মৃত্যুর সংখ্যা ৭০০। বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) কমলাপুর থানা সূত্রমতে ২০১৫ সালে রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৪৮ ও নারী ৪৪ জন। অপমৃত্যু (ইউডি) মামলাসহ মোট মামলার সংখ্যা ২৮৫টি। ২০১৬ সাল রেল দুর্ঘটনায় মারা যান ৩০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৪৪ ও নারী ৬১ জন। ইউডি মামলাসহ মোট মামলা ৩০৫টি। গত বছর জানুয়ারি থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত মারা গেছেন ১০৩ জন। এর মধ্যে শুধু জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫, মার্চে ২৩ ও এপ্রিলে ২২ জন মারা যান।
অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং, অপরিকল্পিত সংযোগ সড়ক এবং সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি রেলে দুর্ঘটনার পেছনে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর অব্যবস্থাপনাও দায়ী। রেলওয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিন কারণে রেল দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে লেভেল ক্রসিং দুর্ঘটনা, সিগন্যাল লাইনে ত্রুটি এবং উন্নয়ন কাজ চলা অবস্থায় ট্রেন লুপ লাইন কিংবা সাইড লাইনে চলে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
রেল যোগাযোগ অনেকটা সাশ্রয়ী ও নিরাপদ হওয়ায় লোকজন রেলে যাতায়াত করে থাকে। সরকারও রেলের প্রভূত উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মেট্রো রেলের যুগেও প্রবেশ করতে যাচ্ছে দেশ। ভবিষ্যতে রেলপথও বাড়বে। কিন্তু সে তুলনায় নিরাপদ হয়নি রেল যোগাযোগ। রেলপথের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এমনিতে রেলপথের একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সাধারণের প্রবেশ আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু এই আইন বাংলাদেশের মতো দেশে মেনে চলা হয় কি?
সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে লেভেলক্রসিং। দেশের দুই হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথে প্রায় দুই হাজার ৫৪১টি লেভেলক্রসিং রয়েছে। এর বেশির ভাগেই কোনো গেট নেই। কোনো সংকেতবাতি দূরের কথা, নেই যান নিয়ন্ত্রণের কোনো কর্মী। নিয়ম অনুযায়ী কোনো রেললাইনের ওপর দিয়ে সড়ক নিয়ে যেতে হলে গেট নির্মাণ, কর্মী নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক সব স্থাপনা নির্মাণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থার। এসব দেখার যেন কেউ নেই। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। রেল যোগাযোগ নিরাপদ করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালাতে হবে।