ইদানিংকালে যে বিষয়ে বলা আর বিশেষ করে লেখা সবচাইতে কঠিন তা বোধ করি বিগত দশ বছরে দেশের নানা খাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন আর দেশের মানুষের জন্য তার সরকারের ভালোর চেয়েও আরো ভালো কাজগুলোর ফর্দ প্রণয়ন। আমি হলফ করে বলতে পারি আওয়ামী লীগের অন্ধতম সমর্থকটিও এই কাজ পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পাদন করতে পারবেন না। কারণটা সোজা। কারণ এমন কোন কিছু কোনদিনও দেখেনি বাংলাদেশ।
জানিনা দেখেছে কিনা কোন জাতি, কোন দিনও মাত্র দশটি বছরের মেয়াদে। কাজেই পেশায় যতই চিকিৎসক হই না কেন, যে বিষয়ে লিখতে বসেছি তা যে লেখার শেষে অসম্পূর্ণই থেকে যাবে এ নিয়ে আমার অন্তত কোন সন্দেহ নেই। আর সে কারণেই খুবই সচেতনভাবে লেখার শিরোনামটি নির্ধারণ করা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের স্বাস্থ্যখাতে অন্যতম অর্জন একটি জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন। ২০০০ সালে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে এই সরকারের মেয়াদকালেই ২০১১ সালে যুগোপযোগী করা হয়েছে। একই ভাবে হালনাগাদ করা হয়েছে জাতীয় ওষুধনীতিও।
‘মনে রাখতে হবে তিনি যে শুধু স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান আর স্বপ্ন পূরণ করেন তাই নয় তিনি দেখেন বহুদূর। তার দৃষ্টি এখন রূপকল্প ২০২১, মিশন ইনোভেশন ২০৪১ ছাড়িয়ে ডেলটা প্ল্যান ২১০০’তে প্রসারিত। ’
বর্তমানে দেশের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করার পাশাপাশি বিশ্বের শতাধিক দেশে আমাদের ওষুধ রপ্তানি করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে একটি আধুনিক জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির পাশাপাশি একটি যুগোপযোগী ওষুধনীতির প্রয়োজনীয়তা ছিল অনস্বীকার্য। আওয়ামী লীগ সরকার সেই দায়িত্বটি সুনিপুণভাবে পালন করেছেন।
স্বাস্থ্যখাতে আওয়ামী লীগ সরকারের আরেকটি নন্দিত অর্জন কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মত ক্ষমতায় এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ছয় হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তার প্রথম মেয়াদেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১০ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক। পরবর্তীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এসব ক্লিনিকগুলোকে গবাদী পশুর চারণক্ষেত্রে পরিণত করেছিল।
আবারো ক্ষমতায় এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু যে এই অনন্য মানবিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংখ্যাই বাড়িয়েছেন তাই নয় বরং একে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যেও নিয়ে এসেছেন যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ খাম-খেয়ালির বশে কমিউনিটি ক্লিনিককে বন্ধ করে দিতে না পারে।
পাশাপাশি দেশের বিদ্যমান সরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিরবচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার তাগিদে গত দশ বছরে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিশ হাজারেরও বেশি চিকিৎসককে। ঢেলে সাজানো হয়েছে দেশের স্বাস্থ্য প্রশাসনকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বিভাগকে দুটি বিভাগে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনা হয়েছে। নিয়মিত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসক এবং চিকিৎসা প্রশাসকদের আবাসন, পরিবহনসহ অন্যান্য সুবিধাদি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা দিয়েছিলেন আর তার সুযোগ্য কন্যা দায়িত্বে এসে নার্সদের দিয়েছেন দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার সস্মান।
দেশে অসংখ্য নতুন বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি, নিউরোসাইন্স, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, ইএনটিসহ একাধিক ন্যাশনাল পোস্টগ্র্যাজুয়েট ইন্সটিটিউট। কুর্মিটোলা, মুগদা, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিট-২, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ইউনিট-২, শেখ ফজিলাতুন্নেছা চক্ষু হাসপাতাল ইত্যাদি নতুন হাসপাতাল শেখ হাসিনার সরকারেরই অর্জন।
নতুন শয্যা সংযোজন আর আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে জাতীয় হৃদরোগ, কিডনী, মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য, অর্থপেডিক ইনস্টিটিউট আর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আর আজিমপুরের মা ও শিশু হাসপাতালসহ অসংখ্য হাসপাতালের। পাইপ লাইনে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপারস্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং জাতীয় লিভার ও ফিজিক্যাল মেডিসিন ইন্সটিটিউটের মত অতি প্রয়োজনীয় হাসপাতালগুলো।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২৪টি নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজ আর এগুলো স্থাপিত হয়েছে জেলায় জেলায়। এর ফলে ভবিষ্যতে চিকিৎসার জন্য এদেশে চিকিৎসকের ঘাটতি জনিত হাহাকার যে আর থাকবে না তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। পাশাপাশি চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলা আর দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণার প্রসারের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। আর চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নতুন পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ক্ষমতায় ফিরে এসে দেশের অবশিষ্ট বিভাগগুলোতেও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যখাত বাদ যায়নি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটালাইজেশনের সুফল থেকে। দেশের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে জাতীয় ইন্সটিটিউট পর্যন্ত সকল হাসপাতালে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রবর্তন করা হয়েছে ই-গর্ভনেন্স ও ই-টেন্ডারিং। সরকারি হাসপাতালগুলোকে সদ্যই আনা হচ্ছে অটোমেশনের আওতায়।
দেশব্যাপী চিকিৎসা ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকারের যে বিপুল অর্জন তার স্বীকৃতিতে ভুল করেননি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও। তার আরো অসংখ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতে অর্জিত সাউথ সাউথ এওয়ার্ড, এমডিজি ফোর এওয়ার্ড ইত্যাদিও আমাদের রাষ্ট্রীয় তোষাখানা জাদুঘরকে আলোকিত করে রাখবে।
লেখার যখন শেষপ্রান্তে, মুগ্ধ হয়ে ভাবছি তখন সাধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই মহিয়সী নারীকে রোল মডেলের আসনে বসায়নি। আমরা সৌভাগ্যবান যে আমরা পেয়েছি আমাদের মাথার উপর ‘মাদার অফ হিউমেনিটি’ যিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ‘এ ডটারস টেলকে’ বাস্তবে রূপায়িত করায়। আমাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করব আমরাই। ত্রিশ তারিখ যদি আমরা ভুল করি, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশকে ছিঁড়ে খাবে হিংস্র হায়েনার দল। আর ত্রিশে ভুল না করলে আমার -আপনার সন্তান-সন্তুতি, তাদের সন্তান-সন্তুতি এবং তাদেরও সন্তান-সন্তুতির জন্য একটি উন্নত, নিরাপদ, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের গ্যারান্টি আর কেউ না দিক দিবে বাংলার মাটি, বাংলার মানুষ।
মনে রাখতে হবে তিনি যে শুধু স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান আর স্বপ্ন পূরণ করেন তাই নয় তিনি দেখেন বহুদূর। তার দৃষ্টি এখন রূপকল্প ২০২১, মিশন ইনোভেশন ২০৪১ ছাড়িয়ে ডেলটা প্ল্যান ২১০০’তে প্রসারিত।