ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৪০তম দিবস আজ বৃহস্পতিবার। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ব্যাপক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
দিনব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাঁকজমকভাবে এ দিনটিকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে একটি ইসলামী উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ছিল এ দেশের ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ গণমানুষের দাবি।
১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৭৭ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে প্রত্যেক মুসলিম দেশে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পেশ করেন।
এ দেশে আন্তর্জতিক মানসম্পন্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এমএ বারীর নেতৃত্বে গঠিত হয় কমিটি।
কমিটির রিপোর্টের আলোকে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর শান্তিডাঙ্গার শান্ত পল্লীতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থানে দুলালপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাঁকজমকভাবে এদিনটিকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়া ১৭৫ একরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধীনে ৩৩টি বিভাগ, একটি ইনস্টিটিউটে রযেছে ১২ হাজার ৮১১ শিক্ষার্থী (ছাত্র ৮ হাজার ৬৪৬, ছাত্রী ৪ হাজার ১৬৫ জন)।
শিক্ষক রয়েছেন ৪১০ জন, কর্মকর্তা ৪২৫, সহায়ক কর্মচারী ২০৯ ও সাধারণ কর্মচারী ১৯০ জন। এম.ফিল কোর্সে ২৮৫ জন ও পিএইচডি গবেষণাকর্মে নিযুক্ত রয়েছেন ৩৫৭ শিক্ষার্থী।
প্রথম ভিসি প্রফেসর ড. এsএনএম মমতাজ উদ্দীন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (১২তম) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী।
সহযোগী হিসেবে রয়েছেন প্রোভিসি ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান ও ট্রেজারার আইন বিভাগের প্রফেসর ড. সেলিম তোহা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা সংকটে কেটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯টি বছর। দীর্ঘ সময় পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা নিবিড়ভাবে ভাবেনি কোনো প্রশাসন। ফলে বছরের পর বছর ঘটা করে প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কী পালিত হলেও পালিত হয়নি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দিবস।
অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম লক্ষ্য ছিল- এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হবে। কৈশোর পেরিয়ে ৩৯ বছরের ভরা যৌবনে পদার্পণ করলেও পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতার তকমা এখনও যুক্ত হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে।
এর ভুক্তভোগী হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ থেকে দীর্ঘ ২৪ ও ২২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় শিক্ষার্থীদের। মফস্বল এলাকায় গড়ে ওঠা এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রশাসনকে ভাবতে হচ্ছে ভিন্ন কিছু। আবাসন সংকট নিরসনে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান প্রশাসন।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরে কাঠামোগত উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে ৫৩৭ কোটি টাকা। এ প্রজেক্ট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে স্বপ্নপূরণে এক ধাপ এগিয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
পাসকৃত অর্থে ছাত্রছাত্রীদের (২+২) জন্য ১০ তলা ৪টি আবাসিক হল, সদ্য নির্মিত শেখ রাসেল হলের ১০ তলা একটি ফেজ এতে সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন সংকট দূর হবে। কিন্তু ৩০ শতাংশ সংকট থেকেই যাবে।
যার জন্য প্রশাসনকে শাটল ট্রেন ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে ৯টি ১০ তলা ভবন ও একটি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণ এবং ১৮টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে।
২০২২ সালের মধ্য এই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছে প্রকৌশল অফিস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জেষ্ঠ্য প্রফেসর আব্দুল মুঈদ সময়কে বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের হতে হলে প্রথমত টিচিং স্টাফকে রিচ করতে হবে। মেধাবী শিক্ষক প্রথম শর্ত। দ্বিতীয়ত লজিস্টিক সাপোর্ট কর্নফার্ম করতে হবে। অর্থাৎ সব প্রকার ল্যাব সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যলয় বর্তমান প্রশাসনের প্রচেষ্টায় কিছুটা সফলতা দেখতে শুরু করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ সমাবর্তন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২২ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিকরণ, বঙ্গবন্ধুর ওপর শিক্ষা ও গবেষণা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা, বিভাগগুলোর সেশনজট সহনীয় পর্যায়ে উন্নতিকরণ, (বেশ কয়েকটি বিভাগে দেড় বছর থেকে ৬ মাসের জট রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।) বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকাংশে ইন্টারনেটের আওতাভুক্তকরণ, লাইব্রেরির ডিজিটালাইজেশনের কাজ ত্বরান্বিত, প্রধান ফটকসংলগ্ন (অভ্যন্তরে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’, ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে শহীদ মিনার এবং স্বাধীনতার স্মারক ‘স্মৃতিসৌধ’-এর মাঝে নির্মিত নান্দনিক সততার স্মারক ‘সততা ফোয়ারা’ এবং ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধিতকরণ, একাডেমিক উন্নয়নসহ, কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি, শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ, নতুন বিভাগ খোলা, অনুষদ চালু, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পঠন-পাঠন ও গবেষণার জন্য কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠাকরণ, তিন বছরমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা (অগ্রানোগ্রাম) চালু করা হয়েছে।
এতে আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী তিন বছরের মধ্য ৫৯টি বিভাগ, ৮টি অনুষদ খোলা হবে। এ ছাড়া দুটি নতুন ইনস্টিটিউট এবং একটি সম্বন্নিত ল্যাবও খোলা হবে বলে জানা গেছে। চলছে দৃষ্টিনন্দন লেক ‘মফিজ লেক’ তৈরির কাজও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারর প্রফেসর ড. সেলিম তোহা সময়কে বলেন, দীর্ঘ এ পরিক্রমা আমাদের জন্য আনন্দের। একাডেমিক, প্রশাসনিক, ক্রীয়া এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এখনও অনেক অর্জন বাকি রয়েছে। আমরা অনেক দূর যেতে চাই, চেষ্টা করে যাচ্ছি। মেগাপ্রজেক্ট যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষকতা জীবনে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের মনোছবি যথার্থভাবে রূপলাভ করবে বলে বিশ্বাস করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান সময়কে বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারীরা দেশ-বিদেশের অনেক বড় জায়গা দখল করে আছে। যেটি আমাদের জন্য আনন্দের। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি আরও অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে এবং বর্তমান প্রশাসনের সময় শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি পেয়েছে। অচিরেই বিশ্ববিদ্যারয়টি বিজ্ঞানমনষ্ক এবং আন্তর্জাতিকমানে উন্নতি লাভ করবে। এ প্রত্যাশা আমার প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কীতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী সময়কে বলেন, এই ৪০ বছরে আমরা অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি। এ জয়ন্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার কাছে নিবেদন, বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কতটুকু দিয়েছে তার হিসাব না করে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে কতটুকু দিতে পেরেছি তার হিসাব করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করি।