বড় নেতাদের কথায় হেলমেট পড়েছিল যাতে নাশকতার সময় কেউ তাদের শনাক্ত করতে না পারে বলে জানিয়েছে রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের গাড়ির ওপর লাফানো ওই যুবক। যারা এই হামলার পরিকল্পনা করেছে তাদের উদ্দেশ্য ছিল পুলিশকে উসকানি দিয়ে পুলিশকে অ্যাকশনে যেতে বাধ্য করা। যেন পুলিশের অ্যাকশনের ভিডিও দেখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ও গাড়ি ভাঙচুরসহ আগুন দেওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া তিন মামলার মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় পুলিশের করা রিমান্ড আবেদন শুনানি হয়।
এ সময় রিমান্ড বাতিল করে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। বিচারক উভয় পক্ষ শুনে জামিন নাকচ করে প্রত্যেক আসামির পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরা হলেন- হেলমেট পড়া যুবক এইচ কে হোসেন আলী, মো. আশরাফুল ইসলাম (রবিন), সোহাগ ভূইয়া, আব্বাস আলী, মাহাবুবুল আলম ও জাকির হোসেন উজ্জ্বল।
শুনানির সময় প্রসিকিউনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আসামিরা ছাত্রদলের নেতাকর্মী। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাদের সনাক্ত করা হয়েছে। সোমবার রাজধানীর সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এমন তথ্য দিয়েছে। আসামিদের হেফাজতে (রিমান্ডে) নিয়ে জিজ্ঞাাসাবাদ করলে হামলার পরিকল্পনাকারীদেরসহ সহযোগী অন্যান্যদের সম্পর্কে তথ্য জানা সম্ভব হবে। প্রার্থিত রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক কামরুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন।
এদিকে সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আসামিদের মধ্যে হোসেন আলী হেলমেট পরে শার্ট খুলে পুলিশের গাড়ির ওপর উঠে লাফিয়েছিল, সোহাগ শার্ট খুলে লাঠি হাতে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে, আব্বাস আলী গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা করেছে, আশরাফুল ইসলাম পুলিশের পিকআপ ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা করেছে। এ ছাড়াও উজ্জ্বল ও মাহবুবুল পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধ করেছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, বড় নেতারা তাদের হেলমেট পরে যেতে বলে যাতে নাশকতার সময় কেউ তাদের শনাক্ত করতে না পারে। এ ছাড়া সেখানে আগে থেকেই লাঠিসোটা রাখা ছিল।
প্রসঙ্গত, দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মধ্যে গেল বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। রাতে দণ্ডবিধি, বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ আইনে পল্টন থানায় মামলা পৃথক তিনটি মামলা করে পুলিশ। তিন মামলায় মোট ৪৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে হাজারখানেক অজ্ঞাত আরো সহস্রাধিক জনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আকতারুজ্জামান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির সভাপতি নবীউল্লাহ নবীকে হুকুমের আসামি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মদদে ও নির্দেশেই পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে সরকারি কাজে বাধা, জানমালের ক্ষতি, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি পুড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
উল্লেখ্য, এ মামলাতেই গত শুকবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীসহ সাতজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ডে দেওয়া হয়েছে। অন্যরা হলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা, ইউনুস মৃধা, মো. আবুল হাশিম সবুজ, মো. মামুন অর রশিদ, মো. আমির হোসেন ও মো. মহাসিন।