আজিজুস সামাদ ডন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে। বাবার পথ ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে আছেন তিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ডন এবার দলীয় মনোনয়নে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সাংসদ এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।
আওয়ামী লীগ এখনও কোনো আসনেই তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে জোর কানাঘুষা চলছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন এম এ মান্নান। এই কানাঘুষা বাস্তব হলে কপাল পুড়বে আজিজুস সামাদ ডনের। গেল দশম জাতীয় নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় ছিলেন ডন। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে এম এ মান্নানের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে ডনকে অনেক ‘কথা শুনতে হয়’। অবশ্য ডনের দাবি, সেবার দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে ইঙ্গিত পেয়েই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।
এবারও যদি দল আজিজুস সামাদ ডনকে মনোনয়ন না দেয়, সেক্ষেত্রে তিনি কী করবেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মিলেছে অন্যরকম আভাস। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়ার পথ ‘ধরতে পারেন’ আজিজুস সামাদ ডন; যোগ ‘দিতে পারেন’ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই অংশ নিতে পারেন নির্বাচনে। তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকেও সেরকম আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য, মনোনয়ন না পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দিয়ে স্বতন্ত্র থেকেই ডন আবারও প্রার্থী হতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আজিজুস সামাদ ডনের ঘনিষ্ঠজন জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দ্বীপ সূত্রধর বীরেন্দ্র বলেন, ‘আজিজুস সামাদ ডনকে নিয়েই আমরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চাই। তিনি নৌকা প্রতীক পাওয়ার দাবিদার। জনপ্রত্যাশাও এমন। কিন্তু কোন কারণে যদি ডনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া না হয়, তাহলে ২৭ নভেম্বর আমরা বসে করণীয় ঠিক করবো। আমরা চাই, যে কোন প্ল্যাটফর্ম থেকেই হোক, ডন সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে এবার নির্বাচন করুন। তিনি নির্বাচন করলে জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
ডনের আরেক ঘনিষ্ঠজন, জগন্নাথপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব মো. আবাব মিয়া বলেন, ‘আজিজুস সামাদ ডন সবসময় দলের প্রতি আস্থাশীল, সবসময় দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলেছেন। দলের জন্য তিনি অনেক সময় ও শ্রম দিয়েছেন। পক্ষান্তরে এ আসনে অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জনবিচ্ছিন্ন। দলীয় মনোনয়ন না পেলে ডন যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা সেই সিদ্ধান্তের সাথে ঐক্যমত পোষণ করবো। তিনি স্বতন্ত্র বা অন্য কোনো জোট থেকে নির্বাচন করলেও আমরা তার সাথে থাকবো।’
আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। তিনি ছিলেন হবিগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ। তাঁর ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া গত রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছেন। গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের হাতে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেন তিনি। আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ ডনও কী সে পথে হাঁটবেন?
আজিজুস সামাদ ডন সরাসরি এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি এখনও আত্মবিশ্বাসী, আওয়ামী লীগ তাঁকে মূল্যায়ন করবে এবং তিনি দলীয় মনোনয়নেই নির্বাচন করবেন।
আজিজুস সামাদ ডন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি এলাকায় কাজ করছি, দলকে সুসংগঠিত করেছি। মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমি কখনোই কিছু করিনি। আমার কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আমি বিশ্বাসী। দলীয় মনোনয়ন না পেলে কী করবো, সে সিদ্ধান্ত পারিবারিকভাবে ও নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে গ্রহণ করবো। তবে এলাকার সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের চাপ আছে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার।’