২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৩৭

মাথা ছাড়াই দেড় বছর বেঁচেছিল যে মুরগি!

মাথা ছাড়া কেউ কোনও দিন বাঁচতে পারে? কল্পবিজ্ঞানে তো এসব স্বাভাবিক ঘটনা, কিন্তু বাস্তবে? অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটা দেখা গেছিল একটা মুরগির ক্ষেত্রে। একদিন, দু’দিন নয়, টানা আঠারো মাস বেঁচেছিল ছোট্ট প্রাণীটা, তা-ও আবার মাথা ছাড়া!

খাবার দোকানে মুরগি সাপ্লাই করতেন কলোরাডোর ফ্রুটা শহরের লয়েড ওলসেন ও তাঁর স্ত্রী ক্লারা। ১৯৪৫-এর সেপ্টেম্বরের এক সকালে প্রায় চল্লিশটি মুরগি কাটার পর তাঁদের নজর পড়ে, ধড় থেকে মাথা আলাদা হলেও একটি মুরগি টলতে টলতে হেঁটে-দৌড়াচ্ছে। মাথাহীন মুরগির মৃত্যুর অপেক্ষায় সেটিকে একটি বাক্সে রেখে দিয়ে ঘুমাতে যান দম্পতি।

পর দিন সকালে ঘুম ভেঙে তাঁরা যা দেখলেন, তাতে অবাক বললেও কম বলা হয়। সোনার ডিম না পাড়লেও এই মুরগির ‘ক্ষমতা’ যে তার চেয়ে কিছু কম নয়, তা বুঝতে দেরি করেননি ওলসেন। দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে ছোট্ট শহরে। টনক নড়ে সংবাদিকদের। দু’দিন আগেও যার পরিণতি লেখা ছিল খাবারের প্লেটে, রাতারাতি সে হয়ে যায় সেলেব্রিটি।

এক কথায়, অলৌকিক ভাবে নতুন জীবন পাওয়া মুরগির পোশাকি নাম হয় ‘মিরাক্‌ল মাইক’। মহার্ঘ পাখিটাকে দেখতে চার দিকে হইচই পড়ে যায়। সাধের মুরগিকে নিয়ে প্রদর্শনীর সুবাদেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেখার স্বপ্ন সত্যি হয় লয়েডের।

কিন্তু মাথা ছাড়া কী ভাবে বেঁচে রইল মাইক? আমার-আপনার মতো এই প্রশ্ন জেগেছিল চিকিত্সক ও প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মনেও। কারণ, পরবর্তী সময় অনেকেই দ্বিতীয় মিরাক্‌ল মাইক বানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। তা হলে কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বেঁচেছিল মাইক?

আসলে লয়েড যখন মাইকের মাথায় কোপ মারেন, তখন তার একটা কান বাদ দিয়ে চোখ, ঠোঁট-সহ গোটা মাথাটাই কেটে যায়। কিন্তু মুরগিদের মাথার পিছনেই থাকে মস্তিষ্কের মূল অংশটা। মাইকের ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে যায় তার মস্তিষ্কের ৮০ শতাংশ অংশই।

মাইকের মস্তিষ্কের এই অংশটাই তার শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদ্‌স্পন্দন, খিদে, হজম নিয়ন্ত্রণ করত। সময় মতো মাইকের ক্ষতর কাছে রক্তও জমাট বেঁধে গিয়েছিল, ফলে সে ভাবে রক্তক্ষরণও হয়নি।

মাথা না থাকায় একটি ড্রপারে করে তরল খাবার ও জল সরাসরি খাদ্যনালিতে ঢেলে দেওয়া হত। সিরিঞ্জ দিয়ে খাদ্যনালির চার দিকের ময়লা পরিষ্কার করে দিতেন লয়েড। এ ভাবেই সব চলছিল।

একবার পশ্চিম আমেরিকার ফিনিক্স শহরে প্রদর্শনীর শেষে একটি মোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন লয়েড দম্পতি ও মাইক। হঠাৎই একটা শব্দে দম্পতি চমকে ওঠেন। দম আটকে মাইকের প্রাণ তখন ওষ্ঠাগত। কিন্তু ওই যে সিরিঞ্জ, সেটি প্রদর্শনীতেই ফেলে এসেছিলেন লয়েডরা।

১৯৪৭ সালের মার্চ মাসের এই রাতে খাবার আটকে প্রাণ যায় মাইকের। আর পাঁচটা সুস্থ মুরগি যখন বড় হতেই রান্নার কড়াইতে জায়গা পায়, তখন মাথা হারিয়েও তাদের চেয়ে বেশি দিন বেঁচেছিল মাইক।

যদিও মারা গিয়েও বেঁচে ছিল মাইক। তার মনিব দীর্ঘ দিন তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যেই আনেননি। কেউ খোঁজ করলেই লয়েডরা বলতেন, বেচে দেওয়া হয়েছে মাইককে। এ ভাবেই মৃত্যুর পরেও বেঁচে ছিল মিরাক্‌ল মাইকের মিথ।

কলোরাডোর ফ্রুটা শহরে গেলে এখন মাথাহীন মুরগির স্ট্যাচুর দেখা মেলে। মাইকের স্মৃতিতে প্রতি বছর মে মাসে পালন হয় ‘হেডলেস চিকেন ফেস্টিভ্যাল’। আর লোকমুখে ঘুরে বেড়ায় এই আশ্চর্য মুরগির গল্প।

প্রকাশ :নভেম্বর ৭, ২০১৮ ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ