২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:২৬

ইয়াবা সেবনে যেসব রোগের ঝুঁকি বাড়ে

ইয়াবা হচ্ছে একটি ভয়াবহ ধরনের মাদক।আকারে ছোট ও বহন করতে সুবিধা হওয়ায় এটি বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় একটি নেশাদ্রব্য। তবে এটা হচ্ছে নিশ্চিত মরণের এক পথ। যার ফলে বিপদগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ সমাজ।ইয়াবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি বা এটি শরীরের ওপর কি কি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে অনেকেই আমরা তেমন কিছুই জানি না।

নেশার এই উপকরণের মূল উপাদান মিথাইল অ্যামফিটামিন এবং ক্যাফেইন। ইয়াবাতে ২৫ থেকে ৩৫ মিলিগ্রাম মিথঅ্যামফিটামিন এবং ৪৫ থেকে ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে।

আসুন জেনে নেই ইয়াবা সেবনে যেসব রোগের ঝুঁকি বাড়ে ।

নিয়মিত ইয়াবা সেবন

নিয়মিত ইয়াবা সেবনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি, মস্তিষ্ক বিকৃতি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, হার্ট অ্যাটাক, ঘুমের ব্যাঘাত, শরীরে কিছু চলাফেরার অস্তিত্ব টের পাওয়া, অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থা, কিডনি বিকল, চিরস্থায়ী যৌন-অক্ষমতা, ফুসফুসের প্রদাহসহ ফুসফুসে টিউমার ও ক্যান্সার হতে পারে। এ ছাড়া ইয়াবায় অভ্যস্ততার পর হঠাৎ এর অভাবে সৃষ্টি হয় হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা।

ক্ষুধা কমে যাওয়া,বমি ভাব ও ঘাম

ইয়াবা খেলে সাময়িক আনন্দ ও উত্তেজনা হলেও, অনিদ্রা, খিটখিটে ভাব ও আগ্রাসী প্রবণতা, ক্ষুধা কমে যাওয়া ও বমি ভাব, ঘাম, কান-মুখ লাল হয়ে যাওয়া এবং শারীরিক সঙ্গের ইচ্ছা বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।

রক্তচাপ,শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা

বাড়ে হূৎস্পন্দনের গতি, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শরীরের তাপমাত্রা। মস্তিষ্কের ‍সুক্ষ্ম রক্তনালীগুলোর ক্ষতি হতে থাকে এবং কারও কারও এগুলো ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। কিছুদিন পর থেকে ইয়াবাসেবীর হাত ও পায়ের কাঁপুনি সহ হ্যালুসিনেশন হয়।

হার্টের ভেতরে ইনফেকশ

এছাড়া হার্টের ভেতরে ইনফেকশন হয়ে বা মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়েও অনেকে মারা যান। অনেকে রাস্তায় দুর্ঘটনায় পতিত হন। কেউ কেউ টানা সাত থেকে ১০ দিন জেগে থাকেন।

জীবনীশক্তি হ্রাস

ইয়াবা সেবনে যৌবন ও জীবনীশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। ইয়াবা সেবনকারীদের দাম্পত্য জীবন চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। ইয়াবা সেবনকারীদের নার্ভ বা স্নায়ুগুলো দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে অচল হয়ে যায়। যেহেতু ইয়াবা সেবনকারীরা শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ে,স্বাভাবিকভাবেই তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।অস্থিরতার কারণে তারা যে কোন অঘটন ঘটাতে পারে।

মস্তিষ্কের সমস্যা

ইয়াবা সেবনে মস্তিষ্কের কিছু ছোট রক্তনালি নষ্ট হতে পারে। দীর্ঘদিন সেবনে অল্প বয়সেও ব্রেনস্ট্রোক করে প্যারালাইজড হওয়া বা চলাচলে অক্ষম হওয়ার আশঙ্কা ৯৫ শতাংশ।

রক্তচাপ বেড়ে যায়

ইয়াবা সেবন দ্রুত হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ জাগিয়ে তোলে। এছাড়া তীব্র মাথাব্যথা হয় বা মাথা ধরে। তাই ইয়াবা সেবন থেকে রিবত থাকুন।

দৃষ্টিশক্তি কমে যায়

চোখের মণি প্রসারিত (ডায়ালাইটেড) হয়। দৃষ্টি আস্তে আস্তে কমে যায় বা নষ্ট হয়। কোনো কিছু মনে রাখতে পারে না বা ভুলে যায়। কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায় বা আগ্রহ থাকে না।

লিভার ও কিডনি

ইয়াবা সেবনের ফলে লিভারসিরোসিস থেকে লিভার ক্যানসারেও পরিণত হতে পারে। এছাড়া শরীরে একধরনের তাপ তৈরি হয়, যা কিডনির ক্ষতি করতে পারে।

ফুসফুসের সমস্যা

নাক দিয়ে ধোঁয়া হিসেবে ব্যবহার করায় ফুসফুসে পানি জমা বা অন্য ক্ষতি হতে পারে। স্কিন বা চামড়া লাল হয়ে যায় বা মারাত্মক চর্মরোগের সমস্যা তৈরি করে।

কর্মক্ষমতা হারায়

শরীর প্রচণ্ড অলস হয়ে পড়ে। পড়াশোনা, দৈনন্দিন কাজকর্মে আগ্রহ কমে যায়, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অতিরিক্ত ইয়াবা গ্রহণ হাইপারথার্মিয়া বা উচ্চ শারীরিক তাপমাত্রার কারণ হতে পারে।

ঘুমের সমস্যা

এর প্রভাবে কেউ দিনে ঘুমায়, রাতে জেগে থাকে। কেউ কেউ টানা সাত থেকে ১০ দিন জেগে থাকে, আবার একটানা ঘুমায়।

সিজোফ্রেনিয়া ও হ্যালুসিনেশন

কারো ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। অনেকে পাগল হয়ে যায়। চোখে উল্টাপাল্টা দেখে। কারো কারো ক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশন বা গায়েবি আওয়াজ শোনার ঘটনা ঘটে।

আত্মহত্যার প্রবণতা

ডিপ্রেশন বা হতাশাজনিত নানা রকম অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে। অনেকে হঠাৎ আত্মহত্যা করে বসে।

প্রকাশ :নভেম্বর ৬, ২০১৮ ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ