২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:১৬

‘কিডনি গায়েব’ : ব্যাখ্যা দিল বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরার অস্ত্রোপচারের পর কিডনি উধাওয়ের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই রোগীর জন্মগত কিডনি কমপ্লিকেশন (জটিলতা) ছিল। তাছাড়া অপারেশনে রক্তক্ষরণ ও ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ায় বাম কিডনি অপসারণ জরুরি হয়ে পড়েছিল। কিন্তু রোগীর কিডনি দুটি নিম্নমুখী ও সংযুক্ত বা জোড়া লাগানো ছিল। যাকে বলা হয় হর্ষ কিডনি, একটা ফেলতে গেলে আরেকটাও বেরিয়ে আসে। যেটা ডাক্তার দুর্ভাগ্যক্রমে ও অনিচ্ছাকৃতভাবে ফেলে দিয়েছিলেন। কারণ আলট্রাসনোগ্রাম ও সিটি স্ক্যানে বিষয়টি ধরা পড়েনি।

সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. রফিকুল আলম।

ইউরোলজি বিভাগে রোগীর চিকিৎসা অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক রফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা শুধু এ বিষয়টি নয় কোনো বিষয়ে হেলাফেলা করি না। এ ঘটনার পরপরই উচ্চমানের দু’টি তদন্ত কমিটি করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘ডান পাশের কিডনি অপারেশন করতে গিয়ে বাম পাশের কিডনি ফেলে দেয়া হয়েছে। রোগী রওশন আরার জন্মগতভাবে দু’টি কিডনি জোড়া লাগানো ছিল। দুর্ঘটনাবশত এটা হয়েছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন উপাচার্য স্যারের কাছে জমা দিয়েছি।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. রফিকুল আলম বলেন, ‘ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল রোগীর স্বজনদের চেক দিয়েছেন কিংবা তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন এমন বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অবহিত নয়। এ ধরনের ঘটনায় কিংবা অবহেলায় আমাদের হাসপাতাল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জড়িত থাকে তবে শৃঙ্খলা কমিটি অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

কিডনি জটিলতার কারণে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরার অস্ত্রোপচার করেন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান দুলাল।

রফিক শিকদারের অভিযোগ, হাসপাতালের মায়ের অপারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মায়ের ডান পাশের কিডনিটি কাজ করেছে না। দ্রুত আইসিইউতে নেয়ার কথা বলেন তিনি। তবে তিনি এটাও জানান, বিএসএমএমইউতে আইসিইউ খালি নেই। একদিন পর ইনসাফ আল-বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার হুমায়ুন রশিদ কবীর সেলিম মায়ের কিডনির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে সিটিস্ক্যান করতে বলেন। ল্যাবএইড হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করার পর রিপোর্ট মারফত মায়ের পেটে কিডনির অস্তিত্ব নেই বলে জানতে পারি।

অবস্থা বেগতিক দেখে বিআরবি হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার এমএ সামাদের দ্বারস্থ হই। মেডিকেল রিপোর্ট দেখার পর পর্যালোচনা করে এবং পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করে কোনো কিডনির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অবশেষে ৩১ অক্টোবর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মারা যান তিনি।

এসব ব্যাপারে ডা. রফিকুল আলম বলেন, ‘রোগীর কিডনি জন্মগতভাবে জোড়া লাগানো ছিল। যে কারণে নষ্ট কিডনিটি ফেলতে গিয়ে অপারেশনের স্থানে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়, যা পরে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে রোগীর ডান দিকের ভালো কিডনিটিও ফেলে দিতে হয়েছে।’

রওশন আরার কিডনি উধাও হওয়ার বিষয়টি তদন্তে কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন অর রশিদকে প্রধান করে সাত সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিএসএমএমইউর ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম খুরশিদ আলম, নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক অসীম কায়েস, রেডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, সার্জারি বিভাগের ডিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আমিনুর রসূল ও বিএসএমএমইউয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম।

কিডনী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা ফাইল জব্দ করেছিলাম। পুরো ইতিহাস জানতে চেষ্টা করেছি আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। তার দু’টি কিডনিতেই সমস্যা। যে কিডনিটা ভালো ছিল আগে দুইবার অপারেশনের কারনে ইনফেকশন ছিল। রক্তক্ষরণ ও পুজ বেরিয়েছিল। রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করা হলেও কিডনি ফুলে গিয়েছিল। কিডনি হিস্টপ্যাথলজিতে দু’টি কিডনি থাকা শর্তেও আলট্রাসনোগ্রামে কেন সনাক্ত করা যায়নি সেটাই আমরা জানতে চেষ্টা করছি। দুটি কিডনি জোড়া লাগানো থাকায় ও ফুলে যাওয়ায় তা ধরা পড়েনি।’

তিনি বলেন, ‘রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় সংক্রমণও বেড়ে যায়। সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়, ব্রেনে ছড়িয়ে যায়। এটা একটি অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা, নিছক দুর্ঘটনা। আমরা দুঃখিত। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী এবং তার পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দিন।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যায় হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আমিনুর রসূল।

প্রকাশ :নভেম্বর ৫, ২০১৮ ৭:১৯ অপরাহ্ণ