পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত ব্লাশফেমি আইনে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবিকে খালাস দেয়ায় প্রাণনাশের হুমকিতে রয়েছেন বিচারকরা। কট্টরপন্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ইমরান সবাইকে শান্ত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার আসিয়াকে খালাস দিয়ে ৩৪ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার, আসিফ সাইদ খোসা ও মাজহার আলম খান মিয়ানখেল। খবর বিবিসির।
মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পাকিস্তানের মধ্যাঞ্চলীয় ইথান ওয়ালি গ্রামের আসিয়া বিবিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ২০০৯ সালে দুই মুসলিম নারী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বিচারিক আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয়।
চার বছর পর লাহোরের হাইকোর্ট সেই রায়ই বহাল রেখেছিলেন। এবার সুপ্রিমকোর্ট সেই রায় বাতিল করে দিলেন।
এতে পাকিস্তানের কট্টরপন্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন ইমরান খান ও বিচারকরা। কট্টরপন্থীরা কঠোর ব্লাশফেমি আইনের পক্ষে। আসিয়া বিবির খালাসের রায়ের পর প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। করাচি, লাহোর, পেশাওয়ার ও মুলতানে বিক্ষোভ দেখা দেয়।
টেলিভিশন ভাষণে ইমরান বলেন, ‘এভাবে বিক্ষোভের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করলে কোনো সরকার চলতে পারে? আর এর জন্য কারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে? আমাদের পাকিস্তানিরা। সাধারণ লোকজন, গরিবরা। আপনারা রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন, লোকজনের জীবন-জীবিকা ছিনিয়ে নিচ্ছেন। এটা ইসলামের সেবা নয়, এটা রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্র“তা।’
কট্টরপন্থী তেহলিক-ই-লাবিক পার্টির নেতা মুহাম্মদ আফজাল কাদরি সর্বোচ্চ আদালতের তিন বিচারকের ‘মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য’ বলে ঘোষণা করেন। এসব ঘটনার জেরে ইসলামাবাদের রেড জোন এলাকা (সুপ্রিমকোর্টের অবস্থান) সিল করে দিয়েছে পুলিশ।
প্রধান বিচারপতির চেয়ে বেশি জীবননাশের ঝুঁকিতে রয়েছেন বিচারপতি সাইদ খোসা। ২০১৫ সালে ব্লাশফেমি আইনে মমতাজ কাদরিকে (মুসলমান) মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন তিনি।
অথচ খ্রিস্টান আসিয়াকে খালাস দিয়েছেন। আসিয়া বিবির রায়ের ২১ পৃষ্ঠায় খোসা বলেন, ‘ইসলামে অমুসলিমদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিখিয়েছেন হযরত মোহাম্মদ (সা.)।’
আসিয়া বিবির জীবনও সংশয়ে রয়েছে। তার আইনজীবী সাইফুল মুল্লুক জানান, নিজের জীবন রক্ষার জন্য তার (আসিয়া বিবি) পশ্চিমা কোনো দেশে চলে যাওয়া উচিত।