বিএনপির গঠনতন্ত্রের ‘কমিটির সদস্য পদের অযোগ্যতা’ শীর্ষক ৭ ধারায় নিয়ে সংশোধিত অংশ গ্রহণ না করার জন্য ইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলে দণ্ডিতরা পদে থাকতে পারবেন না বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে এমন বিধান বাদ দেয়া কেন বেআইনি হবে না এবং সংবিধান ৬৬ (২) (ঘ)-এর পরিপন্থী হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া রাজধানীর মিরপুর কাফরুলের বাসিন্দা জনৈক মোজাম্মেল হোসেনের আবেদন এক মাসের মধ্যে নিস্পত্তি করার জন্য ইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (৩১ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিতে বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আওয়ামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমী।
পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমী বলেন, মোজাম্মেল হোসেন বিএনপিকর্মী পরিচয় দিয়ে গতকাল (৩০ অক্টোবর) ইসিতে একটি আবেদন দিয়ে বলেছে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে। তিনি বলেছেন, এই গঠনতন্ত্র গ্রহণ করা হলে বিএনপিতে দুনীর্তিবাজ, অযোগ্য ব্যক্তিরা নেতা হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া সংশোধনীটি সংবিধানের ৬৬(২)(গ) অনুচ্ছেদেও সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আদালত তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে রুল ও অন্তবর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার কিছুদিন আগে বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে দলটির গঠনতন্ত্রের দলের নির্বাহী কমিটির পদে থাকা ও দল থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া সংক্রান্ত ৭ ধারা সংশোধন করে। গঠনতন্ত্রেও ৭ ধারায় উল্লেখ ছিল প্রেসিডেন্ট কর্তৃক দণ্ডিত, দেউলিয়া, উন্মাদ বলে প্রমাণিত, সমাজে দুর্নীতি পরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে কিংবা দলের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
এসব কথা উঠিয়ে দিয়ে সংশোধীত ওই ৭ ধারায় বলা হয়, ‘প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে দলের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। ৩০ বছরের কম বয়স্ক কোনো ব্যক্তি দলের চেয়ারম্যান হতে পারবেন না’ -এই অংশটুকু যোগ করা হয়।
পরবর্তীতে তা ইসিতে পাঠায় বিএনপি। ওই সংশোধনী গ্রহণ না করতে মোজাম্মেল নামের কাফরুলের ওই কথিত বিএনপিকর্মী মঙ্গলবার ইসিতে আবেদন জানায়। একই সঙ্গে ওই দিনই হাইকোর্টে রিট করে নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত আবেদনটি নিষ্পত্তির নির্দেশনা চান। এ ছাড়া আবেদনটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির সংশোধীত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্দেশনা চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির গঠনতন্ত্রে ‘কমিটির সদস্য পদের অযোগ্যতা’ শীর্ষক ৭ নম্বর ধারা বাদ দিয়ে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া সংশোধীত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে এক ব্যক্তির করা আবেদন ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইসিতে জমা দেয়া সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতেও বলেছেন আদালত।