অবশেষে সমাজের ব্যাধি মাদক নির্মূলে কঠোর আইন পাস করেছে জাতীয় সংসদ। ইয়াবা (অ্যামফিটামিন), কোকেন, হেরোইন পরিবহন, কেনাবেচা, ব্যবসা, সংরক্ষণ, উত্পাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, হস্তান্তর, সরবরাহ ইত্যাদি অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনের বিধান রেখে সংসদে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৮ পাস হয়েছে।
গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। তবে বিলটির ওপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (এ) সংসদ সদস্যদের আনীত জনমত যাচাই-বাছাই ও সংশোধনী প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
পাসকৃত বিলে মাদক বহনের পরিমাণ অনুযায়ী সাজা কমবেশির বিধান রাখা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনে অর্থ বিনিয়োগ, সরবরাহ, মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও একই ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া এই প্রথম মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীর পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক/অর্থলগ্নীকারী, মদদদাতাদেরও কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হয়েছে পাসকৃত বিলে। পাসকৃত বিলে কোকেন, কোকো মাদক চাষাবাদ, উত্পাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে ২৫ গ্রামের বেশি হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ্ল বা যাবজ্জীবন দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আর ২৫ গ্রামের নিচে হলে কমপক্ষে দুই বছর ও সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ্লের বিধান আছে। এছাড়া ইয়াবা বহনের ক্ষেত্রে অ্যামফিটামিনের পরিমাণ ২০০ গ্রামের বেশি হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদ্ল এবং অর্থদ্লের বিধান রাখা হয়েছে। তবে ১০০ গ্রাম হলে সর্বনিম্ন ৫ বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ্লের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালালে আইনে এক বছরের কারাদ্ল ও অর্থদ্লের বিধান রাখা হয়েছে। বিলে আরও বলা হয়েছে, পারমিট ব্যতীত কোন ব্যক্তি অ্যালকোহল পান করতে পারবে না এবং চিকিত্সার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন অথবা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অন্যূন কোন সহযোগী অধ্যাপকের লিখিত ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহল পান করার অনুমোদন দেয়া যাবে না। প্রস্তাবিত আইনানুযায়ী, মাদকাসক্ত ব্যক্তির ডোপ টেস্টে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেলে কমপক্ষে ৬ মাস ও সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদ্ল দেওয়া হবে। আইনে শিশাকেও মাদকের সংজ্ঞায় এনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। মাদক সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির স্বার্থে মোবাইল কোর্টের এখতিয়ার আরও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
আরো দুটি বিল পাস: জাতীয় সংসদ অধিবেশনে গতকাল আরও দুটি বিল পাস হয়েছে। বিল দুটি হচ্ছে— বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বিল, ২০১৮ ও বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিল, ২০১৮। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বিল দুটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।